মাওলানা মুহাম্মদ আলমগীর :
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের মাস মাহে রমজান আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য বিদায়ী উৎসব ঈদুর ফিতর সমাগত। ঈদুল ফিতরের সাব্দিক অর্থ হলো ঈদ মানে আনন্দ উৎসব, আর ফিতর মানে না খেয়ে থাকার পর খাবার গ্রহণ। তাকওয়ার গুণ তথা আত্বসংযম ও আত্বশুদ্বির জন্য নির্ধারিত কোর্স সমাপ্তির পর সমষ্টিক ভাবে মুসলিম মিল্লাত ও ব্যাক্তিগত ভাবে প্রতিটি মুসলমানের জন্য আত্বূশুদ্বি ও আত্বসংযমের মাধ্যমে তাকওয়ার গুন অর্জন করতে পেরেছে কিনা তা বিশ্লেষন ও আত্বসমালোচনার দিন ঈদুল ফিতর। আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এই দিনের নাম দিয়েছেন পুরস্কার বিতরণী উৎসব। হাদিস শরীফে আছে এই দিন আল্লাহ পাক ঈদের প্রভাতে সকল ফেরেস্তাকে প্রত্যেক শহরেরর অলিতে গলিতে প্রেরণ করেন। তাহার পথে পথে দন্ডায়মান হইয়া মধুরস্বরে সকলকে আহ্বান করেন। তাদের মধুর কন্ঠস্বর মানব ব্যতীত সকল সৃষ্টিই শুনিতে পায়। তাহারা বলেছে শোন হে নবীর উম্মেত পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নিকট চলো তোমাদের পাওনা অনেক পাবে এবং তিনি তোমাদের বড় বড় অপরাধ ক্ষমা করবে। অতঃপর ঈদের পবিত্র দিবসে সমগ্র রোজাদার গন ঈদগাহের দিকে যখন অগ্রসর হয় তখন আল্লাহ পাক ফেরেস্তাদেরকে ডেকে বলেন হে ফেরেস্তাগণ যে মজদুর সকল কর্তব্য যথাযথ পালন করিয়াছে তাহারা কি বদলা পাইতে পারে ? তখন ফেরেস্তারা আরজ করেন হে মাবুদ ও মালিক আমাদের মতে তাহাদের পুরো পুরি পাওনা প্রাপ্ত হোক। তখন আল্লাহতালা বলেন,তোমরা সকলে সাক্ষী থাক আমি তাহাদের রোজা ও তারাবীর বিনিময়ে আমার দয়া, সন্তুুষ্টি ও ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে তাহাদিগকে ক্ষমা করিলাম । আল্লাহ আরো বলেন হে আমার কৃতজ্ঞ বান্দাগণ তোমাদের মন ভরিায়া লও আমি আমার ইজ্জতের ও শ্রেষ্ট আসনের শপথ করে বলতেছি যে, এই ঈদের মহতি সভায় আমার সকাশে তোমরা যে সকল প্রার্থনা করিবে সকল বাসনা পুর্ন করিয়া দিব। এই জন্য জনাবে হযরত নবী করিম (সঃ) ঈদুল ফিতরের দিবসকে পুরস্কার বিতরণী উৎসব। মুলুত এই দিন আল্লাহ আমাদেরকে রোযার বিনিময়ে দান করিবেন এবং আমাদের যাবতীয় গুনাহ খাতাহ মাফ করিবেন। মুসলমানদেরকে বিশেষ নিয়ামত হিসাবে আল্লাহ পাক যে কয়েকটি রজনী দান করেছেন ঈদুলফিতর পূর্ব রাত্রে তার অন্যতম। পুরো একমাস প্রশিক্ষন কোর্স এ অংশ করে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও সনদের প্রত্যশায় বান্দাহ প্রভুর দরবারে দু’রাকাত শুকরানা নামাজ পড়ে, যাকে আমরা ঈদুল ফিতরের নামাজ নামে অভহিত করি। এই ঈদের নামাজ , উৎসবে ধনী গরীব, ফকির মিসকীন ও বড়ছোট সকলে যাতে শরীক হতে পারে সে জন্য ঈদের পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। এই সদকাতুল ফিতর আদায় করা না হলে রোজাদারদের রোজা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। সদকাতুল ফিতর ফিতর পূর্বে আদায় করা হলে গরীব জনগন ঈদের উৎসবে শরীক হতে পারবে তাই আল্লাহর নবী বলেছেন তোমরা রমজান মাস থাকতেই ফিত্রা আদায় কর। ঈদের জামাতে পার্শ্ববর্তী কয়েক এলাকার মানুষ একসাথে মিলেমিশে এক জামায়াত হয়ে নামাজ পড়ে। এত করে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাত্বিত্ব ও সাহনুভুতি সৃষ্টি হয়। মূলত মুসলমানদের মধ্যে একতা ও ভ্রাত্বিত্বের সম্পর্ক ও সম্বলিত এবাদতের অনুভুতি সৃষ্টি করাই ঈদের জামায়াতের মূল উদ্দেশ্য। