ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার আলো :
পর্যটন শহর কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের টার্গেট করে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট ও সী-বীচ পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে নিম্নমানের পচাঁ মাছের ব্যবসা। তারা পুলিশকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে লাইফ ফিসের নাম দিয়ে সরকারকে কোন প্রকার রাজস্ব না দিয়েই প্রকাশ্যে চড়াদামে ওসব নষ্ট কাচা মাছের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেনীর প্রতারক চিহ্নিত ব্যবসায়ীরা। এতে ৬ মাসের আগের মাছও ফ্রিজে সংরক্ষিত রেখে পর্যটকদের লোভ-লালসা দেখিয়ে খোলা বাজারে রাস্তার পাশে বিক্রি করছে। তাছাড়া খাবার অনুপযোগী এই ভাজা মাছ খেয়ে প্রতিনিয়ত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশ-বিদেশ থেকে কক্সবাজারে ভ্রমনে আসা আগত পর্যটকরা।
ব্যবসায়ীদের হাতে নানা ভাবে প্রতারিত হওয়ায় পর্যটকরা কক্সবাজার বিমূখ হয়ে আশংকা রয়েছে বলে জানান অনেক পর্যটক। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ডা: মারুফ নামে এক ব্যক্তি জানান, পর্যটন নগরীতে যদি এ ধরনের অপব্যবস্থাপনা ও পচা দুর্ঘন্ধ মাছ বিক্রি করে তাহলে কোন ভাল পর্যটক কক্সবাজার আসবেনা। তবে সঠিক নিয়মে সরকারকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে আসল প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তাজা মাছ বিক্রয় হলে পর্যটকদের আকৃষ্টতার পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন এই পর্যটক।
তবে ইতোমধ্যে ওসব একাধিক পয়েন্টে পঁচা মাছ বিক্রয় করলেও জেলা প্রশাসন থেকে ধরনের নজরদারী করছেনা। এছাড়া যার যার মত করে প্রতিদিন পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের কোন প্রকার নজরদারী না থাকায় প্রকাশ্যে দূর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাছ বিক্রয় করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যবসায় ভ্রাম্যমান আদালত অথবা আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারী না থাকায় ব্যবসায়ীরা পচাঁ-বাসী মাছ বিক্রয় করছেন বরাবরের মতোই। ফলে খাবার অনুপযোগী বিভিন্ন মাছ ও নানা প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী ভাজা খেয়ে পর্যটকদের প্রতিনিয়ত ধর্না দিতে হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে। আর পর্যটকদের আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতিসহ কক্সবাজার শহরের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন ভ্রমন পিপাসু পর্যটকেরা এবং জেলা সচেতন মহল।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্টে ও সী-বীচ পয়েন্টে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে অন্তত ২০ টি অস্থায়ী ভাজাঁ মাছের দোকান ও ভ্রাম্যমান ভ্যানগাড়ী।
এসব ভ্রাম্যমান দোকানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য রাখা হয়েছে লবষ্টার, সামুদ্রিক কোরাল, বড় কাকড়া, বোম্বে, অক্টোপাস, রূপচাদাঁসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক ও নদী-খালের মাছ। তবে দুঃখের কথা হল এসব মাছ তারা সস্তায় জেলার ফিসারী ঘাট থেকে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে পচাঁ হওয়ার সুবাদে। ফিসারী ঘাটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের রপ্তানী অযোগ্য ও পচাঁ মাছ সস্তায় সী-ইন পয়েন্টের এসব ভাজা মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ ব্যবসায়ী জানান প্রতিদিন দুপুরের দিকে ভাজাঁ মাছের ব্যবসায়ীরা পচাঁবাসী এসব মাছের জন্য এখানে ভিড় জমায় এবং সস্তায় কিনে নেয়।
এ ব্যাপারে সী-ইন পয়েন্টের এক পঁচা মাছ ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, ভাল ও তাজা মাছের যেই দাম সেই দামে মাছ ক্রয় করে এখানে বিক্রি করায় অসম্ভব। এমনিতেই প্রতিদিন পুলিশকে নির্ধারিত বলতে গেলে বিক্রয়ের অধিকাংশ টাকা দিতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই হালকা পচাঁ মাছগুলো বাছাই করে সস্তায় কিনে আনি। পর্যটকেরা মাছের দাম বেশি হলে খেতে চায় না।
রাজধানীর বনশ্রী থেকে স্বস্ত্রীক কক্সবাজারে ভ্রমনে সিকদার নামের এক পর্যটকের সাথে এসব ভাজা মাছের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ভাই কক্সবাজারের মানুষ আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে। পচাঁবাসী এসব মাছ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে খাওয়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। হঠাৎ করেই যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠে ভাজাঁ মাছের দোকানের অনুমতির ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানা যায়, সরকারী ভাবে এদের কোন ব্যবসায়ীক অনুমতিপত্র নেই। তবে এসব ব্যবসায়ীদের দাবি তারা ব্যবসা করার অনুমতি বাবদ বীচের পুলিশ ফাঁড়িতে গাড়ি প্রতি এক হাজার টাকা করে জমা দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, রাস্তার পাশে গড়ে উঠা এসব ভ্রাম্যমান পঁচাবাসীর দোকান থেকে প্রতিদিন পুলিশ, বিভিন্ন স্থরের নেতা ও স্থানীয় লোকজনকে টাকা দিতে হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরোদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।