এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও :
কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁও ও রামু উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল ঈদগড়ের শ্রমবাজার রোহিঙ্গাদের দখলে, ফলে দেশীয় শ্রমিকরা চরমভাবে বেকাদায় পড়ে মাথায় হাত দেওয়ার উপক্রম শুরু হয়েছে।
জানা যায়, টানা ৩য় দফায় বন্যার পর ফের চাষাবাদ কাজকর্মকে পুঁজি করে রোহিঙ্গা শ্রমিকরা কৌশলে শ্রমবাজার দখলে নিতে ঈদগাঁও- ঈদগড় এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রনে রেখেছে। এছাড়াও নাফ-নদী দিয়ে পালিয়ে আসা উখিয়া-টেকনাফের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শ্রমকাজের জন্য ছুটে আসা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা সূত্র মতে, এই মৌসুমে শ্রমিকের কাজ করার লক্ষে আমরা দল বেঁধে ঈদগাঁও এলাকায় এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি যে, শত শত অসহায় শ্রমিক কাজকর্মের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। যদি অল্প দামেও কাজ করতে পারি তাহলে আমরা খুশি। না হলে পরিবার পরিজন তথা ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রী উপোষ থাকবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক এ প্রতিনিধিকে কেঁদে কেঁদে বলেন-ও ভাই আমার কথা গুলো পত্রিকার মাধ্যমে জেলা বাসীর কাছে পৌছিয়ে দিতে পারবেন কি? তাহলে শুনুন- ছোট কালে বাবা-মা হারিয়েছি, এই সুন্দর পৃথিবীতে আমি একা, আমার পাশে কেউ নেই বলে অঝর নয়নে কাঁদতে থাকে। তিনি জানান-ছোট বয়সে আমি আমার বাবার হাত ধরে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলাম, এই পর থেকে বাবার অসুস্থতার কারণে লেখাপড়া আর কপালে জুটেনি। তারপর থেকে নেমে পড়ি সংসার নামের মহা কষ্টের রাজ্যে। সব শেষে বাবা মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে ঈদগাঁওতে এসে শ্রমকাজে হাবুডুবু খাচ্ছি। আপনার পাশে সহযোগীতা করার মত কেউ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি চাপা কান্না কণ্ঠে বলেন- সবাই তো সুখি হতে চাই, কেউ পায় কেউ পায়না। এদিকে তার নাম এবং বাড়ীর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে মুখ খুলেনি। অপরদিকে দেশীয় শ্রমিক আবুল ফজল, আব্দু শুক্কুর, আবুল হোসন, মহলছ, ছৈয়দ আলী ও আবুল বশর জানান- এই বৃহত্তর এলাকায় অল্প দামে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের শ্রমবাজার দখল করায় আমরা হতাশ। তাদের কাজ থেকে পরিত্রান পাওয়ার মত কিছু কি নেই? এমন প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে এখানকার দেশীয় শ্রমিকদের মাঝে। অন্যদিকে এই বিশাল এলাকায় দীর্ঘকাল ধরে সরকারী খাস জমি দখল করে বাড়ীঘর নির্মাণের মাধ্যমে বসবাস করছে হাজার হাজার রোহিঙ্গাগোষ্ঠী। এসব বিষয়ে দেখার কেউ না থাকায় তাদের উৎপাত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য সীমান্ত প্রহরী থাকে। এদেশে সীমান্ত প্রহরী থাকলেও বর্মী রোহিঙ্গারা নানা কৌশল অবলম্বন করে এদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বংশ বিস্তারের শিকড় গেঁড়েছে। তারা এদেশে শুধু ডালপালা বিস্তার করে ক্লান্ত হয়নি, সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে নানা প্রকার অপরাধ প্রবণতা। সচেতন মহলের অভিমত- আজ দেশের শান্তিপুর্ণ পরিবেশ ধ্বংসের পথে ধাবিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গা। অপর দিকে এসব অপরাধ অপকর্ম করে সুযোগ বুঝে নির্বিঘেœ নিজ দেশে পালিয়ে যায়। এর প্রভাব কক্সবাজারের বৃহত্তর ঈদগাঁও ও রামুর ঈদগড়ের বিশাল এলাকায় ভাইরাস আকারে ঢুকে পড়েছে। এরই অংশ হিসাবে ছয় ইউনিয়নের বৃহত্তর ঈদগাঁও ও রামু উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল ঈদগড়ের বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাস করছে দাপটের সাথে। উল্লেখ্য যে, ঈদগাঁও বাজারে ডিসি রোডস্থ পোষ্টঅফিসের সামনে সম্প্রতি চাষাবাদের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা ও দেশীয় শ্রমিক নানা দামে বিকিকিনি হতে দেখা যাচ্ছে।