ডা: শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী :
করোনা ভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯ আজ এক অপ্রিয় প্রোজ্জ্বল বাস্তবতার নাম। আমরা না চাইলেও এটা কিন্তু আমাদের ছায়াসঙ্গী হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। তাই নিজেদের এই রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি এটাও বাস্তবতা যে আমাদের আবার এই রোগকে সাথে নিয়েই অদূর ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। করোনার বিজয়োৎসবের এই মহড়ায় সাময়িক এই লকডাউন অবস্থা, স্বেচ্ছাবন্দী অবস্থা পেরিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে জীবিকার সন্ধানে একদিন ঠিকই বেরিয়ে পড়তে হবে আমাদের। স্থবির হয়ে যাওয়া কিংবা ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কিংবা গতিশীল করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে নব উদ্যমে।
তাই আমরা সতর্ক হবার পাশাপাশি আশান্বিতও হতে চাই। যাতে করে সবাই মিলে সাহসিকতার সাথে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হই। সম্পূর্ণ ব্যপারটা নি:সন্দেহে ধাপে ধাপেই করতে হবে আমাদের। অনেকটা চেক এন্ড ব্যালেন্স এর মতো।
করোনা একটি প্যানডেমিক ডিজিজ। সারাবিশ্ব এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সুস্থ হবার পাশাপাশি অনেক মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। কিন্তু মৃত্যুর হার এবং অসুস্থতার বিচারে এই রোগটিকে ধনুষ্টংকার, জলাতঙ্ক বা নিপাহ ভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী বলা যাবে না। যদিও যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্যে এবং তার পরিবারের জন্যে এই মৃত্যু ১০০%।
আমরা ইতিমধ্যেই বুঝতে পারছি যে আস্তে আস্তে পৃথিবীর একটা বিশাল জনগোষ্ঠী এই রোগে আক্রান্ত হবে। যার মধ্যে প্রায় ৯৭%-৯৮% সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। তাই এই রোগ নিয়ে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন যেমন করতে হবে তেমনি এই রোগে আক্রান্তদের প্রতি অশোভন, আপত্তিকর ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে পরিস্থিতিকে নাগালের বাইরেও নিয়ে যাওয়া চলবে না। বরং এটা আমাদের জন্যে বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে।
বেশ কয়েক বছর করোনা পৃথিবীতে তার রাজত্ব বজায় রাখবে। অনেকের মতে এই রোগ ২০২২ সাল পর্যন্ত লোকজনকে এভাবে সংক্রমিত করে যাবে। তাই এই রোগ থেকে আমরা যেই বিষয়গুলো শিখতে পেরেছি, যেমন – সঠিকভাবে নিয়মিত হাত পরিস্কার করা, হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা, ধুমপান ও মদ্যপান পরিহার করা, শরীরচর্চা করা – এই বিষয়গুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। এই ভাল অভ্যাসগুলোই আমাদের ধরে রাখতে হবে।
শুধুমাত্র লকডাউন বা ভৌত প্রতিবন্ধকতা এই করোনা ক্রাইসিস বা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় বাস্তবসম্মত হবে না। এর জন্যে প্রয়োজন স্বাগ্রহ প্রয়াস ও আচরণগত পরিবর্তন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
লেখক : ডা: শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল।