রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থহীন আর সে কারণে বিশ্বের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এই যুদ্ধে যারা অস্ত্র তৈরি করে, তারাই লাভবান হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন সরকারপ্রধান। বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিচ্ছে আবার তারই সঙ্গে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু যুদ্ধ নয়, তার সঙ্গে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ব আজকে অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।’
‘উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তারা এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয় করছে। খাদ্যের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেখানে আমাদের মতো দেশ, কেবল আমরা উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছি। একটা লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি আপ্রাণভাবে। তখনই আমাদের জন্য এ ধরনের বাধা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের থেমে থাকলে চলবে না।’
দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একশ্রেণির দালাল আছে, যারা সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায়। আপনারা তাদের খপ্পরে পড়বেন না। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আপনাদের সাহায্য করবে।’
দালালের খপ্পড়ে পড়ে বিদেশযাত্রা নয়:
দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একশ্রেণির দালাল আছে, যারা সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায়। তাদের খপ্পরে পড়বেন না। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আপনাদের সাহায্য করবে।’
‘বিদেশে যেতে গেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেতে পারেন। প্রয়োজনে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি আমরা। যাতে জমিজমা বিক্রি না হয়, সম্পত্তি বিক্রি না হয়, সেই জন্যই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তৈরি করা।’
বিদেশে গিয়ে দক্ষতার অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠাতে হবে। তাহলে বিদেশ গিয়ে আরও বেশি লাভবান হওয়া যাবে।’
শ্রমবাজারে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা ইউনিয়নের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে আমাদের গ্রাম। আমাদের গ্রামপর্যায় থেকে আমরা উন্নয়নটা করতে চাই।
‘গ্রামপর্যায়ে প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা—সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক উপজেলায় আমি কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি মনে করি এর মাধ্যমে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।’
২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সকল উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে অনেকে সমস্যায় পড়ে দক্ষতার অভাবে। কিন্তু আমাদের যুবকরা যদি কাজ জানে তাহলে তারা আরও বেষি লাভবান হবে। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠাতে হবে।’
২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান:
২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন থাকবে সেই পরিকল্পনা দেওয়ার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আগামী ২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে সেই ডেল্টা প্ল্যানও প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। আমাদের দেশের যুবসমাজ অত্যন্ত দক্ষ এবং মেধাবী। আমাদের আরও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে ধাবিত হতে হবে। এতে সুফল পাওয়া যাবে।
দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্যের উৎস বাড়ানোর জন্য তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্তত খাবারটা যদি দেশের ভিতরেই উৎপাদন করা যায় তাহলে আমরা যেকোনো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো। তাই সবার পতিত জমিতে যেভাবে পারেন চাষাবাদ করেন। জমি যেন খালি না থাকে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ যুব সমাজ। এই যুব সমাজকে আমরা শুধু বিদেশে পাঠাব এটা ভাবলে চলবে না। আমরা দেশে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি সেখানেও দক্ষ জনশক্তি লাগবে। কাজেই আমরা প্রশিক্ষণ দেব, বিদেশের পাশাপাশি দেশেও কাজ করবে।’
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।