এস.এম.ছগির আহমদ আজগরী,পেকুয়া :
কক্সবাজারের পেকুয়ায় গত ৩দিনের টানা ভারী বর্ষনে আবারও পানিতে তলিয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের লোকালয়। ফলে, এক প্রকার গৃহবন্দী হয়ে মানবেতর জিবন যাপন করছে মানুষ। সরোজমিন ঘুরে পাওয়া তথ্য চিত্রে জানা গেছে, মৌসূমী বায়ুর প্রভাবে গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত আর সাগর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির কারণে ফের কক্সবাজার জেলার উপকুলীয় উপজেলা পেকুয়ার নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে পেকুয়া উপজেলার গ্রামীন জনপদের মানুষ। চলতি বর্ষা মৌসুমের ভাদ্র মাসের শুরুতে কয়দিন ধরে নেমে আসে টানা বর্ষন। ফলে উপজেলা জুড়ে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে এ অবস্থা। গত ১৮আগষ্ট থেকে টানা এ বর্ষন শুরু হয়। সেদিন থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত আর নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলা জুড়ে আবারো দেখা দিয়েছে বন্যার অচলাবস্থা। এতে উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন সহ নিচু এলাকার উজানটিয়া, মগনামা, বারবাকিয়া ও শিলখালী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল হয়ে পড়েছে প্লাবিত। উপজেলার বিস্তির্ণ বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্টের স্লুইচ গেইটগুলো গুটিকয়েক অসাধু মুনাফালোভী প্রভাবশালী লোকজনদের বসানো জাল, মাছ ধরার ছাঁই ও নানা সরঞ্জাম সাঁটিয়ে বন্ধ রাখার জের ধরে পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা সংকুচিত হয়ে পড়ায় পানি বৃদ্ধির অন্যতম একটি প্রধান কারনেও দেখা দিয়ে এ অবস্থা। আর এ অবস্থার শিকার হয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লা, শিলখালী, বারবাকিয়া, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী ইউনিয়নের নিচু এলাকার লোকালয়ে এক মাসের ব্যবধানে আবারো পেকুয়া জুড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। আর বন্যা কবলিত এলাকার মানুষগুলো ফের পানিবন্দী হয়ে শিকার হয়েছে মানবেতর জিবন যাপনের। এ যেন নিয়তির দূর্ভোগ তাদের শেষ হচ্ছেনা। বিপাকে পড়েছে এলাকার শত শত ধনী দরিদ্র পরিবারের উল্লেখযোগ্য জণগোষ্টি। ফের জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় সব গ্রামে তলিয়ে পড়েছে গ্রামীন অবকাটামো ও রাস্তাঘাট। এদিকে উপজেলা লাগোয়া খরশ্রোতা মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেড়িবাঁধ ও রাস্তাঘাট উপছে তা লোকালয়ে প্রবেশ করায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার শিকার হওয়ার ফলে ফের আবারও বন্যার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। সরোজমিনে তথ্য সংগ্রহে দেখা গেছে যে, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ছিরাদিয়া পয়েন্টে গত জুন-জুলাই মাসে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়ীবাঁধের একাধিক পয়েন্টের অংশগুলো যথাসময়ে সংষ্কার না হওয়ায় এবারেও ওই ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধের অংশ দিয়ে প্রবাহমান মাতামুহুরী নদী আর ঢলের পানি অবাধে প্রবেশ করছে পেকুয়ার লোকালয়ে। তলিয়ে যাচ্ছে মৌসুমী ধানের বীচ তলা, রূপায়িত ধানের ছারা, মাছের প্রজেক্ট, শাক-সবজির ক্ষেত-খামার সহ গ্রামীন সড়ক ও উল্লেখযোগ্য পরিমানের বসতি। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকা মাতামুহুরী ও তার শাখা নদী-খালের পাউবোর বিভিন্ন স্লুইচ গেইট দিয়ে মৌসুমী মাছ চাষীরা অবাধে পানি ডুকানোর জের ধরে সদরের প্রায় সব গ্রামীন অবকাটামো, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ পানিবন্দী হতে শুরু করেছে। উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জাপা নেতা আহমদ হোসাইন, শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নেজাত মুহাম্মদ, রাজাখালী ইউনিয়নের মৎস্যজিবীলীগ নেতা মোঃ মনসুর আলম ও উজানটিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা জাপা নেতা রেজাউল করিম প্রকাশ বজল মেম্বার এ প্রতিবেদককে জানান, মুনাফালোভী মৎস্যঘেরের মালিকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে নানা ভাবে ¯¬ুইচ গেইট বন্ধ রাখার ফলে পানি চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে, এসব ইউনিয়নের প্রায় সব পাড়া-মহল¬ায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারন করেছে। বিষয়টি নিয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুর রশিদ খানের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি জানান, কোন অসাধু লোক স্থানীয় জন প্রতিনিধি’র দোহায় দিয়ে সুইচ গেইট বন্ধ বা ব্যবহার করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির পাঁয়তারা অব্যাহত রাখলে তাদের চিহ্নিত পূর্বক ফৌজদারী আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। সুতারাং এদের চিহ্নিত করে আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহনের স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসন ও থানা-পুলিশকে অবহিত ও সহযোগিতা করা জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জানাচ্ছি বিশেষ জরুরী অনুরোধ। এদিকে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু গতকাল বিকালে উপজেলার পানি বন্দি লোকালয়গুলো সরোজমিন পরিদর্শন করে ভোগান্তির শিকার মানূষের খোঁজ-খবর অব্যাহত রেখেছেন।