একই সঙ্গে বিরোধী দল ও সরকারে থাকায় সমালোচনা আছে শুরু থেকেই। এ সমালোচনা এড়াতে কয়েক দফা তিনি ঘোষণা দিয়েছেন মন্ত্রিসভা থেকে সরে আসার। কিন্তু এখন উল্টো অবস্থানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে চিঠি দিয়ে তিনি দলের অন্তত দুইজন নেতাকে মন্ত্রিসভায় নেয়ার অনুরোধ করেছেন। যদিও এ চিঠির কোন জবাব পাননি তিনি। দলীয় সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় রদবদল হলেও জাতীয় পার্টির কাউকে নতুন করে মন্ত্রিসভায় না নেয়ায় অনেকটা হতাশ হয়েছেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদ। এ নিয়ে তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মন্ত্রী করতে সম্প্রতি সরকারের শীর্ষপর্যায়ে চিঠি পাঠান এরশাদ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের জন্য জাতীয় পার্টির মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসা দরকার। অথচ নতুন দুজনকে মন্ত্রী করার জন্য চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে এ চিঠির কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। যদিও চিঠি দেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় জানিয়েছেন, এ ধরনের কোন চিঠি দেয়া হয়নি। মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে প্রেসিডিয়ামের সভায়। এ পর্যন্ত কোন সভায় এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়নি।
বর্তমানে মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিনজন প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা হলেন, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। সূত্র জানায়, চলতি মাসে মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল হয়েছে। দপ্তর বদলেছে দুইজন মন্ত্রীর। মন্ত্রিসভায় নতুন তিন মুখ যোগ হয়েছে। সামনে আরও রদবদল হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। যে কারণে জাতীয় পার্টির আরও দুইজনকে মন্ত্রিসভায় দেখতে চান এরশাদ। এজন্য সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি চলছে।
এর আগে মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির থাকা না থাকা নিয়ে ঘনঘন অবস্থান বদলিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বছরখানেক আগে মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির পদত্যাগ করবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এই ইস্যুতে বিভিন্ন সভায় তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। গত বছরের মাঝামাঝি এবং দুই মাস আগেও এরশাদ বলেছিলেন সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখতে হলে জাপাকে মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তখন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, আগে এরশাদেরই উচিত বিশেষ দূতের পদ ছাড়া। একই দাবি জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুরও। এরপর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব থেকে এরশাদকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে কাজী ফিরোজ রশীদও জোর দাবি জানিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে এরশাদ চেয়েছিলেন জাপা দলীয় মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসুক। আর তখন রওশন এরশাদের অবস্থান ছিল বিপরীত। তিনি চেয়েছিলেন দলের নেতাদের মন্ত্রিসভায় রাখতে।
কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ মত পরিবর্তন করেন এরশাদ। নতুন দুজনকে মন্ত্রী করার জন্য চিঠি দিয়ে সরকারকে অনুরোধ করেন। অন্যদিকে এরশাদের নতুন অবস্থানের কারণে সিদ্ধান্ত বদলান রওশন। মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের জন্য তৎপরতা শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে গত ৫ই জুলাই রওশন দলীয় এমপিদের নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের দুই সিনিয়র নেতার সঙ্গে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দুই জ্যেষ্ঠ নেতাকে রওশন মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে কথা বলেন বৈঠকে। পদত্যাগের ফলে জাতীয় পার্টি ও সরকার উভয়ই বিব্রতকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগের দু’নেতা জানান, এই পর্যায়ে এসে মন্ত্রিসভা থেকে জাপার বের হয়ে যাওয়াটা রাজনৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে হয় না। শুরুতে বিতর্ক থাকলে এত দিনে বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আর প্রধানমন্ত্রী নিজেও নাকি এখন চাচ্ছেন না জাপা এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে যাক। ফলে বিষয়টি নিয়ে আরও চিন্তা ভাবনা করতে তারা রওশনকে অনুরোধ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।
এদিকে মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের বারবার অবস্থান পরিবর্তন ও সময়ে সময়ে একেক ধরনের বক্তব্য দেয়ায় বিব্রত দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা মনে করছেন সার্বিক বিষয়ে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার না হলে দলের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।