ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার আলো :
পর্যটন শহর কক্সবাজারে প্রতিবারের মতো এবারও রমজানের শুরুতেই যানজট ও লোডশেডিং নিয়ে দুশ্চিন্তায় কর্মজীবি-রোজাদাররা। একদিকে অসহ্য গরম, অন্যদিকে অফিস শেষে বাসায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার তাড়া থাকে কর্মজীবী রোজাদারদের। কিন্তু দীর্ঘ যানজটে অনেককে পথেই ইফতারি সারতে হয়। বলাচলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের এই যানজট ভোগান্তি কমাতে নানা উদ্যোগ নেয়নি পৌরসভা ও জেলা প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে প্রতিবারই গণমাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি হলেও টনক নড়েনা সংশ্লিষ্ঠদের। মানুষ যানজট, লোডশেডিংয়ে হাঁপিয়ে উঠছে।
সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভা ও জেলা প্রশাসন শহরের যানজট নিরসনের লক্ষে পুরো শহরজুড়ে ফুটপাতের অবৈধ হকারদের উচ্ছেদও করে। কিন্তু ১ ঘন্টার ভেতরে পুনরায় দখল করে নেয় হকাররা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষনা ছিল, রোজায় অফিস সময়ে কক্সবাজার শহরে কোনো ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবেনা। যানবাহন ও পথচারী চলাচল স্বাভাবিক রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান-বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলতে থাকায় তার কারণে কিছুটা যানজটের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এটাকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সহনশীল রাখতে আমরা কাজ করছি। মেয়র আরো বলেন, রমজানে যানজট পরিস্থিতি ঠিক রাখা, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা, জলাবদ্ধতা এসব বিষয় নিয়ে কোন অবহেলা নই।
তিনি বলেন, রমজানে ইফতারের আগে মানুষ যেন ঘরে ফিরতে পারে, যানজট যেন সহনীয় রাখা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে কোন আপোসও হবেনা।
সরেজমিন দেখা গেছে-রমজানের শুরুতেই শহরজুড়ে বাড়তে শুরু করেছে যানজট। ভোগান্তিতে নাকাল শহরবাসী। যেন থমকে যাচ্ছে কক্সবাজার শহর। এই যানজট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে গেছে বলে জানান বোদ্ধামহল। শহরে যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার হলেও রমজানে ব্যবসায়ীদের আদান প্রদান ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট। এ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘা। বলতে গেলে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না শহরের যানজট। শহরবাসীর দীর্ঘদিনের নাগরিক সমস্যা বেড়েই চলছে। পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না যানজট। তবে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার যানজটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে টমটমের সংখ্যা বৃদ্ধি আর ফুটপাত দখলকে। যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা লোকজনকে। বছরজুড়েই পর্যটন শহরের প্রধান সড়কের যানজট লেগে থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে যানজটের মাত্রার তীব্রতা বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে তীব্র আকার ধারণ করেছে টমটম আর রিক্সাজট। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শহরবাসী। একদিকে গরমের তীব্রতা অন্যদিকে মারাত্মক যানজট। সব মিলিয়ে নাকাল শহরবাসী। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে আধ থেকে পৌনে ১ ঘণ্টা। সকাল থেকে দুপুর আবার বিকাল থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত শহরের বাজারঘাটা, লালদিঘীর পাড়, ভোলা বাবুর পেট্টোল পাম্প, বার্মিজ মার্কেট, বড় বাজার, এন্ডারসন রোড এসব এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এতে করে যেমন মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ব্যাঘাত ঘটছে নিত্যনৈমত্তিক কাজে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, এমনি তো যানজট লেগেই থাকে শহরে। রমজান মাস শুরুতে যান চলাচল বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি হয়েছে। রমজান মাস আসার আগে আগে ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে যায়। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণ জেলা শহরে আসতে শুরু করেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানজট বাড়ে। এভাবে রোজার ঈদের আগে এ ধরনের যানজট থেকে রক্ষা পাওয়া শহরবাসীর জন্য কঠিন হবে।
