দিনে দিনে বারোটা বেজে গেছে কক্সবাজারের পরিবেশ- প্রতিবেশের। নদী, বন, পাহাড়, জীববৈচিত্র, সাগরতীর ধ্বংস করে একদিকে সরকারের উন্নয়ন আরেকদিকে ক্ষমতাসীনদের দখল-বেদখলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কক্সবাজার। অতিরিক্ত ইটপাথরের ভবনের ভারে সেন্টমার্টিন যেমন ডুবন্ত অবস্থায়, তেমনি দখল-দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁকখালী আর কোহেলিয়াসহ অসংখ্য নদী। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার করার গ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা ভার্জিন দ্বীপ সোনাদিয়াও। হোটেলের পয়:বর্জ্যে ভারী হচ্ছে সাগরের পানির দূষণ। আমলাতন্ত্র আর রাজনৈতিকদলগুলোর প্রভাবশালীরা মিলেমিশে শেষ করে দিচ্ছে কক্সবাজারকে। এখনই উদ্যোগ না নিলে কঠিন হবে সাগর-পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কক্সবাজারকে বাঁচানো।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় হোটেল সী-গাল এর হল রুমে সমকাল-বেলা আয়োজিত বিপর্যস্ত ‘কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এই অভিমত তুলে ধরেন সচেতন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন, দৈনিক সমকাল এর উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
সেমিনারে পরিবেশ পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন, নিজেরা করি- সমন্বয়কারী খুশী কবির, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাপা ও নির্বাহী পরিচালক, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের এডভোকেট সোলতানা কামাল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মো: আবুল হাসেম, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক ফরিদ আহমদ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) আনোয়ার হোসেন সরকার, দক্ষিন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া।
আলোচনায় বেলা’র প্রধান নির্বাহী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, কক্সবাজারের ভবিষ্যতের সাথে জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে, তাই এটি আর কক্সবাজারের সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন জাতীয় সমস্যা।
সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারীরা যত বড়ই হোক না কেনো তাদের চিহ্নিত করে কক্সবাজারকে বাঁচাতে হবে। না হয় আমরা যতই আন্দোলন আর লেখালেখি মামলা মোকদ্দমা করি না কেন কাজে আসবে না।
তিনি আরো বলেন, পর্যটন নগরীর পরিবেশ এখনই লাগাম টেনে ধরতে হবে। সরকারের উচিত আগে পরিবেশ রক্ষা করা এরপর উন্নয়ন করা। এই মুহুর্তে কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলন করে সাংবাদিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। তাহলে সমন্বিত উদ্যোগে পর্যটন শহর কক্সবাজার বাঁচবে।
বর্তমানে ৬৪ জেলার কক্সবাজারে কিছু করতে চাই জানিয়ে বলেন, সমুদ্র নগরীর সবখানে সববাহিনীর দখল রয়েছে। বড় বড় স্থাপনা এখন তাদের।
চলমান এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে না পারলে পরিবেশ প্রকৃতির সাথে মানুষও একদিন হারিয়ে যাবে। তাই পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ হটলাইন চালুসহ নানা পরামর্শ তুলে ধরেন তিনি।
সেমিনারে এভভোকেট সোলতানা বলেন, কক্সবাজারের নদী কারা দখল করছে, কারা বালু উত্তোলন করছে, কারা শক্তি ও ইন্ধন দিচ্ছে তাদের মূখোশ উম্মোচন করতে হবে।
তিনি বলেন, পাহাড় কাটা রোধে এখন থেকে কমিউনিটি গ্রুপ তৈরী করে প্রতিরোধ করতে হবে। বাঁকখালী রক্ষায় প্রশাসনকে শক্তিশালী মোকাবেলা করার আহবান জানিয়ে বলেন, মামলা ও স্থানীয় প্রভাব এগুলো দেখে লাভ নেই। যারা রক্ষার জন্য বিভিন্ন অফিস আদালতে তদবীর করে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ক্ষমতার ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার থেকে সরে আসতে হবে।
সেমিনারে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও ফুটে উঠে পরিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের কাছে অসহায়ত্বের চিত্র। নানামূখী চাপের মধ্যেও তারা পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার জানিয়ে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পেও পরিবেশের ক্ষতি মিনিমাম পর্যায়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সেমিনারে সবাইকে আইনের উর্ধ্বে ভয় কাটিয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।