কক্সবাজার আলো ডেস্ক :
মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই আন্তর্জাতিক কলরেট দেড় সেন্ট থেকে দুই সেন্ট কার্যকর করেছে আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম (আইওএফ)।
রবিবার রাত ১২টার পর থেকে নতুন এ কল রেট কার্যকর করা হয়েছে। সরকারীভাবে এ রেট বৃদ্ধি না করায় আগের নির্ধারিত দেড় সেন্টের ওপর নির্ধারিত রাজস্ব পাবে সরকার। বাকি আধা সেন্ট যাবে অপারেটরদের পকেটে।
তবে আইওএফ’র দাবি, কলরেট বাড়ানোর বিষয়ে বিটিআরসির নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুসারেই কল রেট বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক কল রেট বাড়ানোর এখতিয়ার আইওএফ’র রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইওএফের প্রধান নির্বাহী খন্দকার মাজহারুল হক স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে কলরেট দেড় সেন্ট থেকে বাড়িয়ে দুই সেন্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত ২৪ আগস্ট থেকে কার্যকর করা হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। সে অনুসারে রবিবার রাত থেকে নতুন কল রেট কার্যকর হয়েছে। এতে কলরেট ১ টাকা ১৭ (এক সেন্ট) পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৫৬ পয়সা (দুই সেন্ট) করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কল রেট বৃদ্ধির বিষয়ে আমি কোনো চিঠি পাইনি। তবে এটা করতে পারে বিটিআরসি। এর অথরিটি বিটিআরসি। আমরা শুধু সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করি।’
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সর্বনিম্ন ‘দেড় সেন্ট’ ও সর্বোচ্চ ‘তিন দশমিক সাত সেন্ট’ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। এখন আন্তর্জাতিক কল রেট কত হবে তা নির্ধারণ করবে বিটিআরসি। আইজিডব্লিউ অপারেটররা বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”
জানতে চাইলে আইওএফ’র প্রধান নির্বাহী খন্দকার মাজহারুল হক বলেন, ‘গতকাল (রবিবার রাত ১২টার পর) রাত থেকে এটি কার্যকর করা হয়েছে। বিটিআরসির নির্দেশনা অনুসারে সর্বনিম্ন দেড় সেন্ট থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন সেন্ট’র মধ্যেই এটা করা হয়েছে। আজকেও এ বিষয়ে বিটিআরসির একটি সার্কুলার জারি হয়েছে। কাজেই এতে বিটিআরসির অনুমতি দেওয়া আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ ব্যবসায় করেন আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম (আইওএফ) তাদেরই একটা সংগঠন। কাজেই এটা (কল রেট বৃদ্ধি করা) তাদেরই এখতিয়ার।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সহকারী পরিচালক (মিডিয়া উইং) মো. জাকির হোসেন খাঁন জানান, বিটিআরসির লাইসেন্সভুক্ত যারা, তারা যদি নতুন কোনো কিছু পরিবর্তন করে তাহলে বিটিআরসিকে অবশ্যই অবহিত করতে হয়।’
তবে এ ক্ষেত্রে আইওএফ থেকে বিটিআরসিকে কল রেট বাড়ানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে কীনা— এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তোর দেননি।
বিদেশ থেকে আসা প্রতিটি কল আইজিডব্লিউর মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করে। এরপর আইসিএক্সের মাধ্যমে তা সংশ্লিষ্ট অপারেটর বা এএনএসে পৌঁছায়। তারপর অপারেটর গ্রাহকের ফোনে কলটির সংযোগ দেয়।
নিয়ম অনুসারে, প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয়, তার ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কলরেট দুই সেন্ট করা হলেও সরকার দেড় সেন্টের ওপর রাজস্ব পাবে। বাকি আধা সেন্টের পুরোটাই অপারেটরদের থাকবে। এতে বিদেশ থেকে দেশে কল করার খরচও বাড়বে।’
দেশে মোট ২৩টি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর থাকলেও গত ২৬ মার্চ প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংগঠন আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরামের (আইওএফ) মধ্য থেকে সাতটিকে আন্তর্জাতিক কল পরিচালনার কর্তৃত্ব দেয়। এত দিন প্রতিটি আইজিডব্লিউ অপারেটরের কাছেই বিদেশ থেকে কল আসত।
কিন্তু বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো আইজিডব্লিউ অপারেটর আগের মতো সরাসরি আইটিসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। তারা সরাসরি কোনো অপারেটরের সঙ্গেও কল আদান-প্রদান করতেও পারে না। এ কাজটি করছে সাত আইজিডব্লিউ অপারেটর সুইচের ফোরাম (আইওএস) মাধ্যমে।
এর আগে ১৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরগুলো মোবাইল ফোনের কল রেট না কমাতে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে অনুরোধ করেন।
কল রেট কমালে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের অবৈধ টার্মিনেশন (ভিওআইপি) বেড়ে যেতে পারে বলে প্রতিমন্ত্রীর কাছে শঙ্কা প্রকাশ করেন আইওএফ’র নেতারা।