এস এম আরোজ ফারুক :
অনাঙ্কাখিত ঘটনা এড়াতে নেই বিশেষ কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা
দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে বাংলদেশের অর্থনীতি। সেই সাথে আস্থা হারাতে বসেছে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা। দেশের ব্যাংকগুলো সহ সরকারী-বেসরকারী গুররুত্বপূর্ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিনে দিনে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। এর প্রধান কারন হলো, এই সব প্রতিষ্ঠান গুলোর নিজস্ব কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ঢাকার অদুরে আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন গোটা জাতি। নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে গোটা দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের বেসরকারী নিরাপত্তা প্রদানকারী কোম্পানী গুলো থেকে ভাড়া করে নিরাপত্তা কর্মীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের অধিকাংশই অশিক্ষিত। বেশিরভাগই দেখা যায় অষ্টম শ্রেণীর নিচে পড়াশোনা। শুধু তাই নয় এই নিরাপত্তা কর্মীদের নেই কোন বৈধ প্রশিক্ষণ। নিরাপত্তা কি সেটা কি ভাবে দেওয়া দরকার তা তারা জানেই না।
সারা দেশের মতো একই অবস্থা কক্সবাজারের ব্যাংকগুলোতেও। দুঃখজনক বিষয় ঈদ মৌসুমেই জেলার ব্যাংকগুলোতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কক্সবাজার দেশের অন্যতম পর্যটন শহর হওয়ায় প্রায় সব ব্যাংক এর শাখাই এ জেলাতে রয়েছে কিন্তু আশুলিয়ার কমার্স ব্যাংক ডাকাতির মতো কোন অনাঙ্কাখিত ঘটনা ঘটলে তা প্রতিরোধের তেমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংক এর কর্মকর্তারা। গতকাল শহরের বিভিন্ন ব্যাংকগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে ব্যাংকগুলোর ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সচরাচর ঈদ মৌসুমে অর্থ সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত বা বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা জরুরী, সে ক্ষেত্রে জেলার ব্যাংকগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে সাধারণ অন্যান্য দিনের মতোই লেনদেন করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় কোন প্রকার কাজ ছাড়া অপ্রয়োজনে অনেকে ঘুরাফেরা করলেও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোন মাথা ব্যাথাই নেই। কোন ব্যাক্তির অপ্রয়োজনে ব্যাংক এ আসাটা অবশ্যই সন্দেহজন। এ বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হওয়া দরকার কর্তৃপক্ষের। আর মাত্র দুই জন নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে চলছে সবগুলো ব্যাংক এর পাহাড়ার কাজ। তাছড়াও জেলার সবগুলো ব্যাংকে সিসিটিভি বা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকলেও প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেই কিছু কিছু ক্যামেরাতে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তার অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। যে ক্যামেরাগুলো সচল রয়েছে সেগুলো দিয়ে চলছে নজরদারীর কাজ। তবে এক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যাংক নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে অকেজ ক্যামারাগুলো পরিবর্তন করছেন। ওয়ান ব্যাংক লি. কক্সবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার আরমানুল আজীম বলেন, আমাদের কিছু সিসিটিভি ক্যামেরাতে ত্রুটি দেখা দেওয়ার সাথে সাথে আমরা তা কর্তৃপক্ষতে জানিয়েছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরাতন ক্যামেরা পরিবর্তন করে নতুন লাগানো হবে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংক গুলোতে এমনিতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন এর উপর এখন ঈদ মৌসুম তাই সব ব্যাংকগুলোর উচিৎ অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. কক্সবাজার শাখা প্রধান আবদুল নাছির বলেন, আমাদের শাখায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। অপ্রয়োজনে কেই ব্যাংক এ প্রবেশ করলে তাকে জবাবদিহি করতে হয় এবং এসব দেখাশোনা করার জন্য আমাদের আলাদা অফিসার রয়েছে যেন কেউ অহেতুক ব্যাংক প্রবেশ করে কোন ধরনের অনাঙ্কাখিত ঘটনা ঘটাতে না পারে। এতে করে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চত হয় এবং দুর্বৃত্তরা ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করতে ব্যার্থ হয়। এধরনের ব্যবস্থা সব ব্যাংকগুলোতে করা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে, ব্যাংকের সব শাখা ও ভল্টের নিরাপত্তা জোরদার করতে আবারও নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়। এতে একগুচ্ছ সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, যাতে ব্যাংকের সব শাখায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, চুরি প্রতিরোধক অ্যালার্ম ও অটো অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংক শাখার প্রবেশ পথে, ভেতরে ও বাইরের চারপাশে এবং সব আইটি রুমে সিসিটিভি বা আইপি ক্যামেরা বা স্পাই ক্যামেরা রাখতে হবে, যেগুলো ব্যাংকের সেন্ট্রাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এসব সিসিটিভি বা অন্যান্য ক্যামেরা যেন সার্বক্ষণিক সচল থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া ব্যাংকের সব শাখায় পর্যায়ক্রমে অ্যান্টি থেফট অ্যালার্ম স্থাপন করতে হবে। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর ভল্ট স্পেস বিশেষভাবে সুরক্ষিত করতে মেঝে ও ছাদসহ ভল্টের চারপাশের দেয়ালের অবকাঠামো নিরাপত্তার বিষয়টি পুর প্রকৌশলী কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। অন্যান্য ব্যাংকের ক্ষেত্রে তাদের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী হবে। ব্যাংকের ভল্টে সার্বক্ষণিক সিকিউরিটি অ্যালার্মের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ভল্টের ভেতরে অটোমেটেড ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্থাপনেরও নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জেলার বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এর দেয়া নির্দেশ অনুয়ায়ী সব ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।