ওমর ফারুক ইমরান, উখিয়া :
অপরূপ সাজে সজ্জিত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নয়নাভিরাম উখিয়া উপজেলা। দেশের সর্বদক্ষিণের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় অফুরন্ত সম্ভাবনা যেমন রয়েছে তেমনি অন্তহীন সমস্যাও বিরাজ করছে। সুষ্টু পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলে অবহেলিত উন্নয়ন বঞ্চিত এ উপজেলা উন্নয়নের মডেল হিসাবে সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এমন অভিমত হাজারো মানুষের।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর উপজেলা হিসাবে উখিয়ার মান উন্নয়ন হয়। ২০০৯ সালের শেষের দিকে ডিজিটাল উপজেলা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। জালিয়া পালং, রতœাপালং, হলদিয়া পালং, রাজাপালং ও পালংখালী সহ ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার লোক সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। আয়তন ২৬১ দশমিক ৮০ বর্গ কিলোমিটার। পান, সুপারী, চিংড়ি পোনা এখানকার রপ্তানীযোগ্য প্রধান অর্থকরী ফসল। এছাড়াও এখানে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট গড়ে তোলার উলে¬খযোগ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তৎমধ্যে জালিয়া পালং ইউনিয়নে অবস্থিত ৩০ কিলোমিটার সমুদ্র বীচ, ইনানীর পর্যটন স্পট, পাটুয়ার টেকের প্রাকৃতিক পাথরের স্তুপ, সবুজ অরণ্য যা মিনি চিড়িয়াখানা হিসাবে গড়ে তোলা যাবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এসব উলে¬খযোগ্য স্পট গুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। উখিয়ার উন্নয়নের জন্য যে সকল প্রস্তাবলী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনসাধারণ প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তৎমধ্যে-
ইনানী থেকে মনখালী পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতকে এক্সক্লোসিভ পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা :- এটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর দেশী বিদেশী হাজার হাজার পর্যটক উখিয়া আগমন করবে। এতে প্রতি মৌসুমে পর্যটন খাত থেকে শত কোটি টাকা আয় করতে পারবে।
কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপন ঃ- ঋতুভেদে উপজেলার ৫ ইউনিয়নে লাখ লাখ টন আম, লিচু, আনারস, জলপাই, কুল সহ বিভিন্ন ফল উৎপাদন হয়। সুষ্ঠু বাজারজাত করতে না পেরে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এখানে কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হলে কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত করে যেমন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হওয়া যাবে তেমনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
উপজেলা ও ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়ক উপ-সড়কে বনায়ন সৃষ্টি :- উপজেলার ৫ ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক উপ-সড়কের দু-পার্শ্বে গর্জন, মেহগনি, গামারীসহ পরিকল্পনা মতে বৃক্ষরোপনকল্পে এ গুলো যত্ন নেয়া হলে আগামী ২০/২৫ বছর পর কমপক্ষে শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয় এ বনায়ন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের এ সময়ে পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক অবদান রাখবে।
রেজু নদীতে রাবার ড্যাম স্থাপন করা :- রেজু নদীতে রাবার ড্যাম স্থাপন করে সুষ্ঠু পানি বন্টনের পরিকল্পনা নিলে শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদী থাকা প্রায় ৫ হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এছাড়াও নদী তীরবর্তী এলাকায় সবজি চাষ, নদীতে মাছ চাষ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী করা সম্ভব হবে। এই অর্থ জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল করতে উলে¬খযোগ্য অবদান রাখবে।
বন বিভাগের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারপূর্বক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনা ঃ- উখিয়া উপজেলার ৩৪,৪৫০ একর বন ভুমির মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বন বিভাগের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বসতী স্থাপন করে বসবাস করে আসছেন। দিন দিন ধরে এ দখল প্রবণতা জ্যামেতিক হারে বেড়ে চলছে। মালিকানা না পাওয়ার আশংকায় অবৈধ দখলদাররা বৃক্ষ রোপন করে না। বরং পাহাড় কর্তন থেকে শুরু করে নানা ভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে আসছেন। এসব অবৈধ দখলদারদের সামাজিক বনায়নের আওতায় এনে বৃক্ষ রোপনের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে ২০/৩০ বছর পর হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
বেদখল হয়ে যাওয়া খাস জমি উদ্ধার করে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনা ঃ- উপজেলার বিপুল পরিমান খাস জমি বেদখলে রয়েছে। এসব খাস জমি চিহ্নিত করে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে ভাড়া প্রদান ও লীজের আওতায় আনা হলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব হবে।
