এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও : এবার ঈদগাঁওয়ের ঈদ বাজারে সর্বত্র মার্কেট জুড়ে পাখির পরিবর্তে কিরণমালায় ছেয়ে গেছে। দাম যাই হোক আর না হোক, যতদুর দেখি শুধু কিরণমালা আর কিরণমালা। এ ঈদে পিতামাতার কাছে বায়না ধরছে মেয়েরা কিরণমালা ড্রেসের জন্য। ঈদ বাজারে সব বয়সী ক্রেতা সাধারণের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। বৃহত্তর ঈদগাঁও পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী অপরাপর ইউনিয়নের লোকজনও থেমে নেই ঈদের কেনাকাটা থেকে। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে দিনদিন জমে উঠছে ঈদগাঁওয়ের বিপনী বিতানগুলো। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওয়ের ছোট-বড় পনেরটি মার্কেটে এবার ঈদের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে। ক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছে। বিশাল এলাকায় পানি বন্দী অবস্থায় দুর্বিসহ জীবন-যাপনের পরেও বন্যা দুর্গত লোকজনের মাঝে ঈদ কেনাকাটার আমেজ পুরোটাই চলে এসেছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশার পরিবর্তে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। টানা সপ্তাহজুড়ে ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে গ্রামাঞ্চলের লোকজন হাবুডুবু খাচ্ছিল। এতে কারো পৌষ মাস ও কারো সর্বনাশে পরিণত হয়। এলাকা জুড়ে বন্যার পানিতে গ্রামীণ যাতায়াত সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার পরেও ঈদের কেনাকাটায় ফের গ্রামাঞ্চলের ক্রেতাগণ ছুটে আসছে মার্কেটে। গতকাল ৫ জুলাই সন্ধ্যায় আজকের কক্সবাজারের এ প্রতিনিধি ঈদগাঁও বাজারের কয়েকটি মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখতে পায়। পুরুষ ক্রেতাদের পাশাপাশি নারী ক্রেতার সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। জানা যায়, জেলা সদরের বহুল আলোচিত ঈদগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীদের ভর মৌসুমেও রমজানের শুরুতে প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারনে ক্রেতাহীন মার্কেটে পরিণত হলেও পনের রমজান পার হতে না হতেই ক্রেতাদের ভিড় আর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উল্লেখ্যযোগ্য হারে ক্রেতার সমাগম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা মহাখুশিতে উৎফুল্ল। যেন দুর্বিসহ জীবন যাপন করার পরেও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা ক্রেতাদের দখলে ছিল মার্কেটগুলো। গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পরেও সে বাঁধভাঙ্গা ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটমুখী হচ্ছে। আবার অনেক নারী-পুরুষ নানা কষ্টের বিনিময়ে নিজের জন্য, ছেলে মেয়ে কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা যায়। ঈদগাঁও বাজারের নিউ মার্কেট, রহমানিয়া মার্কেট, শফি সুপার মার্কেট, বেদার মার্কেট, তাজ সুপার মার্কেট, মাতবর মার্কেট, জাপান মার্কেট, হাজী মার্কেট, মসজিদ মার্কেট, ফরাজী মার্কেট, কবিরাজ সিটি সেন্টার, নুর শপিং কমপ্লেক্স, বঙ্গ মার্কেট, ছকিনা মার্কেট, দারুল হেরা মার্কেটসহ বাজারের পশ্চিম গলি খ্যাত দোকান পাটে প্রতিযোগিতার ঈদ বাজারে হরেক রকম ডেকোরেশন আর আলোক সজ্জায় ভরপুর করে তুলেছে স্ব স্ব দোকানদাররা। যেন ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে দোকানীরা। এমনকি ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে ক্রেতাদের পছন্দ মোতাবেক মালামাল তুলতেও পিছপা হয়নি দোকানদাররা। অন্যদিকে একই ধরণের মালামাল একেক দোকানে একের ধরণের দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছে দূর-দূরান্তের ক্রেতাগণ। অপরদিকে কিছু কিছু মার্কেটে ক্রেতাদের কাছ থেকে ঈদ কেনাকাটার সময় চড়া দাম নিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেন ক্রেতারা। আবার ঈদগাঁওর মার্কেটগুলোর পাশাপাশি ফুটপাত ব্যবসাও ফের জমে উঠতে দেখা যায়। আবার নানা ডিজাইনের কাপড় অল্প দামে বিক্রি হওয়ায় অসহায় ক্রেতাগণ ফুটপাতের দোকানমুখী হচ্ছে। তবে একাধিক ব্যবসায়ীর মতে, বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জ থেকে ঈদ কেনাকাটায় ছুটে আসছে ক্রেতাগণ। এতে আমরা আনন্দিত। তবুও এখনো পর্যন্ত বিগত বছরের ন্যায় মার্কেটে তেমন ক্রেতার সমাগম ঘটেনি বলেও জানান অনেকে। আবার বিভিন্ন এলাকার কয়েক ক্রেতার সাথে এ প্রতিনিধির আলাপ হলে জানা যায়, তারা ঈদগাঁও বাজারের নানা মার্কেট ঘুরে পছন্দনীয় কাপড় ক্রয় করছে। তবে কিছু কিছু কাপড়ের দাম বেশি নিয়েছে বলে জানান। আইরিন নামের এক ছোট্ট শিশু আদো আদো কন্ঠে জানান, সে তার মা ও দাদীর সাথে ঈদের কেনাকাটা করতে ঈদ বাজারে এসেছে। সে এবারের ঈদ জামা হিসেবে টুকটুকে লাল একটি জামা কিনেছেন বলে আনন্দের সাথে জানায়।