আবুল বশর পারভেজ, মহেশখালী :
নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও চরম সেচ্ছ্বাচারিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল এলাকার এমপি মহেশখালী হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে নানা দুর্নীতির সাক্ষাত প্রমাণ পান। এমপির এমন পরিদর্শনের খবর পেয়ে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে নানা বিক্ষোভ প্রর্দশন করেন। হাসপাতালে এহেন লাগাতার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে দ্রুত দুর্নীতি বন্ধের নির্দেশ দেন এলাকার সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক। এলাকার চিকিৎসা বঞ্চিত জনতার স্বার্থকে উপেক্ষা করে নজির বিহীন এই দুর্নীতির স্বাক্ষাত প্রমাণ পেয়ে তিনি অনেকটা মারমুখি হয়ে যান।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ সময় ধরে মহেশখালী হাসপাতালের ডাক্তার-কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষের যথাযত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রহ্য করে প্রকাশ্যে চিকিৎসা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। মহেশখালীর সন্তান হয়েও কতিপয় ডাক্তার এলাকার প্রভাব বিস্তার করে হাসপাতালটিকে নিজেদের দুর্নীতির কব্জায় নিয়ে এসে নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এলাকার সাংসদ বেশ কয়েকদিন ধরে নিজস্ব গেয়েন্দা সূত্রে খবর নিয়ে গতকাল অত্যান্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে হাসপাতল পরিদর্শন করে। বিধিমত তিনি হাসপাতালটির সভাপতি। বেলা ৩ টার কিছু সময় আগে তিনি হাসপাতালে ঢুকে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ঢুকতেই রুগীদের ভীড় থাকলেও দায়িত্বরত ডাক্তারকে কর্তব্যস্থলে দেখাযায়নি। খোঁজনিয়ে জানাযায় এলাকার সন্তান হওয়ায় তিনি বাড়িতে অবস্থান করছেন। এসময় সাংসদ হাসপাতলের বিভিন্ন রেজিষ্টারে বড় ধরণের অসঙ্গতি দেখে বিষ্মিত হয়ে যান। দীর্ঘসময় পরে হাসপাতালের ডিউটি অফিসার এলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ডিএইচও উপস্থিত হন। এসময় ডাক্তাদের ইন-আউট রেজিষ্টার, ডিউটি রেজিষ্টার ও কর্মকর্তা কর্মচারিদের রেজিষ্টারে বড় ধরণের গড়মিল দেখতে পান তিনি। অনেক অনুপস্থিত ডাক্তার-কর্মচারীকে উপস্থিত দেখিয়ে স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে। একইভাবে হাসপাতালের কতিপয় ক্ষমতাধর কর্মকর্তার উপস্থিতির স্বাক্ষরের জায়গা খালি রাখা হয়েছে। এসময় এলাকার শতশত চিকিৎসা বঞ্চিত জনতা হাসপালে উপস্থিত হয়ে ডাক্তার-কর্মচারীদের নানা দুর্নীতির কথা এমপির কাছে তুলে ধরেন। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের এহেন জগন্য আচরণের প্রমাণ পেয়ে তিনি চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এদিকে পরির্দশনকালে এমপির তরফ থেকে বিভিন্ন রেজিষ্টার ফাইল চাওয়া হলে অনেক ফাইল দেখাতে পারেনি। অপরদিকে প্রধান অফিস সহকারী আব্দুল মান্নান খাতায় বিভিন্ন জনের নামে ভূয়া স্বাক্ষরসহ তড়িগড়ি করে খাতায় লেখালেখির সময় স্থানীয়দের কাছে হাতেনাথে ধরা পড়েন। এসময় উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের বাইরে দুর্নীতিবাজ অপর এক স্বাস্থ্যসহকারীকে উত্তম-মাধ্যম দেন বলে জানাগেছে।
জানাগেছে, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অর্থনৈতিক অনিয়ম, গ্রুরুত্ব সহকারে রোগিদের সেবা না দেওয়া, জরুরী বিভাগে নামে-বেনামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, কারনে অকারনে রোগীদেরকে জেলা হাসপাতালে প্রেরণ, রোগীদের সাথে দুর্বব্যহার, নার্স রুমে ভর্তি রোগিদের কাছ থেকে নিবন্ধন ফিসের নামে টাকা আদায়, হাসপতাল কম্পাউন্ডে গড়েওঠা ডাক্তারদের চেম্বারে রোগীদেখার ক্ষেত্রে গলাকাটা পদ্ধতিতে ভিজিট আদায়, হাসপাতালের লোকজনের আস্কারায় পার্শ্ববর্তী ফার্মেসীগুলোর কর্মচারী কতৃক ঔষধ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে টনাটানি ও রোগির টাকা হাতিয়ে নেয়া, রাতে হাসপাতাল সড়কের ফার্মেসীতে কিত্রিম সংকট তৈরী করে ঔষধ এর মূল্য বাড়ানো, অফিস সহকারী আব্দুল মন্নান কর্মচারীদের বেতন বিলসহ বিভিন্ন ট্রেনিং ভাতায় উৎকোচ আদায়, ট্রেনিং উপকরণ ক্রয়ে ভূয়াঁ বিল-ভাউচার তৈরী, নিয়মিত মাসিক সভা না করা, আউটডোরে সময় মত রোগী না দেখে টিফিন বিরতির নামে ভিজিটে রোগী দেখা, রোগীদের খাবারে অনিয়ম, পথ্য সরবরাহে টাকা আদায়সহ একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেন। পরিদর্শনকালে সাংসদ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পরেনি। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে মহেশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে ওঠা প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন হাসপাতালেও নজিরবিহীন অনিয়ম হচ্ছে। হাসপাতাল কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটই তা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে সূত্রের অভিযোগ।
পরে হাসপাতাল প্রধান ডা. সুচিন্ত চৌধূরী ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার উপস্থিত হলে অতিসত্তর নানা অব্যবস্থাপনা নিরসনে উদ্্েযাগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ডাঃ সুচিন্ত চৌধুরী হাসপাতালের নানা সংকটের কথা এমপির নিকট তুলে ধরেন। নার্সসহ হাসপাতালের জনবল বিদ্যুৎ প্রয়োজনীয় অনেক সরঞ্জাম সংকটের কারনে ইচ্ছা থাকা সত্তে ও রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান।
পরে এমপি আশেক হাসপাতালের পুরুষ ও নারী রুগীদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করে চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তার সাথে ছিলেন।