সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :
জার জেলায় বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ এর বিস্তার কমাতে আইএসসিজি-র সহযোগি প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ জাতিসংঘসহ স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও-সমূহ বাংলাদেশ সরকারকে সর্বোচ্চ সহায়তা করতে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এখন পর্যন্ত কোভিড -১৯ এর কোনও কেস পাওয়া যায়নি, যদিও সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা কক্সবাজারে একজন স্থানীয় প্রবাসী-বাংলাদেশীর নিশ্চিত ঘটনা পাওয়া গেছে।শরণার্থীত্রাণওপ্রত্যাবাসনকমিশনার, সিভিলসার্জনকার্যালয়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং মনবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ ভাইরাসের বিস্তার কমাতে পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে চলেছে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
আইএসসিজির সহযোগি সংস্থা গুলো বাংলাদেশ সরকারের কোভিড ১৯ জাতীয় সাড়া দান পরিকল্পনায় সবধরনের সহযোগিতা করছে যেখানে শরণার্থীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯প্রতিরোধে জন্য অংশগ্রহণমূলক এবং সমন্বিত প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
হেলথ সেক্টর (মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক সমন্বয়ক) কক্সবাজার জেলার আইসোলেশন ও চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামাদীর সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষাপ্রদানকারী সরঞ্জামসমূহের মজুদ বৃদ্ধিতে কাজ বরছে।
কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে এবং সকলের স্বাস্থ্য ও সুব্যবস্থারকথা বিবেচনায়নিয়ে’সুরক্ষা এবং সহায়তা কার্যক্রম’ কমিয়ে কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় জীবন-রক্ষামূলক পরিষেবাগুলিতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি, রন্ধন জ্বালানী এবং কিছু সুরক্ষা পরিষেবা। অপরিহার্য কার্যক্রমসমূহ পরিচালনার সময়,শরণার্থীদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ক্যাম্পগুলোতে চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ কোভিড-১৯ সম্পর্কিতবাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এবং জাতিসংঘের নির্দেশিকা(যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জারি করা নির্দেশসমূহ) কঠোরভাবে অনুসরণ করছে।সবাইকে যথাসাধ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং কোভিড-১৯এর বিস্তার ঠেকাতেসব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আগত কর্মীদের জন্য ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরা হচ্ছে।
সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নির্ভরযোগ্য সঠিক তথ্য জানানোএই মুহূর্তেঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনেশন উইথ কমিউনিটি (সিডব্লিউসি) ওয়ার্কিং গ্রুপএবং উন্নয়ন সংস্থাসমূহকোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বার্তা সমূহ রোহিঙ্গা, বাংলা এবং বার্মিজ ভাষায় তৈরি করেছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা করে শিক্ষা এবং যোগাযোগ উপকরণ তৈরি করেছে। বিগত সপ্তাহগুলিতেরেডিও, ভিডিও, পোস্টার, লিফলেট এবং সাধারণ ঘোষণার মাধ্যমে প্রয়োজনী বার্তাগুলির রোহিঙ্গা জনবসতি এবং আশেপাশের এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীরাছড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে ভাইরাসটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, কীভাবে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করা যেতে পারে, লক্ষণ এবং যত্ন সমূহ। কোভিড-১৯সম্পর্কে ভুল তথ্য মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে সকলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিতে নির্ভর করা উচিত।
কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ সরকারী অফিসের পাশাপাশি বাংলাদেশী জনগোষ্ঠী ও শরনার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচার-প্রচারনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এছাড়া হাত ধোওয়ার পানি এবং সাবান সহজেই সবার কাছে নিশ্চিত করতে সহযোগিপ্রতিষ্ঠানসমূহ কাজ করে যাচ্ছে। বিতরণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পুষ্টি কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, সরকারী অফিস এবং অন্যান্য জায়গায় যেখানে পরিষেবা সরবরাহ রয়েছে সেখানে হাত ধোয়ার স্থানগুলিবাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যহত রয়েছে।
এপ্রসঙ্গে আইএসসিজি-র সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর নিকোল এপটিং বলেন – ‘এই ভাইরাসকে মোবাবেলা করতে যেয়ে সামনে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবো তবে তা একে অপরের প্রতি আমাদের যত্নশীলতা, মহানুভবতা এবং মনুষত্বকে পরাজিত করতে পারবে না। যদিও আমরা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ারআশংকাসমূহ অনুভব করতে পারি, তবে তা অবশ্যইবৈষম্যের কারণ হতে পারে না। কোভিড-১৯ জাতি, বর্ণ, ধর্ম বা ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছেনা, এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আমাদের সবার জন্য সমান ভাবে রয়েছে’।
কক্সবাজার জেলাতে জটিল কোভিড-১৯ কেস সহ আইসিইউ সেবার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জাতিসংঘ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা রোহিঙ্গা জনবসতি এবং আশেপাশের বাংলাদেশী জনগনের জন্য বর্তমান সক্ষমতা বাড়াতে সরকারকে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি জেলায়আইইডিসিআর-এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ চলছে।
আর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, রোহিঙ্গা জনবসতি এবং এর আশেপাশের এলাকার দুর্বল মোবাইল এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় এবং ভাড়ী বর্ষার মৌসুম আসন্ন এবং কোভিড-১৯ এর মহামারীক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পরলে,যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রস্তুতি এবং জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং এর আশেপাশেরবাংলাদেশী জনগনের অনলাইনে তথ্য পাওয়ারনিশ্চয়তার পাশাপাশি পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগের সুযোগথাকা প্রয়োজন।
পরিশেষে, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহএই সংকটময় মুহূর্তে, শরণার্থী এবং যারা তাদেরকেউদারভাবে গ্রহণকরেছেন সেই সকল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য পরিষেবা বাড়াতে আরও আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রাথমিক আপিলটি আগামী সপ্তাহেপ্রকাশিত হবে এবং আইএসসিজি তার সহযোগি সংস্থা সমূহকে কক্সবাজারে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কার্যক্রম বাড়াতে উৎসাহিত করছে একই সঙ্গে ২০২০ সালের রোহীঙ্গা মানবিক সংকট মোকাবেলায় যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনার (জেআরপি) মূল সহযোগিতা অব্যহত রাখছে। বাংলাদেশের জাতীয় প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কক্সবাজারের জন্য পৃথক আপিলসহ সাড়াদান কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।