শাহজাহান
বাংলাদেশের মোট জনগনের মধ্যে থেকে প্রায় ২ কোটি লোক মৎসজীবি! আর এই ২ কোটি মৎস জীবিদের মৎস আহরনের উপর আরো ১ কোটির বেশী মানুষ মৎস ব্যবসা ও প্রক্রিয়া করন থেকে শুরু করে এই মৎসের কাজে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। এই মোট তিন কোটির মধ্যে ১১.৫০% নারী বাকি ৮৮.৫০% পুরুষ।
এইটি হারটা কিন্তু ২০১৩-২০১৪ সালের মৎস অধিদপ্তরের জরীপ অনুযায়ী!
এ দেশে মাছের বার্ষিক উৎপাদন ২৫.৬৩ লাখ মেট্রিক টন (২০০৭-২০০৮ সালের তথ্য অনুসারে)। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আহরিত মাছের পরিমাণ ৮০.৫৯ শতাংশ এবং সামুদ্রিক জলসম্পদ থেকে প্রাপ্ত মাছের হিস্যা ১৯.৪১ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত মাছের শতকরা ৪১.৩৬ ভাগ সরবরাহ আসে মুক্ত জলাশয় থেকে এবং ৩৯.২৩ ভাগ আসে বদ্ধ জলাশয় থেকে। সামুদ্রিক মৎস্যের শতকরা ৯৩.১৩ ভাগ যোগান আসে আর্টিশনাল বা চিরায়ত আহরণ পদ্ধতির মাধ্যমে, আর বাকি ৬.৮৭ শতাংশ আসে ট্রলার কেন্দ্রিক শিল্পায়িত আহরণের মাধ্যমে। বছরের পর বছর সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের হিস্যা হ্রাস পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ আহরণের হিস্যা বেড়েছে। এর কারণ সামুদ্রিক আহরণের প্রবৃদ্ধির হার কম, অভ্যন্তরীণ আহরণের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে বদ্ধ জলাশয় তথা চাষাধীন জলাশয় থেকে আহরণের প্রবৃদ্ধির হার বেশি বিধায় মোট মৎস্য উৎপাদনে এ হিসস্যা দ্রুত বেড়েছে। গত দশকে (১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০০৭-০৮) অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, বদ্ধ জলাশয় এবং সামুদ্রিক জলসম্পদ থেকে মৎস্য আহরণের প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে শতকরা ৫.৪৪, ৫.৮৬ এবং ৫.২৬ ভাগ। এ সময় মাছের মোট উৎপাদন বেড়েছে বার্ষিক শতকরা ৫.৫৭ শতাংশ হারে (সারণি ১)।
বর্তমানে সরকারের দূরদর্শী মনোভাবের কারনে সামুদ্রিক মৎসের উৎপাদন নতুন করে বাড়া শুরু করেছে। বিশেষ করে বাংলা দেশের ২০০ নটিক্যাল সামুদ্রিক জলসীমায় ইলিশের বাম্পার ফলন ঘটেছে!
আমাদের মোট আয়ের ৬.৫০% আসে এই মৎস উৎস থেকে যাহা কৃষি আয়ের প্রায় ২২%! আর হ্যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯% আসে এই মৎস থেকে! এই পার্সেন্ট গুলো আমি অংকে পরিপূর্ণ লিখতে গেলে আমার আসলটাই লিখা হবে না। তার মানে আমাদের দেশের জিডিপিতে এই মৎস বিরাট ভুমিকা রাকছে!
আমাদের মন্ত্রী সভার অনকেই তাদের মুল আয়ের উৎস দেখিয়েছেন এই মৎস ব্যবসাকে! এমপি মন্ত্রী বা সরকারি বড় আমলাদের বউদের আয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস মৎস ব্যবসা! সাগর থেকে ভাল বড় মাছ ধরা খেলে তা জেলেদের পরিবার খাওয়ার পরিবর্তে মন্ত্রী সভার কারও কারও ঘরে পৌছে যায়! এমনকি গনভবনেও এই নোংরা(!?) জেলেদের আহরিত মৎস দিয়ে নানান মেহমানদারি করা হয়!
এখন আসল কথায় আসি, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামি ৬৫ দিন সাগরে মৎস আহরন করা যাবে না! এইটা নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্ত আমার লিখার কারন অন্য জায়গায়।
দেশে সামনে ঈদ, আমরা জানি জেলেরা সাধারনত কেটে খাওয়া ও গরীব আর অসহায় প্রকৃতির।
তাদের ঈদটা কেমন করে কাঠবে সেই চিন্তা কি আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনায়ের আছে?
