মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান,টেকনাফ
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্র্টিনে ভাঙ্গণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দ্বীপের চতুর্দিকে কম-বেশী ভাঙ্গন ধরলেও সবচেয়ে বেশি মারাতœক ভাঙ্গন ধরেছে উত্তর ও পশ্চিম অংশে। বিশেষতঃ কবরস্থানের বেশিভাগই ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে অনেক কবর থেকে মৃতদেহ উম্মুক্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে ২৪টি বসতবাড়ি বাস্তভিটাসহ সাগরে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ২৯ জুন রাতে সেন্টমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান প্যানেল-১ আবদুর রহমান মেম্বার (০১৮১৯৮৮৭৭৭৫) সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে মোবাইল ফোনে উক্ত তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বসতভিটাসহ সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়া ২৪টি পরিবারের বসতবাড়ি গুলো হচ্ছে- মোঃ আয়ুবের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৩৫), মোঃ শাকিলের স্ত্রী আকলিমা বেগম (২৫), আবুল কালামের পুত্র ইসমাইল (৩৫), কামাল আহমদের স্ত্রী মোস্তফা খাতুন (৩২), মৃত ফয়েজুর রহমানের পুত্র আমিনুল্লাহ (৪২), আলী আহমদের পুত্র আবদুল মজিদ (২৬), মৃত মতিউর রহমানের পুত্র আলী আহমদ (৫২), ডেইলপাড়া মসজিদের ইমাম মাওঃ ইলিয়াস (৫০), মৃত বানেশ্বর ধরের পুত্র সজিত ধর (২৮), সোনা রাম শীলের পুত্র প্রদীপ কুমার শীল (৩৫), লাল মিয়ার পুত্র হোছন আহমদ (৩৮), আবদুল করিমের পুত্র আয়াজ (৩২), কবির আহমদের পুত্র ইয়িাস (৩৫), হাবিবুল্লাহর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩৭), ইয়াসিনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২৮), মৃত লাল মিয়ার পুত্র কুরবান আলী (৪১), সুনা মিয়ার পুত্র ওসমান (৩২), দিল মোহাম্মদের স্ত্রী জুহুরা বেগম (২৯), আবদুর রাজ্জাকের পুত্র মোঃ সিদ্দিক (৩৫), মৃত ফজল করিমের স্ত্রী সামশুন্নাহার (৪২), অলি আহমদের পুত্র আলী হায়দার (২৭), বশির আহমদের মেয়ে গুনু বিবি (৩৭), মৃত লাল মিয়ার পুত্র মোঃ আলম (২৬), মৃত আবদুল আজিজের স্ত্রী সখিনা খাতুন (৫৫)। জানা যায়, দ্বীপের হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস ও প্রিন্স হেভেন চলতি বর্ষায় সাগরের কবলে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। গত কয়েক বৎসর ধরে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে সেন্টমার্টিনদ্বীপে ভয়াবহ ভাঙ্গন এবং জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ঘটছে। ভাঙ্গনে ২১টি বসতবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে এমনকি বাজারে জলোচ্ছাসে ৬টি দোকান বিধ্বস্থ হয়েছিল। সেন্টমার্টিনদ্বীপ বিএন ইসলামিক স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি ও আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও মেম্বার আলহাজ্ব নুর আহমদ (০১৮১৫৬১৪৫৭৬) জানান- সেন্টমার্টিনদ্বীপের ইতিহাসে এত অল্প সময়ের মধ্যে এধরণের ভয়াবহ ভাঙ্গন এবং জলোচ্ছ্বাস ইতিপূর্বে আর হয়নি। এমনকি ইতিহাস বিখ্যাত একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। জোয়ারের পানি ৮ থেকে ১০ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সাগরের ঢেউ জনবসতিতে এসে পড়ে। এতে দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙ্গন ধরেছে। ভাঙ্গনে ২১টি বসতবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এরা হচ্ছে- উত্তরপাড়ার আবদুস সালামের পুত্র হাফেজ আহম্মদ, ফজল আহমদের পুত্র শামসুল আলম, ফজল আহমদের পুত্র রবিউল আলম ,ফয়জুর রহমানের পুত্র ছদু মিয়া, সিরাজুল ইসলামের পুত্র শামসুল আলম, আবদুর রাজ্জাকের পুত্র মোঃ ছিদ্দিক, নজির আহমদের মেয়ে ফাতেমা খাতুন, হাবিবুর রহমানের পুত্র আবদুল কুদ্দুস, নজির আহমদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন, কবির আহমদের পুত্র সাবের এবং মছিউল্লাহ, ছৈয়দ উল্লাহ, আমিন উল্লাহ, ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ পাড়া দুদুমিয়ার পুত্র ফজল আহমদ এবং ডেইল পাড়ার আমিন উল্লাহ, শামসুল আলম, মোঃ রফিক, ফিরুজা বেগম। জলোচ্ছ্বাসে সেন্টমার্টিনদ্বীপ বাজারের মোঃ আমিন, মনির উল্লাহ, আলী আহমদ, হাবিব উল্লাহ’র দোকান বিধ্বস্থ হয়েছে। তাঁরা আরো জানান- দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশে অর্ধ কিলোমিটার, শীলবনিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া মসজিদ পর্যন্ত, নেভী গেইট থেকে জাদিবিল কবির মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত, হোটেল সীমানা পেরিয়ে থেকে গলাচিপা পর্যন্ত ভাঙ্গন ধরেছে। জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করায় চলতি বর্ষায় দ্বীপের চার পার্শ্বের প্রাকৃতিক পাথরের বেষ্টনী ভেদ করে এবার বালিয়াড়িতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সাগরে পানি বাড়লে সাগর গর্ভে চলে যেতে পারে হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস ও প্রিন্স হেভেন। বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাসে বিলিন হয়ে সাগরের পেটে চলে যাচ্ছে শতবর্ষী কবরস্থান। দিন দিন কবরস্থানের জমি ক্ষয় হয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে সেন্টমার্টিন। চোখের সামনে বাপ-দাদার শেষ ঠিকানা কবরস্থানও রক্ষা না পাওয়ায় চরম আশংকায় রয়েছে দ্বীপবাসী। সেন্টমার্টিন দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপটি রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে অচিরেই হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করেছেন দ্বীপের বাসিন্দাগন।