এম.এ.সাবলু হৃদয় সিলেট অফিস :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বাঁশ ও বেত শিল্পে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। বাঁশ-বেত দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি ও বিক্রি করে শত শত পরিবারের জীবন-জীবিকা চলছে। নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে এ কাজে যোগ দেওয়ায় প্রতিটি পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। বাঁশ-বেতের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সম্পর্ক। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই শুরু হয় বাঁশ কাটা, বেত তৈরি, নানা রকম পণ্য তৈরির কাজ। বাঁশ-বেতের তীক্ষè ফলায় কখনো কখনো ক্ষত হয় হাতের তালু। সেই ক্ষত এক সময় শুকিয়ে যায়। আবার হয়। এই চক্রের মাঝে পড়ে আছেন হাজারো নারী-পুরুষ। স্বল্প পুঁজি নিয়ে এসব শিল্পে কাজ করে ঘরে বসে টাকা আয়ের পথ পেয়েছে তারা। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ বংশ পরম্পরায় বাঁশ ও বেতের চাটাই, টুকরি, ডালা, কুলা, ঝাকা, ডরি, পারন, টাইল, উকা, খালুই ইত্যাদি তৈরি করে আসছেন। ইসলামপুর ইউনিয়নের গুলেরহাওর (টিলাগাঁও), কানাইদেশি, কাঁঠালকান্দি, ছয়ঘরি, জাবরগাঁও, রাজকান্দি ও আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল, আধকানি, কাওয়ারগলা, খাপারবাজার, কোনাগাঁও, ছনগাঁও, চাঙ্গাইচাবি, জালালপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার এই বাঁশ-বেতের সঙ্গে জড়িত। প্রায় ১০ হাজার মানুষের জীবিকা এই বাঁশ-বেতের ওপর নির্ভরশীল। সংসারের গতি সচল রাখতে নারীরাই এই কাজের ভার কাঁধে নিয়েছেন। পাহাড়ে এক সময় বাঁশ-বেতের প্রাচুর্য ছিল। পুরুষেরা পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে নিয়ে এসেছেন। তা থেকে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা বেত তৈরি ও পণ্য উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তাঁদের চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি না হওয়ায় তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। কমলগঞ্জ উপজেলায় বাঁশ-বেত শিল্পীরা সম্ভাবনাময় এ পেশায় কাজ করলেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পেলে এ শিল্পের প্রসার বাড়বে।
গ্রামের বয়োবৃদ্ধরা ঘরে ও আঙিনায় বসে ডরি-পারন, ধুছইন, টুকরি ইত্যাদি তৈরি করে। বাড়ির ছোটরাও পড়ালেখার ফাঁকে এ কাজে সহায়তা করে। গ্রামবাসী জানান, আগের মত এখন বাঁশ পাওয়া যায় না। বাপ দাদার ব্যবসা ছাড়া অন্য আর কি কাজ করব। সরকারি সাহায্য পেলে এ শিল্পকে আরও বড় আকারে করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে অনেকের কর্ম সংস্থান হবে। বাঁশ বেতের তৈরী সামগ্রী বাজারে প্রচুর চাহিদা আছে। সরকার এগিয়ে আসলে এ শিল্পকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিদাতা হিসাবে দাঁড় করানো সম্ভব। বাঁশ-বেত দিয়ে সামগ্রী তৈরী করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৭/৮ হাজার টাকা উপার্জন করে। তাতেই ওদের মোটা ভাত, মোটা কাপড়। নিজেরা কাজ করে ওরা বেজায় সুখি। তারা এ শিল্পকে বড় আকারে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে কোন রকমে চলছে তাদের ব্যবসা। সরকারি সাহায্য পেলে এখানে অনেক কর্ম সংস্থান হবে, ঘুচবে বেকার সমস্যা, ফিরে আসবে গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য। দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসবে। উত্তর ভানুবিল গ্রামের বেশির ভাগ লোকের নিজের জমি জমা নেই। অন্যের জায়গায় আশ্রিত হিসেবে বসবাস করে আসছেন। অনেকের শুধুমাত্র বসতভিটে টুকুই সম্ভল। এরপরও বাঁশ-বেতের কাজ করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। এ গ্রামের অনেক সন্তানই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে লেখাপড়া করছে। পাশাপাশি মা-বাবাকে বাঁশ-বেতের কাজে সাহায্য করছে। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে আলাপকালে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, অচিরেই আমি এসব এলাকা পরিদর্শন করে বাঁশ-বেত শিল্পের উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা সহ এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করব।