শোনলাম জেলেদের পরিবারকে ৪০ কেজি করে মাসে চাউল দেওয়া হবে!
এই চাউল তারা রান্না করে খাওয়ার উপকরন কোথায় পাবে, সেই চিন্তা কি আপনাদের আছে?
জেলেরা আজাকাল তাদের সন্তানদের স্কুলে পাটায়
তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ, চিকিৎসার খরচ কোথায় পাবে, সেই চিন্তা কি আপনাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল না? মাস শেষে এই জেলেদের অর্জিত আয়ের টাকায় আপনার সরকারি বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস পাবেন, বলে কি আপনাদের কোন চিন্তা নাই?
আমাদের কক্সবাজার জেলার প্রায় ৭০% লোক ওতপ্রোতভাবে সরাসরি এই পেশায় জড়িত। এইবারের ঈদ তাদের জন্য খুশির চেয়ে, দুঃখ টাকে বেশী সঙ্গী করবে।
জেলে বাবারা তাদের সন্তানদের নিকট অসহায় আত্মসমর্পন করবে! বলবে বাবা – মা তোমরা আমায় ক্ষমা কর। আর একদম না পারলে ওরা চুরী কিংবা ডাকাতিতে জড়ীত হবে। এমনকি তারা যে মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক বহনকারী হবে না তারও কোন গ্যারান্টি নেই! কারন পেঠের জ্বালা বড়ই জ্বালারে মন্ত্রী মহাশয়!
এদের কান্না আপনার ঢাকার এসি রুমে পৌচাবে না!
এদের কান্নার আওয়াজ কেবল স্থানীয় যারা সত্যিকের মানবতাবাদী মানুষ তারাই উপলব্ধি করতে পারে।
কক্সবাজারে টেকনাফ ও উখিয়াতে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ শরনার্থী ক্যাম্প। যেখানে কমপক্ষে ১০ লক্ষ বা তারও বেশী রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছে। এদেরকে এনজিও গুলো খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে, শিক্ষা, চিকিৎসা এমনকি তাদের টয়লেটের ব্যবস্তাও করে দিয়েছে।
তাহলে এই দুই থানায় স্তানীয় মৎসজীবি যারা আছেন, তাদের লিষ্ট করে প্রকৃত জেলেদের সকল প্রকার প্রয়োজন গুলো মেঠানোর জন্য ঐ এলাকায় কাজ করছে এমন এনজিও গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না?
মাত্র ৬৫ টা দিন এনজিও গুলো কি অত্র এলাকার জেলেদের পরিবার গুলোর ভার বহন করতে পারে না?
নাকি তাদের চেতনা শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য! বাংলাদেশীরা মরলে তাদের যায় আসে না, এমন কিছু নয় তো?
আমি শুধু কক্সবাজার জেলার জেলেদের সমস্যার একটি সমাধানের পথ খুজে পেয়েছি। এইভাবে দেশের সকল জেলার জেলেদের কে যদি সরকারি বা বেসরকারি খাত থেকে সহযোগিতা দেওয়া যায় পরিপূর্ণ ভাবে তবেই ৬৫ দিনের জেলেদের সরকারি বিনা বেতনের ছুটি টা স্বার্থক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমার বিশ্বাস বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মত একজন দূরদর্শী ও গরীব দরদী নেত্রী থাকতে এইদেশের কোন মানুষ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা বন্ঞিত হবে না।
তাই আসুন আমরা সবাই সরকারের উপর মহলে যার যার পক্ষ থেকে জেলেদের সমস্যা গুলো নিয়ে কথা বলি। বলা তো যায় কার কথায় উপর মহলে, অসহায় জেলেদের পরিবার ও তাদের সন্তানদের পড়াশোনা আর চিকিৎসা কথা ভেবে দয়া হয়!
শাহজাহান
স্বেচ্ছাসেবক ও মানবাধিকার কর্মী
mdshajahan.09@gmail.com
তথ্য সূত্র:- বাংলা পিড়িয়া ও বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বা এনআইএস এবং ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সংগ্রাম পত্রিকার মৎস সম্পর্কিত জুয়েল ভাইয়ের কলাম থেকে তথ্য গুলো সংগৃহীত।