এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও :
প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৬৯ বছর পর অবশেষে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মিত হচ্ছে জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় বহুমুখী উপকৃত হবে বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদী পালন তুলনামূলক সহজ হবে। যাতে করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে হাসির ঝিলিক ফুঠে উঠছে। জানা যায়, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি এতদঞ্চলের সর্বপ্রাচীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তৎকালীন চৌফলদন্ডীর জমিদার খাঁন বাহাদুর মোজাফফর আহমদ চৌধূরীর দানকৃত বিশাল এলাকার উপর অত্র বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ঈদগাঁও বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঈদগাঁও নদীর উপকূলে ১৯৪৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি বরাবরই তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত রয়েছেন। জাতিস্বত্ত্বার কবি খ্যাত দরিয়ানগরের কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা অত্র বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিলেন। গত কয়েক বছর আগে অত্র বিদ্যালয়ের আরেক মেধাবী ছাত্র রমজান আলী এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে মানবিক বিভাগের সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান অর্জন করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক অবসর প্রাপ্ত মেজর ফোরকান আহমদ এবং কর্ণেল এহেছান অত্র বিদ্যালয়ের গৌরব। যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও জনসেবামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন। রামু-কক্সবাজারের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সলিম উল্লাহ বাহাদুর, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আলমগীর চৌধুরী হিরু, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু তালেব, সদর উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হক চৌধুরী রিকু, ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শওকত আলম সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে যারা বিভিন্ন স্থানে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্টিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও অত্র বিদ্যালয়ে নিজস্ব কোন শহীদ মিনার ছিল না। প্রয়োজনীয় অনুদান বা বরাদ্দের অভাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তৎকালীন পরিচালনা কমিটির সদিচ্ছা থাকা সত্বেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল অত্র বিদ্যালয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার স্থাপনের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেন। কক্সবাজার জেলা পরিষদের তার নিজস্ব বরাদ্দ থেকে এ প্রকল্পের জন্য ২ লাখ টাকার টেন্ডার করেন। যা বর্তমানে বাস্তবায়নের পথে। তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামানের উদ্বোধনকৃত দু’তলা বিশিষ্ট ভবনের পূর্ব পার্শ্বে বিশাল আকারের এ শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার মতে, জেলা পরিষদের প্রণয়নকৃত নকশা অনুসারে এমপির বরাদ্দ থেকে এ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। জেলা পরিষদ নিজস্ব লোকবল দ্বারা প্রকল্পের কাজ তদারকী করছেন। তিনি আরো জানান, শহীদ মিনারটি নির্মিত হলে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বহুমুখী সুফল ভোগ করবেন। নিজস্ব ক্যাম্পাসে এলাকার শহীদ মিনার দেখার সুযোগ পাবেন। ২১শে ফেব্রুয়ারী, স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসের দিন বাহিরে গিয়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের ফুল দিতে হবে না আর। এতে তাদের কষ্ট ও ভোগান্তি কমবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা এ শহীদ মিনারের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আলাদা গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। সর্বোপরি এ শহীদ মিনারের মাধ্যমে স্ব স্ব মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে। এদিকে নবনির্মিতব্য এ শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ সম্প্রতি পরিদর্শন করেন স্থানীয় সমাজসেবক ও শিক্ষাবিদ মাষ্টার নুরুল আজিম, জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা খুরশিদুল জন্নাত, স্কুলের শিক্ষকসহ আরো অনেকে। বিদ্যালয় সূত্র মতে, সিডিউল মতে নির্ধারিত সময়ের ভিতর প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হবে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য যে, ঈদগাঁও কালী মন্দির সংলগ্ন স্থানে বহু লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। যা জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর পক্ষ থেকে ঈদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার নুরুল আজিম উদ্ভোধন করেন।