নিজস্ব প্রতিনিধি :
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবেলা ও দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করার জন্য উপকূলীয় ৮টি কমিউনিটি রেডিও ও দু’টি অনলাইন রেডিও গত ১৭ মে (রোববার) থেকে বিরতিহীনভাবে ২৭৪ ঘন্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেডিওগুলোর এ কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো।
অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো পাবলিক সার্ভিস অ্যানাউন্সমেন্ট (পিএসএ), ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত বিশেষ বুলেটিন প্রচার, স্পট, জিঙ্গেল, নাটিকা, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাতকার ইত্যাদি।
“সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, “কমিউনিট রেডিও নলতা ঘূর্ণিঝড় আম্পান-এর পূর্বাভাস ও অন্যান্য তথ্য প্রদানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রেডিও নলতা জেলা-উপজেলার বিভিন্ন কন্ট্রোল রুম এবং সকল আশ্রয়কেন্দ্রের ফোন নাম্বার প্রচার করে জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সহযোগিতা করেছে।”
বরগুনার কৃষি রেডিও’র সম্প্রচারকারী শামীম মৃধা বলেন, “বাংলাদেশের কমিউনিটি রেডিওগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রদানের কারণে উপকূলবাসীর ভরসাস্থল হিসেবে আস্থা লাভ করেছে। অসংখ্য শ্রোতা আমাদের ফোন করে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এবং বিভিন্ন তথ্য জানতে চান যা আমাদেরকে কাজ করতে আরো উৎসাহ দেয়”।
শ্যামনগর উপজেলার একজন শ্রোতা শাহীন আলম বলেন, “দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার সময় আমাদের তথ্য পাবার কোনো সুযোগ থাকেনা এসময় কমিউনিটি রেডিও নলতা হয়ে উঠে শেষ আশ্রয়স্থল আমরা ফেসবুক ও ফোনের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য জানতে পারি।”
কমিউনটি রেডিওগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়োজিত উপকূলীয় রেডিও স্টেশনগুলো ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, দুর্বল ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক, ঝড়ো হাওয়ার কারণে এন্টেনা দুর্বল হয়ে যাওয়া, স্থানীয় যোগাযোগ সমস্যা, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
তারা অরও জানান, রেডিও স্টেশনগুলোর ২জন সার্বক্ষণিকসহ মোট ৫৭ জন সম্প্রচারকারী ও ২৯৮ জন স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারি আদেশ (এসওডি) অনুযায়ী সতর্কীকরণ বার্তা ও অনুষ্ঠান প্রচার করেছে।
ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়োজিত রেডিও স্টেশনগুলো ছিলো- কমিউনিটি রেডিও লোকবেতার ৯৯.২ এফএম (বরগুনা), কমিউনিটি রেডিও নলতা ৯৯.২ এফএম (সাতক্ষীরা), কমিউনিটি রেডিও কৃষি ৯৮.৮ এফএম (বরগুনা), কমিউনিটি রেডিও সাগরগিরি ৯৯.২ এফএম (সীতাকু-, চট্টগ্রাম), অনলাইন রেডিও দ্বীপ (সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম), কমিউনিটি রেডিও নাফ ৯৯.২ এফএম (টেকনাফ, কক্সবাজার), কমিউনিটি রেডিও মেঘনা ৯৯.০এফএম (ভোলা), কমিউনিটি রেডিও সাগরদ্বীপ ৯৯.২ এফএম (হাতিয়া, নোয়াখালী) অনলাইন রেডিও ভৈরব (বাগেরহাট)।
বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর একটি মনিটরিং সেল মার্ক মানস সাহার নেতৃত্বে ২৪ ঘন্টা ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মনিটরিং করেছে।
উল্লেখ্য, কৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে এর পূর্বে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, রোয়ানো, কোমেন, ফনি ও বুলবুল মোকবেলায় বাংলাদেশের কমিউনিটি রেডিওগুলো অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার সময় বাংলাদেশের কমউিনিটি রেডিওগুলো হয়ে উঠে উপকূলীয় জনগণের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ও আগাম তথ্য প্রাপ্তির প্রধান উৎস।