মোটা অঙ্কের বিল ও প্রতিবন্ধী হওয়ার ভয়ে ট্রাকচালক ফজলুল হক ২৫ দিন বয়সী শিশু সন্তানকে ৭তলা থেকে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে এ কথা স্বীকার করেছে ট্রাকচালক ফজলুল হক। গতকাল এ ঘটনায় মৃত শিশুটির নানা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত ফজলুল হক মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার ইসলামপুর গ্রামের মৃত চান মিয়ার পুত্র। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান জানান, রোববার রাতে শিশুটি হাসপাতালের ৭১৬নং বেড়ে মায়ের কাছেই ছিল। তখন সঙ্গে ফুফু জবেদা খাতুন ও শিশুটির পিতা ফজলুল হকও ছিল। রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়ার পরে সোমবার ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে শিশুটির প্রতিবন্ধী মা দেখে তার শিশুপুত্র আবদুল্লাহ নেই। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কান্না জুড়ে দেয় স্বজনরা। পরে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ও নিরাপত্তা কর্মীরা শিশুটিকে চার তলার কার্নিশে (দুটি ছাদের বর্ধিত অংশ) মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে। তবে ৭তলা থেকে চার তলার কার্নিশে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় বিষয়টি সন্দেহ হলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জন্য নুরুন্নাহারের স্বামী ফজলুল হক ও ফুফু জবেদা খাতুনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রথমে পুলিশ জবেদাকে সন্দেহ করে। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক কাহিনী। যা শুনলে গা শিওরে উঠে। অকপটে নিজ সন্তান হত্যার কাহিনী স্বীকার করেন ফজলুল হক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ট্রাকচালক ফজলুল হক নিজ শিশু সন্তানকে ৭ তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, রোববারই হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র দেয়া হয় তাদের। ধরিয়ে দেয়া হয় মোটা অংকের বিল। যা দেখে হতভম্ভ হয়ে যায় সে। তবে এত টাকা যোগাড় করতে ব্যর্থ হওয়ায় এলাকার বিভিন্ন জনের সঙ্গে পরামর্শ করে কিভাবে কি করা যায়। এদিকে স্ত্রী বাক-প্রতিবন্ধী অন্যদিকে মাথায় দুঃশ্চিন্তা ঢুকেছে শিশুটিও যদি প্রতিবন্ধী হয়। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, টাকা জোগাড় করতে না পারায় বিভিন্ন লোকজনের কুপরামর্শ শুনে সন্তানকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে সে। ওই রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ভোরে বাচ্চাটিকে কাপড়ে মুড়িয়ে ৭তলা থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় সে। পরে কাপড়ে মোড়া বাচ্চাটি প্রথমে ৫তলার কার্নিশে লেগে চারতলার কার্নিশে (দুটি ছাদের বর্ধিত অংশ) আটকে থাকে। আবার দাঁড়িয়ে দেখে বাচ্চাটি নড়াচড়া করে কিনা। জিজ্ঞাসাবাদে ফজলু পুলিশকে আরও জানিয়েছে, ভোরে ফুফু শাশুড়ি জেগে উঠে বাচ্চা না দেখে চেঁচামেচি শুরু করে। পরে সকলেই খোঁজাখুঁজি শুরু করে। তবে চালাকি করে ফজলু সন্তান হত্যার দায় ফুফু শাশুড়ি জবেদা খাতুনের ওপর চাপাতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত ফজলুল হককে আজ (বুধবার) আদালতে পাঠিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট্রের সামনে সন্তান হত্যার জবানবন্দি নেয়া হবে। তবে যারা তাকে শিশু হত্যার প্ররোচনা জুগিয়েছে তাদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এদিকে মামলার বাদী মৃত শিশুর নানা নুরুল ইসলাম জানান, প্রায় তিন বছর আগে ফজলুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয় নুরুন্নাহারের (২৫)। মেয়ে বাক-প্রতিবন্ধী হওয়ায় ফজলুকে একটি ট্রাক কিনে দিই। থাকতেও দিই সাভারের জামসিং এলাকার নিজ বাড়িতেই। আল আমীন নামে তাদের এক বছর বয়সের আরেকটি সন্তান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চারদিন বয়সী শিশু আবদুল্লাহকে নিয়ে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালেই এসেছিলেন নুরুন্নাহার। রক্তে জীবাণুর সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আবদুল্লাহর চিকিৎসা চলে হাসপাতালের নবজাতক শিশু পরিচর্যা ইউনিটে। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু আবদুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে সাভারে। তবে নিজ সন্তানকে হত্যার স্বীকারোক্তি শুনে যে কারোই গা শিউরে উঠবে।
মোবাইল : ০১৮১৯-০৩৬৪৬০, ০১৭১২-২১৫৫৪৭. ই-মেইল : coxsbazaralo@gmail.com