নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :
কক্সবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানিতে ডুবে ও পাহাড় ধ্বসে মারা গেছে ১৩ জন। এর মধ্যে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় মারা গেছে ৫জন এবং পানিতে ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে ও পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে ৮ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনও কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌছেনি।
রামুতে ভয়াবহ বন্যায় নিহত ৩ ॥
রামু থেকে আমাদের রিপোর্টার সোয়েব সাঈদ জানান- রামুতে ভয়াবহ বন্যায় ২ শিশু সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বাঁকখালী নদীতে পড়ে নিখোঁজ রয়েছে আরো এক শিশু। এরমধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ভেসে যুবক নুরুল ইসলাম, খালার বাড়িতে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে শিশু সানম এবং নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথে মায়ের হাত ফসকে পানিতে পড়ে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে দুইদিন বয়সের এক নবজাতক। এছাড়া নদীরপাড়ে খেলার করার সময় বাঁকখালী নদীতে পড়ে নিখোঁজ রয়েছে শিশু আবছার।
গতকাল সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল সাতটায় রামু উপজেলার দক্ষিন মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ঘাটপাড়া এলাকায় বাড়িতে খেলা করার সময় উঠোনে থাকা ৬ ফুট গভীর পানিতে পড়ে যান শিশু সানম। এসময় পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করলেও বাঁচাতে পারেননি।
জানা গেছে, শিশুপুত্র সানম কক্সবাজার সদর উপজেলার কুতুবদিয়াপাড়া এলাকার আতিকুর রহমানের ছেলে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কয়েকদিন
আগে ওই এলাকার আবদুল মালেকের বাড়িতে খালার কাছে বেড়াতে আসে। কিন্তু বন্যার পানিতে আটকে পড়ায় মা সহ বাড়িতে ফিরতে পারছিলেন না।
আগেরদিন রবিবার (২৬ জুলাই) রাজারকুল ইউনিয়নের চৌকিদারপাড়া এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে প্রাণ হারান যুবক নুরুল ইসলাম। জানা গেছে, ওইদিন সন্ধ্যায় মাছ ধরার জন্য পার্শ্ববর্তী বিলে জাল বসাতে যান নুরুল ইসলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে প্রবল স্রোতে ভেসে যান তিনি। পরে অনেক খোঁজাখুজি করেও ওইদিন তার সন্ধান মিলেনি। গতকাল সোমবার (২৭ জুলাই) বিকাল সাড়ে চারটায় তার মৃতদেহের সন্ধান পায় স্থানীয়রা।
রামুতে বন্যার পানিতে ভেসে গেলো ১৩ দিন বয়সের এক নবজাতক। রোববার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে উপজেলার কচ্ছপিয়ার ইউনিয়নের বড় জামছড়িতে এই মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটে। ভেসে যাওয়া নবজাতক ওই এলাকার আজিজুল হক বান্ডুর সন্তান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছিল আজিজুল বান্ডুর পরিবার। বন্যার পানি ভেঙ্গে চলার পথে স্রোতে ধাক্কায় স্ত্রীর হাত ফসকে নবজাতকটি পানিতে পড়ে যায়। পড়ার সাথে সাথেই স্রোতে র টানে ভেসে যায় ওই নবজাতক। অনেক চেষ্টা করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আজিজুল হকের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রামু উপজেলার চাকমারকুলে বাঁকখালী নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে ২ বছরের শিশু আবছারুল ইসলাম। গতকাল সোমবার (২৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চাকমারকুল ইউনিয়নের মিস্ত্রি পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভেসে যাওয়া শিশুটি ওই গ্রামের আব্দুল খালেক এর ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীর পাড়ে বন্ধুদের সাথে খেলা করার সময় বাকখাঁলী নদীতে পড়ে যায় শিশু আবছার। এরপর থেকে স্থানীয়রা নদীতে খোজাঁখোঁজি করেও শিশুটির সন্ধান পায়নি। স্থানীয়দের ধারনা নদীর প্রবল স্রোতে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে। রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানান, শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
চকরিয়ায় ৩ দিনে ৪ জনের মৃত্যু॥
চকরিয়া থেকে আমাদের রিপোর্টার ছোটন কান্তি নাথ জানান- কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এখনো উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তিনদিন ধরে বানের পানিতে দুর্বিষহ অবস্থায় থাকা শিশু, নারীসহ এসব মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকটে ভূগছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সামান্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও বৃহৎ পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই দফায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৫ মেট্টিক টন চাল। কিন্তু রান্না-বান্না করার মতো অবস্থা না থাকায় সেই চাল নিয়েও বেকায়দায় পড়েছে বন্যাদুর্গত মানুষগুলো। এতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন বন্যাদুর্গত মানুষগুলো।
