ইমরান হোসাইন, পেকুয়া :
টানা বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারের পেকুয়ায় ব্যাপক আকারে বন্যা দেখা দিয়েছে গত বুধবার(২৪ জুন) রাত থেকে। ঢলের পানিতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন যথাক্রমে পেকুয়া, শীলখালী, বারবাকিয়ায় প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। বিগত তিনদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ বন্যা দেখা দেয়, এবং বাঘগুজারা এলাকায় বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গনে ব্যাপক আকারে তলিয়ে গেছে নতুন নতুন এলাকা।
এদিকে মগনামা-চকরিয়া সড়কসহ প্রায় ৩০টি অভ্যন্তরীণ সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ডুবে রয়েছে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, কবর স্থান, মন্দিরসহ বিভিন্ন হাট বাজার, রা¯তাঘাট, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার ও চিংড়ি ঘেরসমূহ।
বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মাতামুহুরী নদীর তীর সংলগ্ন বলীর পাড়া, বাঘগুজারা, সরকারীঘোনা, হরিণাফাড়ি, ছিরাদিয়া, জালিয়াখালী, মইয়্যাদিয়া, নন্দীরপাড়া, গোয়াখালীসহ সদর ইউনিয়ন পেকুয়ার সব এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদী, ভোলা খাল, উজাটিয়া খালসহ বিভিন্ন ছড়া ও খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পুরো এলাকাসহ বারবাকিয়া, শীলখালী ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যা দুর্গত ওইসব এলাকার লোকজন সাইক্লোন শেল্টারে এবং গৃহপালিত পশু উঁচু জায়গায় নিয়ে রেখেছে।
বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ মাতামুহুরী নদীর উজানের পেকুয়া সদর ইউনিয়নে। এ এলাকার অধিকাংশ পরিবারের নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় সাইক্লোন শেল্টারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের নিয়মিত বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সরবরাহ করছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পেকুয়া সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রত্যেকটি সাইক্লোন শেল্টারে জরুরী ত্রাণসাগ্রী সরবরাহ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। গঠন করা হয়েছে তিনটি জরুরী মেডিকেল টিম। তারা প্রত্যেকটি সাইক্লোন শেল্টারে চিকিৎসা সেবা ও প্রযোজনীয় ওষুধসাগ্রী সরবরাহ করছেন।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুর রশীদ খান জানান, ভারী বর্ষণ, বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন ও পাহাড়ি ঢলের কারনে পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। পুরো উপজেলা এখন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্বাবধানে এবং মাননীয় সংসদ সদস্য(পেকুয়া-চকরিয়া) হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ আলী এমপি’র নির্দেশক্রমে বিভিন্ন এলাকায় দূর্গত মানুষকে জরুরী ত্রান সরবরাহ করে চলেছেন উপজেলা প্রশাসন। তিনি আরো জানান, বন্যা পরবর্তী সময়ে গত বৃস্পতিবার থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত সাত লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন এবং ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। মাতামুহুরী নদীর বেড়ীবাধ ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা মূল্যমানের শ্রমিক ব্যবহার করেন।
অপরদিকে শুক্রবার সকাল থেকে দেখা দেয় বিভিন্ন মোবাইল আপারেটরের নের্টওয়াক বিপর্যয় এবং দুইদিন যাবৎ বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন থাকার পর বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ৪০মিনিটের জন্য পেকুয়া সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ। তারপর থেকে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নের্টওয়াক বিহীন রয়েছে পেকুয়া উপজেলাবাসী।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানান, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে উপজেলা অধিকাংশ এলাকার ঘড়-বাড়ি ডুবে গেছে। তবে, গত শুক্রবার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে এবং আগামী কাল থেকে তা আরো জোরদার হচ্ছে।