ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে
কক্সবাজার আলো :
টানা ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভাসছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম। শনিবার রাত থেকে উপজেলার আঠার ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার এসব গ্রামের অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থার কারনে উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার রূপ নিয়েছে। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। গ্রামীণ এলাকার সড়ক যোগাযোগ ভেঙ্গে পড়েছে। মাতামুহুরী নদীর প্রবল স্রোতে উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে নদীর পানি। পৌরশহর রক্ষাবাঁধের বড় একটি অংশ পানির চাপে শহররক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের নামার কোচপাড়া, ভাঙ্গারমুখ, এলাকার কমপক্ষে শতাধিক বসতবাড়ি মুহুর্তে পানিতে তলিয়ে গেছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম ফোরকান।
বানের পানিতে আটকা পড়ে উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের একব্যক্তি ও পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরীস্থ কলেরা হাসপাতাল এলাকায় বানের পানিতে ডুবে এক শিশু মারা গেছে।
উপজেলার বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত জুনমাসের বন্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে তার ইউনিয়নের প্রায় এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে ইউনিয়নের ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদ, গোবিন্দপুর, শান্তিবাজার এলাকার বেশির ভাগ বসতবাড়ি ডুবে গেছে পানিতে। এলাকার গ্রাম গুলোতে এখন রীতিমত জোয়ার-ভাটা চলছে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় নীচু এলাকার বসতবাড়ি ও শতশত একর জমির ক্ষেতের ফসল তলিয়ে রয়েছে পানির নীচে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে ছিকলঘাট-কাকারা, মাঝেরপাড়ি-মানিকপুর সড়কে। তার ইউনিয়নের উত্তরপাড়া এলাকায় পানিতে আটকা পড়ে স্থানীয় মৃত মোহাম্মদ আবদুল্লাহ পন্ডিতের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৫৫) নামের একব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মানিক জানান, মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তার ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া, রোস্তমআলী চৌধুরী পাড়ার শতশত পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। যেকোন সময় তার ইউনিয়নের অসংখ্য বসতবাড়ি নদীতে তলিয়ে যেতে পারে।
একই সাথে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীর এলাকায় বিদ্যুত বিভাগের ১লাখ ৩২হাজার ভোল্ডের একটি টাওয়ার। কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন চৌধুরৗ জানান, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক, ছোটভেওলা ও বরণ্যারচর এলাকা ডুবে অধিকাংশ গ্রামের বসতি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। চিরিংগা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, জানান, পানি উন্নয়ন বোডের বেড়িবাধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে তাদের ইউনিয়নের প্রায় এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তার ইউনিয়নের চরনদ্বীপ এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিতে ভাসছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এসব পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছেনা। বানের পানিতে ভেসে গেছে উপজেলার চিংড়িজোনের কয়েকশত চিংড়ি প্রকল্পের অন্তত শত কোটি টাকার মাছ। হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমদ বাবর জানান, তার ইউনিয়নের একাধিক এলাকা এখনো গত বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ইউনিয়নের সড়ক ও ফসল খাতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারনে উপজেলার দুই শতাধিক গ্রামের বসতবাড়ি কয়েক ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বেশির ভাগ এলাকায় টিউবওয়েল গুলো পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। পানিতে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ি প্রকল্পের শত কোটি টাকার মাছ। পানিতে তলিয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ও বীজতলা।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারনে উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে বন্যা প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি স্থানে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে নদীর পানি। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। তিনি বলেন, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির চিত্র ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।