এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও :
চরম বিপর্যয়ের মূখে পড়েছে কক্সবাজারের বাগদা চিংড়ি চাষ শিল্প। বিগত মাস দুয়েক ধরে ক্রমাগত বর্ষনের ফলে দফায় দফায় বন্যা-প্লাবন ও সাম্প্রতিক ঘূণিঝড় কোমেন’র প্রভাবে উচ্চমাত্রার জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে জেলাব্যাপী সমুদ্র উপকুলীয় এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ঘের প্লাবিত হয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাগরে ভেসে গিয়েছে অন্ততঃ শতাধিক কোটি টাকার আহরণযোগ্য বাগদা চিংড়ি ও অন্যান্য প্রজাতির মাছ। হ্যাচারীগুলোতে বাগদা চিংড়ি পোনা না থাকায় আবার নতুন করে পোনা মজুদ করা যাচ্ছে না। এতে মাথায় হাত দিয়েছেন উদ্যোক্তা-চাষী ও খামারীরা। বিগত মে মাসে লবণ উৎপাদন মৌসুম শেষে জেলাব্যাপী প্রায় সাড়ে তিন হাজার খামারে শুরু হয় চিংড়ি চাষ। ঘের প্রস্তুতির পর দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়াসহ পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার উপকুলীয় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে পোনা মজুদ করে চাষের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। চিংড়ির সাথে লবনাক্তপানির অন্যান্য প্রজাতির মাছও চাষ করা হয়। চিংড়ি চাষ বিষয়ক পরামর্শক এক প্রতিষ্ঠান সূত্রে প্রকাশ, মাস তিন এক আগে মজুদ করা পোনা আহরণযোগ্য হয়ে “সাব এডাল্ট” স্টেজে ছিল। অনেক খামারে শুরু হয়েছিল আহরণ ও বিক্রি। কিন্তু গত ৩০ জুলাই সকালে ঘূর্ণিঝড় কোমেন’র প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ ফুট উচু জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস হলে এর প্রথম ধাক্কাতে বেড়িবাধ বিধ্বস্ত হয়ে প্লাবিত হয় জেলার প্রায় দু’হাজার চিংড়ি ঘের ও ভেসে যায় বিপুল পরিমান মাছ। এসব ঘেরের বেড়িবাধ কিছু কিছু মেরামত করা হলেও সিংহভাগ ঘেরে এখনো চলতেছে জোয়ার ভাটা। বাধ মেরামত হলেও নতুন করে মজুদের জন্য পোনা পাওয়া যাচ্ছে না। হ্যাচারী মালিকদের মতে, সাগরে দুমাস ট্রলিং বন্ধ থাকায় মা চিংড়ি আহরণ করা যায়নি। তাই হ্যাচারীতে পোনা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন মাত্র কিছু কিছু হ্যাচারীতে মা চিংড়ি তোলা হচ্ছে। ঘের মালিকদের মতে, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত চিংড়ি মৌসুম থাকবে। এরপর লবণ চাষের জন্য ঘের শুকিয়ে ফেলতে হবে। তাই এখন পোনা মজুদ করা না গেলে মৌসুম থাকতে আহরণ করা যাবে না। এসব মিলিয়ে চলতি বছর চরম বিপর্যয়ের মূখে পড়েছে জেলাব্যাপী চিংড়ি শিল্প। রপ্তানিমুখী প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলো পর্যাপ্ত চিংড়ি না পাওয়ায় উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রপ্তানির লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা যাবেনা বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার মতে, ঘূর্ণিঝড় কোমেন’র আগে কয়েক দফা পাহাড়ী ঢল ও প্লাবনে জেলার চিংড়ি খামারগুলোতে ১৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জলোচ্ছ্বাসের ফলে সৃষ্ট ক্ষয় ক্ষতির পরিসংখ্যান এখনো করা হয়নি।