এদিকে উপজেলাসহ সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম আঞ্চলিক, অভ্যন্তরীণ ও গ্রামীণ সড়কগুলো কয়েকফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় একেবারে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। এতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন অনেক মানুষ জরুরী প্রয়োজনে উপজেলা সদরেও যেতে পারছে না। গতকাল সোমবার বিকেলেও চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের চকরিয়ার বাটাখালী ব্রিজ পয়েন্টেও ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সড়কটি ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে বন্ধ রয়েছে। তবে চাঁদের গাড়িযোগে জরুরী প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ কয়েকগুন ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। এছাড়াও তিনদিন ধরে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বানভাসি মানুষ চরম কষ্টে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিনদিনে চকরিয়ায় শিশুসহ চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও মাতামুহুরী নদীতে গত দুইদিনে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানির সাথে ভেসে আসা দুটি লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় জনতা। এই লাশ দুটির একটি ইয়াংছার উপজাতি মহিলার এবং অপরটি লামা উপজেলার এক বাসিন্দার। তবে তাদের সঠিক নাম-ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সুরাজপুর-মানিকপুর ও কাকারা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা তা নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, টানা চারদিনের প্রবল বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে এখনো উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভার অন্তত শতাধিক গ্রামের অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিটি বাড়ি ৭-৮ ফুট পর্যন্ত ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে বিশুদ্ধ পানির একমাত্র মাধ্যম টিউবওয়েলগুলো। এতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকটে রয়েছে মানুষগুলো। বানভাসি এসব মানুষ কয়েকদিন ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকলেও সরকারীভাবে তাদের সহায়তায় তেমন কোন বরাদ্দ মেলেনি। এতে চরম দুর্বিষহ অবস্থায় জীবন-যাপন করছে প্রায় দুইলাখ মানুষ। ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধসহ গ্রামীণ অবকাঠামো। তিনদিন ধরে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্মরণকালের ভয়াবহ এবারের বন্যায় বলতে গেলে মানবিক বিপর্যয়ে রয়েছে চকরিয়ার মানুষ।
চকরিয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিক বলেন, ‘পর পর দুটি ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত সরকার এবং সমাজের বিত্তশালী মানুষদের। তা না হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে পতিত হবে উপজেলার মানুষ।’
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, টানা বর্ষণ ও মাতামুহুরীর ঢলের পানিতে তলিয়ে রয়েছে এখনো হাজারো পরিবার। স্রোতের টানে বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকশত কাঁচা ঘরবাড়ি। গতকাল দুপুরে মাতামুহুরী নদীতে ভেসে আসা বান্দরবানের লামা উপজেলার এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। পরে লামা থেকে স্বজনেরা এসে তার লাশ নিয়ে যায়।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মনছুর জানান, তার ইউনিয়নের পাহাড়তলী গ্রাম ছাড়া সবকটি ওয়ার্ডের অন্তত ৩০টি গ্রামের হাজারো বসতবাড়ি ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ইউনিয়নের কয়েকটি বেড়িবাঁধ ও মাতামুহুরী নদীর গাইড ওয়াল ধ্বসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্রোতের টানে ভেসে গেছে অসংখ্য বসতবাড়ি।
একইভাবে উপজেলার ডুলাহাজারা, খুটাখালী, উপকূলীয় সাহারবিল, ভেওলা মানিকচর, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া ও বদরখালী ইউনিয়নের হাজার হাজার বসতবাড়ি কয়েকফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে এখনো। এসব ইউনিয়নের রক্ষাকবচ বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে গিয়ে ব্যাপক এলাকা বানের পানিতে ভাসছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলাম দৈনিক কক্সবাজারকে জানান, গতকাল সারাদিন বৃষ্টিপাত কম থাকায় কয়েকটা ইউনিয়ন থেকে বন্যার নামতে শুরু করলেও এখনো বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমকে সাথে নিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা বানভাসি মানুষগুলোর পাশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন করে আরো ২৫টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিলির জন্য।
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, বন্যাদূর্গত মানুষগুলোর সহায়তায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তদারক সেল খোলা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে নিরাপদেও সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানিবন্দি লোকজনকে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঈদগাঁওতে চলাচলের অনুপযোগী রাস্তাঘাট॥