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একেই ইমামের পিছনে এক জামায়াতে শরীক হয়ে আল্লাহর নিকট সিজদাহ হওয়া, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ও সংকির্ণ মানশিকতা পরিহার করে উদারতা, মানব প্রেম, সাহনুভূতি ও ভ্রাতিত্বের বন্দনে আবদ্ব হয় যে ঈদুল ফিতর আমাদেরকে শিক্ষা দেয়। অথচ ঈদের শিক্ষা আমরা ঈদগাতে রেখে আসি বাস্তব জীবনের সাথে ঈদের শিক্ষার মিল পাওয়া যায়না। দুঃখ হয় যখন দেখি ঈদের দিনে কেহ দামী দামী পোষাক পরে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের আয়োজনে ব্যস্ত, কেহ রাস্তায় রাস্তায়, বাড়ীতে বাড়ীতে ভিক্ষা করে বেড়ায়। চতুরদিকে দামী পোষাক ও নানান প্রকার বাহারী খাদ্যের প্রতিযোগীতার তীব্র বহরের কারণে কেহ কেহ নির্জনে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। বর্তমান ঈদের দিনে আমাদের দেশে সিনেমা, ভি.সি.আর, নাটক এবং নারী পুরুষের অবাধ ঢলাঢলি ঈদের দিনে উৎসবে পরিনত হয়েছে। নিৎসন্দেহ বলা যায় পুরো এক মাস মানুষ রোজা রেখে যে তাকওয়ার গুন অর্জন করেছে তা ঈদের দিনে বিজাতীয় সাংস্কৃতির খপ্পরে পড়ে নগ্ন শ্রোতে ভেসে যায়। তাই আমাদেরকে ঈদের হাকিকত বুঝে নবী করিম (সঃ) ও সাহবায়ে কেরামের জীবন থেকে শিক্ষা নিলে ঈদ আমাদের স্বার্থক হবে। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে হযরত নবী কমি (সঃ) ঈদের জামাতে যাওয়ার পথে একজন ছেলে দাড়িয়ে কান্নাকাটি করতেছে তা দেখে রাসুল (সঃ) প্রশ্ন করলেন বাবু তুমি কেন কাদঁছ ছেলে টি উত্তর দিলেন আমার বাবা, মা না থাকায় নতুন পোষাক কিনে নিতে পারিনি। তাই আমি ইদগাতে যেতে পারিনি এ কথা শুনে রাসুল (সঃ) ছেলেটিকে কুলে তুলে নিয়ে বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। এবং সমাদর করে কাপড় চোপড় কিনে গোসল করে দিয়ে ছেলেটিকে সাথে নিয়ে ঈদ করলেন। সমস্ত মানব মন্ডলী যখন ঈদের দিনে আনন্দ উৎসবে ব্যস্ত। এমতাবস্থায় হযরত আমিরুল-মোমেনীন ওমর ফারুক (রাঃ) নির্জনে বসে কান্না কাটি করতেছে সাহাবায়ে কেরামগণ তাকে জিজ্ঞেস করলেন আমিরুল-মোমেনীন আজতো খুশীর দিন আমরা সবাই আনন্দিত আর আপনি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ক্রন্দনরত ব্যাপার কি? আমীরুল মোমেনীন বললেন যদি তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে থাকে যে তাদের সিয়াম সাধনা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। তাহলে তারা আনন্দ-উল্লাশ করতে পারে আমার জানা নেই রমজানের সিয়াম সাধনা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কিনা।
মুলতঃ মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফার এই ঘটনা টি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। তিনি বেহেস্তের শুভ সংবাদ প্রাপ্ত (১০) দশ জনের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি যদি রমাজানের শেষে আনন্দিত না হয়ে ভীত শংকিত হয়ে কান্না কাটি করে থাকেন সেখানে আমরা কোথাকার ছার।
অতএব, ঈদ আমাদেরকে শিক্ষা দেয় সামাজিক জীবনে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা, মানুষের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়া আতœ সমালোচনা ও আত্ব বিশ্লেষন করা।
লেখক :
মসজিদের খতীব ও সেক্রেটারী,
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি,কক্সবাজার জেলা।