গতি বাড়িয়ে ক্রমশ বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল মোখা।
শনিবার রাত নয়টায় দেওয়া ১৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মোখার গতি শুক্রবার পর্যন্ত আট কিলোমিটারের মতো ছিল। কিন্তু আজ থেকে এর গতি বেড়ে গেছে। এখন এটি প্রায় ২০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা মোখা উত্তর-উত্তরপূর দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে। আর গতি বেড়ে যাওয়ার কারণে আজ মধ্যরাতেই চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় এর অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রবিবার সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ মধ্যরাত নাগাদ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে আট নম্বর মহা বিপৎসংকেত আট নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আর মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের কাছাকাছি দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে আট থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এর প্রভাবে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের কাছাকাছি দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
মোখার প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার) বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল শনিবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে ঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে জানিয়েছেন, রাত ৩টা থেকে ভোর ছয়টার মধ্যে মোখার অগ্রগতি অংশ সেইন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত হানতে যাচ্ছে। এসময় ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ১৯০ থেকে ২১০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে স্পষ্টত চোখ সৃষ্টি হয়েছে ও প্রচণ্ড ঘূর্ণণ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে।
জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত রিয়েল টাইম চিত্র ও আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্নেষণ করে এই পূর্বাভাস তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।