ছৈয়দুল আমিন চৌধুরী, টেকনাফ :
সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে গত কয়েকদিনে টানা ভারীবর্ষণে জন-জীবন ধমকে গেছে। ভারী বর্ষনে পাহাড় ধ্বস ও পাহাড়ী ঢলের পানি এবং নাফ নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফের প্রধান সড়কের একাধিক স্থানে রাস্তার উপর দিয়ে পানি চলাচল করছে। সরেজমিন পরির্দশনে দেখা গেছে গতকাল সকাল থেকে জোয়ারের পানি কমে যাওয়া পর্যন্ত প্রধান সড়কের উপর দিয়ে পানি চলাচল করছিল। এতে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। এদিকে পাহাড়ী ঢল ও টানা বর্ষনের পানিতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বসত-বাড়ি, গ্রামিণ জনপদ, মৎস্য খামার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে জন-জীবন বিপর্যস্থ হয়ে উঠেছে। জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য সর্তকতা জারী করেছেন। অবিলম্বে সরকারী উদ্যোগে পদক্ষেপ না নিলে রোগ-ব্যাধির সংক্রামনসহ পরিস্থিতি মারাত্বক আকার ধারন করতে পারে।
সরেজমিনে উপজেলার উপকূলের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ শাহপরীরদ্বীপ ও সাবরাং ইউনিয়নের মানবিক বিপর্যয়ে করুণ দশার সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকার জনসাধারণ কোন প্রকারে প্রতিবেশী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান জানান- প্রবল ঝড়ো বাতাসে ৮/১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং জোয়ারের পানিতে ঘোলার পাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝের পাড়ার প্রায় দু’শতাধিক বসত-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণকে পাশ্ববর্তী উঁচু গ্রামে আশ্রয় নিয়ে রাত যাপন করছে। এখানে বলতে গেলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
টেকনাফ পৌর এলাকার কলেজ পাড়া, জালিয়াপাড়ায় পানিতে প্রাইমারী স্কুল ও রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। অলিয়াবাদের ফকিরার মুড়ায় পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানিতে কাঁচা ঘর-বাড়ির ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় টেকনাফের ফকিরা মুড়া পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। বৃহত্তর নাইট্যংপাড়ায় পাহাড়ী ঢলে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ এবং স্থানীয় গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোজাহীদ উদ্দিন জানান- উপজেলা প্রশাসন মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। এদিকে সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ডেইলপাড়ায় খলিলুর রহমানের পুত্র ইউছুপ জালাল বাহাদুর সরকারী কালভার্ট ও ড্রেন বন্ধ করে দেওয়াল নির্মাণ করায় ২শতাধিক পরিবারের পুরো গ্রাম পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এছাড়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোদারবিল,হাবিরছড়া,মিঠাপানির ছড়ায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া এবং পাহাড়ীঢলে গ্রামীণ জনপদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
অপরদিকে হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়ার জালিয়ারদ্বীপ, জাদীমুরা, নয়াপাড়া, মোচনীপাড়া, রঙ্গিখালী লামারপাড়া,উলুচামরী কোনারপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নাটমোরাপাড়া, জালিয়াপাড়া, ফুলের ডেইল, সুলিশ পাড়া, হোয়াব্রাং, পশ্চিম সিকদারপাড়া,পূর্ব পানখালী, আলী আকবর পাড়া, মৌলভী বাজার, লামারপাড়ায় ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে বসত-বাড়ি, মৎস্যঘের এবং রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে এসব এলাকার মাছের প্রজেক্ট গুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হ্নীলা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে অত্র ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, মৎস্যঘের ও বসত-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং ভূমি ধ্বসে প্রাণহানি এড়াতে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানান- হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, নয়াবাজার, রইক্ষ্যং, উলুবনিয়া ও উনচিপ্রাং এলাকায় পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানিতে ৮০/৯০ ভাগ মৎস্যঘের ভেসে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
উপকূলীয় বাহারছড়ায় ৫নং হলবনিয়া গ্রামে সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় একটি বড় শিশু গাছ মাদ্রাসায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া পরিকল্পিত নালা না থাকায় পাহাড়ী ঢলে ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে খালের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মৌঃ হাবিব উল্লাহ জানান-এখানে তেমন ক্ষতি না হলেও প্রচারনা চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
৬নং সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৯নং দক্ষিণ পাড়ায় টর্ণেডোর আঘাতে ১০টি বাড়ির মধ্যে ৫বাড়ি নিশ্চিহ্ন এবং অপর ৫টি বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে সেন্টমার্টিনের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান।
এছাড়া হ্নীলা রঙ্গিখালী মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল সংলগ্ন কক্সবাজার-টেকনাফের প্রধান সড়ক ডুবে গেছে, পূর্ব পানখালীর এবং হোয়াব্রাংয়ের কালভার্ট ধ্বসে যাওয়ায় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ধারনা করা হচ্ছে পুরো উপজেলায় কোটি কোটি টাকার গ্রামীণ জনপদ, ব্রীজ কালভার্ট, মৎস্যঘের ,বসত-বাড়ির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের নির্দেশে এক বার্তায় পুরো উপজেলায় মাইকিং করে ভূমি ধ্বস ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে জানমাল রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এই ধরনের দূর্যোগপূর্ণ পরিবেশ অব্যাহত থাকায় জনসাধারণের মধ্যে আতংক বিরাজ করছ। সীমান্ত জনপদ টেকনাফে গত কয়েকদিনের টানা ভারীবর্ষণে জন-জীবন ব্যাহত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ী ঢল ও টানা বর্ষনে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বসত-বাড়ি, সড়ক, মৎস্যঘের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে ব্যাপক ক্ষতি সাধন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য সর্তকতা জারী করেছেন। অবিলম্বে সরকারী উদ্যোগে পদক্ষেপ না নিলে রোগ-ব্যাধির সংক্রমনসহ পরিস্থিতি মারাতœক আকার ধারন করতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করেন।