আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ :
টেকনাফে টানা ৬ দিনের ভারী বর্ষনের সাথে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্মচাপের প্রভাবে বৃষ্টি সেই সাথে দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও ভাঙ্গা বেড়ী বাঁধের কারনে প্লাবিত টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াক্যং ও পৌরসভার নিচু এলাকার শতশত পরিবার পানিবন্ধী রয়েছে।
নিম্ম চাপের প্রভাবে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়-বাতাস ও দমকা হাওয়ায় প্লাবিত মানুষের মাঝে এখন নতুন করে আতংক ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। সেই সাথে বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে গোটা টেকনাফ উপজেলা। বুধবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত এ পরিস্থিতি অব্য্হাত রয়েছে।
টেকনাফ রেড ক্রিসেন্ট অফিস সুত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্ম চাপটি গভীর নিম্ম চাপে রূপ নিয়েছে। এটি এখন কক্সবাজার সমুদ্র উপক’ল থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে নিম্ম চাপটি কক্সবাজার উপক’লের দিকে এগিয়ে আসছে বলে জানা গেছে।
দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে টানা ভারী বর্ষন, বঙ্গোপসাগর ও নাফনদীর জোয়ারের পানিতে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ডুবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে উঠেছে। নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় গত ২৭ জুলাই থেকে টেকনাফের সাথে মিয়ানমার ট্রানজিট পারাপার ও সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে ৩দিন ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থলে বন্দরে আসা সকল প্রকার মালামালের ট্রলার নিরপাদে অবস্থান করছে ।
ইতিমধ্যে টেকনাফসহ কক্সবাজার জেলায় ৩ নং সতর্কতা সংকেট জারি করা হয়েছে। নদী ও সাগরের পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবে নাফনদী ও বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে।
এদিকে নৌকা ডুবে ফায়সাল (১৫) নামে ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্র নিখোঁজ ও ঝড়ো বাতাসে বড় একটি গর্জন গাছ পড়ে একটি বাড়ী বিধ্বস্থ হয়েছে।
জানা যায়, টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়ায় চিংড়ি ঘেরে পিতাকে খাবার দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে ফায়সাল নামে ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্র নিখের্ঁাজ রয়েছে। সে হোয়াইক্যং উলুবনিয়ার মাওঃ সামশুল আলমের ছেলে ও পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। ২৯ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় এঘটনা ঘটে। আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-পড়শী অনেক খোঁজাখুজির পরও নিখোঁজ ছাত্রের হদিস পায়নি। এদিকে উপকূলীয় এলাকা বাহারছড়ার মারিশবনিয়ায় তীব্র বাতাসে দুপুরে বড় একটি গর্জন গাছ গফুর আলমের ছেলে ইমাম হোসেনের বাড়ীতে পড়লেও বাড়ীর লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাড়ীটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হয়েছে।
অপরদিকে উপকূলে সৃষ্ট নিম্ম চাপের প্রভাবে সাগর ও নদী উত্তাল থাকায় টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিটের যাত্রী ও সেন্টমার্টিনে পারাপারের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। চলাচল বন্ধ রয়েছে স্থল বন্দরের সকল প্রকার মালামাল বহনের ট্রলার। নিরাপদের অবস্থান করছে বন্দরে অবস্থানরত সকল ট্রলার । ভারী বর্ষনের সাথে সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য দূর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। টেকনাফ স্থল বন্দরের অভিভাসন কেন্দ্রের উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম সবুজ এ তথ্য জানান।
এছাড়া গত চার দিন ধরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এখনো যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। বিকল্প পথে মেরিন ড্রাইভ সড়কের কোটবাজার হয়ে সোনার পাড়া থেকে টেকনাফের সাথে যান চলাচল সচল রেখেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সম্ভাব্য দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টার গুলো খোলা রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সদা প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
Related