কোটাবঞ্চিত দুই শতাধিক এজেন্সি মালিক প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত আশকোনা হজ অফিসে গিয়ে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ ভুয়া হজযাত্রীর নাম শনাক্তকরণে যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ১০ হাজার ভুয়া নাম বের হয়ে আসার খবরে আশাবাদী হয়েই তারা প্রতিদিন হজ অফিসে গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তবে যাচাই-বাছাই শেষ হলেও এখন পর্যন্ত এসংক্রান্ত কমিটি রিপোর্ট চূড়ান্ত না করায় এবং কোটা পুনর্বণ্টনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ক্রমেই তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন।
গত ২৮ জুলাই যাচাই-বাছাই শেষ হলেও গত রাত পর্যন্ত কমিটির রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়নি। গত ২১ জুলাই থেকে কোটা পাওয়া ৭৮৭টি এজেন্সির পাসপোর্টের সাথে ব্যাংক তালিকা, পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের রিপোর্ট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার কাজ শুরু হয়। কমিটির সভাপতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাসান জাহাঙ্গীর আলম পুরো কমিটিকে নিয়ে বৈঠকে বসে রিপোর্টটি চূড়ান্ত করার কথা। গত শুক্রবার রাতে হজ অফিসে এই কর্মকর্তা এসে সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত না আসায় বৈঠক হয়নি। তবে আজ রোববার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে সভাপতি কমিটির সভা ডেকেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে চূড়ান্ত হজযাত্রীর তালিকা থেকে পাওয়া ভুয়া নামগুলো কোটাবঞ্চিতদের বণ্টন না করে আবারো ভুয়া নাম এন্ট্রিকারীদের রিপ্লেস করার সুযোগ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করছেন অপেক্ষায় থাকা কোটাবঞ্চিত এজেন্সি মালিকেরা। তারা বলছেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে রিপ্লেসের জন্য কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়লেও তা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি বুঝে অনেক এজেন্সি রিপ্লেসের আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছেন বলেও অভিযোগকারীরা তাদের নিজস্ব সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বলছেন। কোটাবঞ্চিত এজেন্সি মালিকেরা বলছেন, কয়েক ক্যাটাগরিতে খালি হওয়া হজযাত্রীদের নামের স্থলে কোটাবঞ্চিতদের হজযাত্রীদের কোটা বণ্টন করে দিলে অন্তত মোয়াল্লেম ফি জমা দেয়া হয়েছে এমন ১০ হাজারের মতো হজযাত্রীকে এবার হজে পাঠানোর একটা ব্যবস্থা হতে পারে।
এ দিকে শুক্রবার রাতে হজ অফিসের পরিচালক যাচাই কমিটির সদস্যদের সাথে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে কমিটির রিপোর্টের বিষয়ে একটি প্রাথমিক ধারণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কমিটির এক সদস্য এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা রিপোর্ট সম্পর্কে যে ধারণা পেয়েছি তাতে দেখা যায় সাত হাজারের মতো হজযাত্রীর পুলিশ ভ্যারিফিকেশন সঠিক নেই। তার মধ্যে কিছু হজযাত্রীর নাম ঠিকানায় গরমিল রয়েছে। এর মধ্য থেকে একটি অংশের শেষ পর্যন্ত ভ্যারিফিকেশনে সঠিক রিপোর্ট আসতে পারে। এ ছাড়া তিন হাজারেরও বেশি নামের বিপরীতে পাসপোর্টের ফটোকপি দেখানো হয়েছে। দুইবার এন্ট্রি হয়েছে এমন পাওয়া গেছে ৭০০টি নাম। নাম ঠিকানায় গরমিল পাওয়া গেছে আরো পাঁচ শতাধিক নাম। আর নিজেদের থেকে নাম হিসেবে সারেন্ডার করেছেন এমন নাম দুই শতাধিক। তবে শেষ পর্যন্ত ১৪টি এজেন্সি হজ অফিসে পাসপোর্ট ও তালিকা নিয়েই যায়নি। তাদের হজযাত্রীর সংখ্যা দুই হাজার ১০০-এর মতো।
কোটাবঞ্চিত একটি হজ এজেন্সির মালিক মঈন উদ্দিন আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় হজ অফিস থেকে ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা দুই শতাধিক এজেন্সি মালিক সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক দিন ধরে হজ অফিসে অবস্থান করে আসছি। আমরা আশায় আছি আমাদের খালি হওয়া কোটা বণ্টন করে দেবে। তিনি বলেন, ৪৫টির মতো এজেন্সির একজনও হজযাত্রীর নির্ধারিত এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জনের কোটায় স্থান পায়নি। এই এজেন্সি মালিকেরা হজযাত্রীদের কোনো জবাব দিতে পারছেন না। এ ছাড়া আরো কয়েক শ’ এজেন্সির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হজযাত্রী কোটায় স্থান পায়নি। তিনি বলেন, আমাদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত তালিকা যাচাই করেছে। তাতে আমাদের দাবির সত্যতাও প্রমাণিত হয়েছে। এখন কেন তালিকা প্রকাশ এবং কোটা বণ্টন নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে তা আমাদের বুঝে আসছে না। আমরা এ নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছি।
ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সিগুলোর আহ্বায়ক ও যাচাই-বাছাই কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, কমিটির সভাপতি রোববার বেলা ১১টায় বৈঠক ডেকেছেন সচিবালয়ে। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এজেন্সিগুলোর যে কয়েকজন সদস্য ছিল তাদের মধ্যে তিনি নিজেসহ কয়েকজন মোনাজেম ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসার কারণে সৌদি আরবে চলে যাচ্ছেন। ফলে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবদুল মতিন ভূঁইয়া থাকবেন। তিনি বলেন, আমরা শনিবার সন্ধ্যায় ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সাথে তার বাসায় দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানতে পারলাম মন্ত্রী ঢাকায় নেই। তিনি বলেন, আমাদের শত শত এজেন্সি মালিক হজ অফিসে অবস্থান করে কোটা পাওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন। আমরা আশা করছি সরকার কমিটির রিপোর্টের আলোকে কোটাবঞ্চিত এজেন্সিগুলোর হজযাত্রীদের পাঠানোর দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।