সদর উপজেলা প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন জানান- কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও জমে থাকা বৃষ্টির পানি আস্তে আস্তে নেমে যেতে শুরু করেছে। গতকাল ২৭ জুলাই সকাল থেকে বাজারের ডিসি সড়কসহ অলিগলিসমুহে ৩/৪ দিন ধরে প্রবাহমান এবং ৩-৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকা সড়ক উপ-সড়ক ও নি¤œাঞ্চল থেকে বন্যার পানি মোটামোটিভাবে সরে গেছে। বর্তমানে বানবাসী মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে সদরের নি¤œাঞ্চলসমুহের বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়াতে চুলোয় আগুন জ্বালতে না পারায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক উপ-সড়কসমুহ শ্রীঘ্রই মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যথায় যান ও জনচলাচলে মারাতœক সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে বন্যাকবলিতদের মাঝে পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ায় তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা গ্রহণের সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
কুতুবদিয়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত॥
কুতুবদিয়া থেকে আমাদের প্রতিনিধি লিটন কুতুবী জানান- গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে কুতুবদিয়ার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও শত শত মাছ চাষের পুকুর। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,বড়ঘোপ ইউনিয়নের আজম কলোনী, দক্ষিণ অমজাখালী, লাল ফকির পাড়া, মিয়ার পড়া, মগডেইল, মুরালিয়া এলাকা সমূহ কোমর পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকায় অনেকের ঘর বাড়ি হাটু পানিতে ডুবে আছে আবার অনেকের ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। না ঘুমিয়ে রাত যাপন করতে হচ্ছে জানিয়েছেন অনেকে। গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি আরো কয়েকদিন দীর্ঘ হলে বড়ঘোপ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই তলিয়ে গেছে পানিতে।
লেমশীখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু ইউছুপ জানান, বিদ্যালয়ের দু’টি শ্রেণি কক্ষ পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে উত্তরণ বিদ্যানিকেতনও। আর ছাত্র/ছাত্রীদের বসতবাড়ি ও চলাচলের রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছেনা।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম. নুরুল বশর চৌধূরী বলেন, সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিজ নিজ প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মমিনুর রশিদ প্লাবিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানান।
পেকুয়ায় বেড়ি বাঁধে ভাঙ্গন॥
আমাদের পেকুয়া প্রতিনিধি নাজিম উদ্দিন জানান- পেকুয়ায় সাগরের পানিতে ফের প্লাবিত হয়েছে লোকালয়। গত এক মাসের ব্যবধানে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ৬৪/২বি ফোল্ডারের সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা বাগগুজারা পয়েন্টে পৃথক দুটি ভাঙ্গন অংশ দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে করে উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সদর ইউনিয়নের গ্রামীন অবকাঠামো লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। হাজার হাজার বসতবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে। আমন ফসলের বীজ তলা, মৎস্য ঘের, পুকুর, ব্যবসা প্রতিষ্টানসহ গাছ গাছালি পানির তোড়ে ভেসে গেছে। গত ৩দিন ধরে ২য় দফায় বন্যায় এ ইউনিয়নের প্রায় ৫০হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হবে বলে দায়িত্বশীল সুত্র নিশ্চিত করেছেন। এদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে বেড়িবাঁধের একই অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের মধ্যে বেড়িবাঁধ সংস্কার নিয়ে ক্ষোভ দানা বেধেঁছে।
লামায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ॥
আমাদের লামা প্রতিনিধি জানান- লামা উপজেলায় টানা তিন দিনের ভয়াবহ বন্যার পানি কমলেও ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে তেমন কাউকে দেখা যায়নি। লামা বাজারের পানি সরে গেলেও আশেপাশের নি¤œাঞ্চলের মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে ২৫ হাজার মানুষ। উপজেলা সদরের সাথে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চার দিন ধরে।
২৫ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত টানা তিন দিনের স্থিত বন্যায় লামা উপজেলায় প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। তিন শতাধিক ঘরবাড়ি পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ পিলার পড়ে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ব্রিজ, কালভাট, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। এক মাসে পর পর দু’বার বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে লামা বাজারের ব্যবসায়ীরা। সরকারী ও বেসরকারী অফিস, আদালত, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা বন্যার কারণে অবকাঠামোর চরম ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন যায়গায় রাস্তার উপর পাহাড় ধষের কারণে লামা সদরের সাথে এখনো যাতায়ত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। পাশা পাশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ৪ দিন ধরে।
লামা পৌরসভার মেয়র আমির হোসেন ও লামা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ জাহিদ আকতার পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি ও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে পানি বন্দিদের মাঝে শুকনা খাবার বিলি করা হয়।