উখিয়া ডিগ্রী কলেজ ও টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপন ঃ- উখিয়া ডিগ্রী কলেজের পশ্চিমের পাহাড়িয়া সমতল ভূমি ও টিভি রিলে উপ-কেন্দ্রের দক্ষিণের সমতল ভূমিতে বিসিক শিল্পনগরী ও ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা স্থাপন করা যেতে পারে। উক্ত স্পট গুলোতে শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এতদঞ্চলের বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে।
উখিযার আবাসন সমস্যা নিরসন দরকার ঃ- নিত্য নতুন অপরিকল্পিত বসত ঘর নির্মাণের কারণে উখিয়ার আবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর ফলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে ফসলী জমি, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এর বিহীত ব্যবস্থাসহ শিক্ষা, চিকিৎসা সহ মানুষের যাবতীয় মৌলিক অধিকার নিয়ে উন্নয়নমুখী পদক্ষেপ জরুরী।
মেরিণ ড্রাইভ সড়কের দুই পার্শ্বে পাম বাগান সৃজন ঃ- পরিকল্পনা অনুযায়ী মেরিণ ড্রাইভ সড়কের দুই পার্শ্বে মালয়েশিয়ার আদলে বাম বাগান সৃজন করা হলে স্থানীয় ভাবে ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী করা সম্ভব হবে।
ফসলী জমিতে উন্নত জাতের ধান চাষাবাদের পরিকল্পনা গ্রহন ঃ- বহু বছর ধরে উখিয়ার কৃষকরা মান্দাতা আমলের চাষ পদ্ধতি অনুসরন করে ধান চাষাবাদ করে আসছে। অদক্ষতা ও সচেতনতার অভাবে এখানকার কৃষকরা উন্নত জাতের ধান চাষাবাদ করেনা। উন্নত জাতের ধান চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ তেমন একটা দেখা যায়না। যার কারনে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত প্রতি কেজি চাল ৩০/৩২ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারেনা। পরিকল্পনা মতে উন্নত জাতের ধান চাষাবাদ করলে প্রতি কেজি চাল ৯০/১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যেতে পারে। এ ব্যপারে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্যোগে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
উখিয়া মোহাম্মদ শফির বিল সড়ক জরুরী ভিত্তিতে বাস্তবায়ন ঃ- উখিয়া সদরের হাজির পাড়া হয়ে মোহাম্মদ শফির বিল পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারন করা হলে ব্যবসা বাণিজ্যে পশ্চিমের দুয়ার খুলে যাবে। উপকুলীয় চরাঞ্চলের মানুষ সরাসরি উখিয়া সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। বিগত বিএনপি শাষনামলে এ সড়কটি সম্প্রসারন করার উদ্যোগ নিয়া উখিয়া ভূমি অফিসের সম্মুখে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেও তা এখানো আলোর মূখ দেখেনি।
উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠকে মিনি ষ্টেডিয়ামে রূপান্তর ঃ- খেলা ধুলা, বিনোদন প্রত্যেক মানুষ চাই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে উখিয়ার মানুষ উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠকে মিনি ষ্টোডিয়াম করার দাবী জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এ দাবী এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। জাতীয় ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচি এ মাঠে অনুষ্টিত হয়। কর্মসূচির আগে স্থানীয় প্রশাসন মাঠ সংস্কার করে পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে থাকে। কিন্ত এটি মিনি ষ্টোডিয়াম হিসাবে রূপান্তর করা হলে ক্রিড়াঙ্গনে উখিয়ার ছেলেরা জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে।
উখিয়ার সকল স্কুল ও মাদ্রসায় ৬ষ্ট শ্রেনীর ভর্তি ফি মওকুফ করা ঃ- উখিয়ার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। উখিয়া টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি সভা সেমিনারে প্রায় সময় শিক্ষার গুরুত্বারোপ করে আসছেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্টানের উন্নয়নে তিনি ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছেন। অনেক অভিবাবক আর্থিক দৈন্য দশার কারনে পিএসসি পাস করার পর তাদের ছেলেদের উ”” শিক্ষা করাতে অক্ষম হয়ে যায়। সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচী বাস্তাবায়নের নিমিত্তে উখিয়ার সকল স্কুল মাদ্রসার ৬ষ্ট শ্রেনীর ভর্তি ফি মওকুফ করা যেতে পারে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি সহ উপজেলা প্রশাসন একটু আন্তরিক হলে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
পতিত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ, পান চাষের ফলন বৃদ্ধি ঃ- পতিত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ, পান চাষের ফলন বৃদ্ধি করার জন্য সরকারী উদ্যোগে পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে পান ও ফুল চাষ করে ব্যাপক ভাবে লাভবান হওয়া যাবে।
অপর দিকে উখিয়ার সবচেয়ে বড় এবং প্রধান সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা, পাশাপাশি বেকারত্ব, কুসংস্কার, অশিক্ষা, জনসংখ্যা সমস্যা সহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।