এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার :
ঘূর্ণিঝড় কোমেন কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন ছাড়া অন্যান্য উপকূলীয় এলাকাতে আঘাত হানতে না পারলেও ঔ এলাকাগুলোতে প্যারাবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দু’দিনের ব্যবধানে প্যারাবনের ৫ শতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে ও সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে গত দুইদিন বঙ্গোপসাগর ছিল বেশ উত্তাল এবং এসময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবহীত হয়েছে। এর ফলে জোয়ারের পানিতে সাগরের করাল গ্রাসে প্যারাবনের উপকূল রক্ষাকারী প্যারাবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে করে আবারো ঝুঁকির সম্মুক্ষিন হলো কক্সবাজারের উপকূলের এলাকগুলে। গতকাল সরজমিনে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে ঝাউগাছ বিলীনের চিত্র দেখা গেছে। যদিও বনবিভাগ বলছে একশ’র কিছু বেশী ঝাউগাছ বিলীন হয়েছে।
এদিকে এ সামান্য ঘূর্ণিঝড়ে প্যারাবনের এমন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিকে মোটেও ভালোভাবে দেখছেন না সচেতন মহল ও এলাকাবাসী। সৈকতের তীর ঘিরে সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক সহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছে হাজারো পরিবার। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সমুদ্রপাড়ের এসব ঝাউগাছ শত বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলচ্ছাস থেকে রক্ষা করে আসছে উপকূলীয় এলাকান মানুষকে। এ দুইদিনে ঝাউগাছ বিলীন হওয়ায় তারা এখন বেশ আতঙ্ককিত।
কক্সবাজার বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’র প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত দু’দিনে সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট ও ডায়বেটিস পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পয়েন্ট পর্যন্ত একশ ২০টি’র মতো ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হয়েছে। তবে আসল চিত্র ভিন্ন!
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতের ওইসব পয়েন্টে ৫শ’র বেশি ঝাউগাছ বিলীন হয়েছে। সাগরের উত্তাল ঢেউ অব্যাহত থাকায় আরো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিলীন হওয়া গাছগুলো দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এমন চিত্রও চোখে পড়েছে।
বিট কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান আরো জানান, বিলীন হওয়া ঝাউগাছ গুলো সংক্ষণ করছে বনবিভাগ। বনবিভাগের কর্মীরা দু’দিনে অধিকাংশ গাছ সংক্ষণ করে নিয়েছে।
ঝাউগাছ রক্ষার ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা বলেন, ‘বালিয়াড়ি ভাঙনের কারণে ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায় ছাড়া কৃত্রিম কোন উপায় নেই ঝাউগাছ রক্ষার।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ঝাউগাছ বিলীন পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সৈকতের অস্থিত্বও হুমকির মুখে পড়ছে। তাই আমরা বারবার তাগিদ দিচ্ছি ঝাউবাগান রক্ষায় উদ্যোগ নিতে। কিন্তু তা আদৌ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ’
ঝাউবাগান রক্ষার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বালিয়াড়ি ছাড়া ঝাউগাছ রক্ষা হবে না। কক্সবাজার সৈকতের কোথাও কোথাও প্রাকৃতিক ভাবে বালিয়াড়ি না থাকলেও কয়েকটি পয়েন্টে নষ্ট করা হয়েছে বালিয়াড়ি। এ কারণে ঝাউবাগান বিলীন হচ্ছে। ঝাউবাগান রক্ষা করতে হলে বালিয়াড়ি সৃষ্টি করতে হবে। এ প্রস্তাবটি আমরা বনবিভাগকে দিয়েছি।’