কক্সবাজার সরকারী কলেজের ছাত্র রফিকুল ইসলাম গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তিনি বাজারঘাটা থেকে টমটমে করে পৌরসভার সামনে আসতে সময় লেখেছে ৪০ মিনিট। তাই অনেকটা ক্ষোভের সাথে তিনি বললেন-যেভাবে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এখানে কক্সবাজার শহরে কোন ট্রাফিক পুলিশ নেই। অনেকে আবার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলাকেও যানজটের জন্য দায়ী করছেন। শহরে গত এক সপ্তাহ ধরে যেভাবে যানজটের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এই যানজটের জন্য শহরবাসী দায়ী করছেন বৈধ-অবৈধ সব টমটম আর রিক্সাকে। পাশাপাশি শহরে ধারণ ক্ষমতার বাইরে পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক টমটমের লাইসেন্স প্রদানও যানজটের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন শহরবাসী। শুধু টমটম আর রিক্সা নয় প্রতিনিয়ত যেখানে সেখানে পার্কিং করে মাহিন্দ্রা, সিএনজি ও রামু লাইনের যানবাহন যাত্রী উঠা-নামা করার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের ভেতর চলাচল করায় যানজট আবারো বেড়ে গেছে। ফলে যানজটে নাকাল শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। যা আসন্ন রমজানে বেড়ে যেতে পারে বলে অনেকের আশংকা। এদিকে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের নেয়া কোন পদক্ষেপই কাজে আসবে না।
সরেজমিনে শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলি-গলি ঘুরে যার আসল চিত্রই ফুটে উঠেছে। দেখা যায়-বিশেষ করে বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা, লালদিঘীর পাড়, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প, হাসপাতাল সড়ক, পান বাজার, এন্ডারসন রোড, বড় বাজার এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এতে করে যেমন করে মানুষ কর্ম ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে, ঠিক তেমনি ভাবে নষ্ট ব্যাঘাত ঘটছে মানুষের নিত্য নৈমত্তিক কর্মকান্ডেও। শহরের লালদিঘীর পাড় থেকে বার্মিজ মাকের্ট পর্যন্ত সামান্য পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট যা অনেক সময় ৪০ মিনিটের কাছাকাছিও চলে যায়। যানজটের কবল থেকে শহরবাসী রক্ষা করতে হিমশিম খাওয়ার কথা স্বীকার করে এর জন্য ট্রাফিক বিভাগের জনবল সংকট, ফুটপাত দখল আর যত্রতত্র টমটম চলাচলকে দায়ী করছেন ট্রাফিক পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন-যেভাবে পৌর কর্তৃপক্ষ টমটমের লাইসেন্স প্রদান করছে তাতে যানজট না বেড়ে কি হবে। পাশাপাশি তিনি নিজেদের জনবল সংকটের কথাও তুলে ধরেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কক্সবাজার ব্লাড ডোনার’র সোসাইটির এডমিন আশরাফুল হাসান রিশাদ ও জাহাঙ্গীর আলম জ্যাক বলেন, রিকশা আর টমটমের শহরে পা ফেলায় যেন মানুষের পাপ হয়েছে। শহরের লালদিঘীর পাড় থেকে বার্মিজ মাকের্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে আধ থেকে পৌনে এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আর যারা আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে আসেন বা অফিসের কাজে আসেন তারা কখনো সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। এভাবে তো চলতে পারেনা। এর সুষ্ঠু সমাধান না হলে আগামিতে পর্যটক ও সাধারণ মানুষ কক্সবাজার বিমূখ হবে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে যানজটের মাত্রা যেভাবে বেড়ে গেছে তাতে কোনো যানবাহন নিয়ে শহরে চলাচল করাই দায় হয়ে পড়েছে। এ যানজট রমজানে অনেক রোজাদারকে কষ্টের সীমা বইতে হচ্ছে। এর জন্য তিনি সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থা ও যানবাহন চালকদের সচেতনতার ওপর জোর দেন এবং অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জোর দাবী জানান।