নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনামুক্ত হয়ে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি মরহুম মোহাম্মদ আলী’র ছোট ছেলে তারেক মাহমুদ রনি টেকনাফ ICDDRB কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
গত ১৩ তারিখ আমি একটু অসুস্থ হয়ে যায় রাতে জ্বর আসে প্রায় ১০৩ ডিগ্রী মত ডাক্তারের পরামর্শ নি ঔষুধ দিলেন। এরপর আর জ্বর নেই হালকা কাশি ছিলো।
১৬ তারিখের দিকে আম্মু অসুস্থ হলেন প্রচুর জ্বর কিন্তু কাশি ছিলো না, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ খেতে লাগলেন।টানা ৩ দিন জ্বর এই কম এইবেশি। অন্যদিকে আমি প্রায় সুস্থ। প্রতিদিন আমি দুইবার আমার ও আম্মুর অক্সিজেন লেভেল চেক করতাম প্রায় ঠিক থাকতো। হঠাৎ ২২ তারিখ বিকেলে আম্মুর অক্সিজেন লেভেল ৯০ তে চলে আসে আর দেরি না করে ফ্যামিলি ডাক্তার আজাদ আংকেলের কথা মত চলে গেলাম ICDDR’B টেকনাফ ক্যাম্পাসে। জরুরি বিভাগে কাগজ পত্র পূরণ করে আমি আর আম্মু করোনা টেষ্টের জন্য স্যাম্পল দিয়ে দুইজনে একসাথে ভর্তি হয়ে যায়।
ICDDRB মূলত ডায়েরিয়া চিকিৎসার জন্য হলেও করোনা মহামারিতে এইখানে স্পেশাল করোনা ইউনিট গঠন করা হয়েছে গত বছর থেকে।
আমার আর আম্মুর বেড পাশাপাশি, দুইজনের চিকিৎসা চলছে আম্মুকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হলো।
২৪ তারিখ রাতে রিপোর্ট আসলো আমাদের করোনা পজেটিভ তারপর সাসপেক্টেড ওয়ার্ড থেকে করোনা ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হলো সেইখানেও আমার আর আম্মু বেড পাশাপাশি নিলাম।চিকিৎসা চলছে আম্মুকে প্রতিনিয়ত অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে রাখা হলো আমাকে শুধু দুইটা ঔষুধ দেয়া হলো। প্রতিদিন ডাক্তাররা দেখছেন আর নার্সতো রোগীদের জন্য ২৪ ঘন্টায় আছেন।
এইদিকে অনেকে আমাদের শারিরীক খোজ খবর নিচ্ছেন,পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
দুইদিন পর ডাক্তার আমাকে বললেন, আপনি সুস্থ আছেন চাইলে রিলিজ নিতে পারেন, আমি ডাক্তারকে বললাম আম্মুর সাথে থাকা লাগবে এখন রিলিজ নিবো না।
তারপর আস্তে আস্তে আম্মুর অক্সিজেন লেভেল ব্যালেন্সে আসতেছে আগের চেয়ে একটু সুস্থতা অনুভব করছিলেন।পুরোদমে চিকিৎসা চলছে খুব সুন্দর যত্ন সহকারে।শুধু আম্মু নই ওয়ার্ড এর সকল রোগীকে উনারা সমানভাবে সেবাযত্ন দিচ্ছেন। একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম ডাক্তার নার্স ব্রাদাররা প্রত্যেক রোগীকে খুব গুরুত্ব দেয় তাদের কাছে ধনী গরীর, ভি আইপি বা নন ভিআইপি কোন বৈষম্য নেই।
গত ৩০ তারিখ সকালে আম্মুর অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে দেয়া হয় সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভবে সবকিছু করছেন ওষুধ চলছিলো।
তারপর আলহামদুলিল্লাহ ১ তারিখ আম্মুকে রিলিজ দেয়া হয় আমরা দুইজনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলাম ডাক্তার রেস্টে থাকতে বললেন কয়েক দিন।
ICDDR’B নিয়ে কিছু কথা না বললে নই।
বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা ও UNICEF এর অর্থায়নে ২০০ বেশি বেড নিয়ে টেকনাফে একটি আধুনিক মানের করোনা আইশোলেশন সেন্টার। করোনা ইউনিটে রয়েছে ৩৩ জন ডাক্তার ৪০ জন নার্স ২৫ ব্রাদার সহ মোট ২০০ জন কর্মচারী। উন্নতমানের প্যাথলজি ল্যাবে রয়েছে সুদক্ষ ল্যাবিস্ট তাছাড়াও নার্স ও ব্রাদার গুলো ওয়েল ট্রেইন প্রাপ্ত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যারা আগে ঢাকার বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।বিশাল জায়গায় নিয়ে গড়ে উঠা এই করোনা আইশোলেশন সেন্টারে রয়েছে করোনা রোগীদের জন্য সর্ব উচ্চ অক্সিজেন সাপোর্ট। তিন ধরনের অক্সিজেন সাপোর্ট তাদের আছে সেন্টাল লাইন, সিলিন্ডার ও কনসেন্টেটর।
দু:খের বিষয় সন্ধ্যার পর পল্লী বিদ্যুৎ এর লো ভোল্টেজ এর কারনে তাদের সেন্টাল লাইন অফ রাখতে হয় তখন বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার ও কনসেন্টেটর ব্যবহার করা হয়।সকলের আচার-আচরণ সেবা চিকিৎসা সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় অনেকটা সয়ংসম্পন্ন একটা করোনা আইসোলেশন সেন্টার।
খরছ বা টাকা পয়সার বিষয়ে কিছু বলতে হয়।
ICDDRB টেকনাফে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন বিভিন্ন টেস্ট,ওষুধ বিনামূল্যে পায় রোগীরা তাছাড়া রয়েছে রোগী ও তার এটেন্ডেন্স এর জন্য বিনামূল্যে ৩ বেলা উন্নতমানের খাবার।
যদি কোন রোগী প্রাইভেট হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নেন তাহলে দিতে হবে লাখ লাখ টাকা।
আমার দেখা দুইজন রোগী ছিলেন একজন ১ মাস ৯ দিন পর রিলিজ পেয়েছেন খুব খারাপ অবস্থা ছিলো উনার।উনি নিজের মুখে বললেন যদি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করতাম তাহলে আমার চিকিৎসার বিল আসতো প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার মত।
আরেকজন রিলিজ পেয়েছেন ২৯ দিন পর উনারো প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মত বিল আসতো যদি প্রাইভেট হাসপাতালে যেতেন।
আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ করোনা পজেটিভ হলে দেরি না করে চলে যাবেন ICDDR টেকনাফ।
পরিশেষে ICDDR টেকনাফের সকলের মঙ্গল কামনা করছি আল্লাহ আপনাদের ভাল রাখুক সুস্থ রাখুক।
আমার ও আম্মুর অসুস্থতা নিয়ে যারা খোজখবর নিয়েছে দোয়া করেছেন ও দেখতে গেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।