ছৈয়দ আলম :
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসছে বানের স্রোতের মত। সেই ইয়াবা ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চাঁদ রাতে পাচার করার জন্য মওজুদ করে রেখেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। টেকনাফ থেকে জেলার বাইরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধ করে চলে যাওয়ার সময় অভিনব কৌশল আবিস্কার করে ইয়াবা চালান কিভাবে পাচার করা যায়, তা নিয়ে ইয়াবার গডফাদারেরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ঈদের বাড়তি খরচ পোষাতে গিয়ে ইয়াবা পাচারকে ওরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে এখন বেছে নিয়েছে। আর সেই ইয়াবা পাচার করার জন্য টেকনাফে অবস্থানরত জেলার বাইরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা চাঁদ রাতে চলে যাওয়ার সময় তাদের রিজার্ভ গাড়ী করে কৌশল অবলম্বন করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ইয়াবা পাচারের জন্য মওজুদ রেখেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন চেকপোস্ট ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মানুষের নিরাপত্তা ও যানজটমুক্ত করার কাজে ব্যস্ত থাকার সময় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও কাপড়-দোকানদাররা অভিনব পন্থায় ইয়াবা পাচার করে চলে যাওয়ার পায়তারা করেছে। সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীরদ্বীপের বদর মোকাম হতে উখিয়া পালংখালী পর্যন্ত প্রায় ৪৩ কিলোমিটার নাফনদীর সীমান্ত পয়েন্টে প্রায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ইয়াবা জব্ধ হচ্ছে ও টেকনাফ থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলাও রেকর্ড হচ্ছে। এ দিকে সীমান্ত প্রহরায় কাজে দায়িত্বে নিয়োজিত দায়িত্বশীলদের মনোবল ও ঘুষ বানিজ্যের কারনে সীমান্তের বহুল আলোচিত ইয়াবা মিয়ানমার থেকে বানের স্রোতের মত ঢুকছে প্রতিনিয়ত। টেকনাফ ৪২ বিজিবি ২০১৩-২০১৪ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার ইয়াবা আটক করে থাকে। এসব ইয়াবার সাথে জড়িত অধিকাংশ পাচারকারী এবং গডফাদারেরা নেপথ্যে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মূল্যের ইয়াবা পাচারের জন্য অপেক্ষা করছে। ইয়াবার কারখানা খ্যাত টেকনাফের শাহপরীরদ্ধীপ, হ্নীলা, লেদা, টেকনাফ সদরস্থ নাজির পাড়া, মৌলভী পাড়া, হাবিরপাড়া, পৌর এলাকার চৌধুরী পাড়া, শীলবনিয়া পাড়া, পুরাতন পল্লান পাড়া, নাইট্যং পাড়া, কুলাল পাড়া ও সাবরাং এর নয়াপাড়া হচ্ছে ইয়াবার জন্য প্রধান ঘাটি। এসব ঘাটিতে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা মওজুদ রয়েছে। পাচারের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবিস্কার করছে যাতে ইয়াবা সহজেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার হয়ে যেতে পারে। এ জন্য ইয়াবা গডফাদারেরা অপেক্ষা করছে ঈদকে সামনে রেখে। ঈদের ঝামেলায় কৌশল অবলম্বন করে এসব ইয়াবা পাচারের অপেক্ষায় রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, সাতকানিয়া লোহাগাড়ার অধিকাংশ ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা টেকনাফ থেকে দোকানপাট বন্ধ করে তাদের স্থায়ী বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার সময় কোটি কোটি টাকার মরননেশা ইয়াবা পাচার নিয়ে যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ মিয়ানমার কেন্দ্রিক কয়েকটি শক্তিশালী ইয়াবা চোরাচালানী ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত। এরা সিংহভাগ বর্তমান শাসকদলের নেতাকর্মী এবং গত ৫ বছরে এদের জীবন যাত্রামান অনেকটাই বদলে গেছে। এদের কোন ধরনের বৈধ ব্যবসা নেই, একমাত্র ইয়াবা ব্যবসাই হচ্ছে তাদের আয়ের উৎস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় হতে ৬৪ জনের বিরুদ্ধে ইয়াবার সাথে জড়িতদের নামের তালিকা আসলেও গোটি কয়েক জনকে ক্রসফাঁয়ার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেও বাকীরা অধরা রয়ে গেছে। আবার এ নামের তালিকা নিয়ে একশ্রেনীর সুবিধা হাসিল করে যাচ্ছে। আবার কতিপয় ইয়াবা ব্যবসায়ীর কারনে সড়ক পথে সীমান্ত এলাকার সচেতন লোকজন বিভিন্ন এজেন্সীর হাতে হয়রানীর শিকার হয়ে আসছে। বিভিন্ন ট্রাক মালিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চট্টগ্রামস্থ নতুন ব্রীজের উত্তরে বিভিন্ন সংস্থা পণ্যবোঝাই ট্রাক, বাস ও নোহা গাড়ী ইয়াবা তল্লাসীর নামে গণহারে চাঁদাবাজী ও হয়রানীর করে আসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফের এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিবছর ঢাকা ও চট্টগ্রাম-সাতকানিয়া লোহাগাড়ার বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা রিজার্ভ গাড়ী নিয়ে বাড়িতে ঈদ করতে চলে যাওয়ার কোটি কোটি টাকার ইয়াবা বহন করে নিয়ে যায়। তাদের চলে যাওয়ার সময় কঠোরভাবে চেকিং করলে এসব ইয়াবা অনায়াসে জব্ধ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ কক্সবাজার আলোকে জানান, ঈদে ঘরমূখী মানুষ যাতে নিরাপত্তায় যেতে পারে সেই জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ইয়াবা পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, টেকনাফ থেকে যাতে কোন ধরনের মাদক পাচার করতে না পারে সেই জন্য পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।