আরিফ সিকদার বাপ্পী, দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাত :
দ্য মেইদান সিটি করপোরেশন সম্প্রতি দুবাইয়ের একদম প্রাণকেন্দ্রে ৩.৬৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের একটি বিনোদন, আবাসন এবং আতিথেয়তা কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। মেইদান হোটেলে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম আনুষ্ঠানিকভাবে মেইদান ওয়ানের নির্মাণ অনুমোদন করেন। এতে প্রায় ৭৮ হাজার ৩০০ জন বাসিন্দা বসবাস করতে পারবে। এছাড়াও এখানে থাকবে ৭১১ মিটার লম্বা দুবাই ওয়ান নামের একটি টাওয়ার, মেইদান মার্কেট বা মল, একটি সিভিক প্লাজা। প্রকল্পটি সৌন্দর্য বর্ধন করবে পানির ঝরনাধারা, একটি ৪ কিলোমিটার লম্বা খাল এবং ১০০টি বার্থ মেরিনা।
এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়টি মেইদান এবং আল খাইল রোডের মাঝামাঝি অবস্থিত। এর নির্মাণকাজ ২০২০ সালের আগেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সময়ে দুবাইয়ের জনসংখ্যা ৩.৪ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেইদান ওয়ান মল :
মেইদান ওয়ান মলটি এমনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে যা আগে কখনোই দেখা যায়নি। এতে থাকছে ১৫০৮০ মিটারের একটি সরানোযোগ্য ছাদ, যা শীতকালে খোলা রাখা যাবে। এর ফলে ভবনের ভেতরে আবহাওয়াটা অনুক‚ল এবং খাবার খাওয়া ও আতিথেয়তার পরিবেশ সুন্দর থাকে। এখানে থাকবে ৩ শতাধিক রেস্টুরেন্ট, ক্যাফের দোকান যাতে ক্রেতারা ভালোমানের ফাস্ট ফুড পাবেন। পাশাপাশি থাকবে খুচরা পণ্য, বিলাসবহুল পণ্য এবং বিনোদনের সব আয়োজন।
বৃহত্তম ইনডোর স্কাই ¯েøাপ
স্থাপনাটি হবে দুবাইয়ের ১ নাম্বার বিনোদন স্পট। এর ফ্লোরের আয়তন হবে ৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। এতে থাকছে বিশ্বের বৃহত্তম স্কাই¯েøাপ যার আয়তন ১.২ কিলোমিটার। ভেতরে থাকছে ২৫ হাজার স্কয়ার ফিটের জায়গায় খেলাধুলার সুবিধা, ৫.৩ কিলোমিটার লম্বা বাইসাইকেল এবং জগিংয়ের ট্র্যাক, ৯ কিলোমিটার ব্রডওয়াক, ৪২০ মিটার লম্বা বিরাট একটি পানির প্রবহধারা, একটি ৩০ মিটার লম্বা বিচ, একটি সিভিক প্লাজা। এখানে একসঙ্গে ৬০ হাজার লোক আপ্যায়িত হতে পারবে এবং তার সাথে থাকবে ঐতিহ্যবাহী গ্রামের একটি নিদর্শন।
মেইদানের চেয়ারম্যান সাইদ হুমাইদ আল তায়ের এ বিষয়ে বলেন,
দুবাই হলো এমন একটি শহর যেখানে সৃষ্টিশীলতা ও নান্দনিকতা এক মুহূর্তের জন্যও থামে না। সেই ধরনের একটি শহরে নতুন আবাসন জগৎ নির্মাণের এ ঘোষণা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা বহুমাত্রিক একটি আয়োজন নির্মাণ করতে চাই, যা মানুষের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাবে এবং এ শহরে যারা থাকে বা কাজ করে তাদের সবার চাহিদা ও মনের খোরাক মিটাতে পারবে। সেই সাথে বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরাও এখানে এসে বিনোদনের সর্বোত্তম ছোঁয়া পাবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বমানের ইনডোর এবং আউটডোর খেলার সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণে আগ্রহী যেখানে স্থিতিশীলতা থাকবে। মেইদান সিটি করপোরেশনের জন্য এ কাজ একটি স্বপ্নের মতো। এখন আমরা নিয়মিতভাবে কাজ চালিয়ে যাব যাতে মেইদান ওয়ানকে দুবাইয়ের ১ নাম্বার বিনোদন, আতিথেয়তা এবং আবাসন স্পট হিসেবে তৈরি করতে পারি। প্রকল্পটি ভবিষ্যতের স্বপ্নকে সামনে রেখে দুবাইকে নির্মাণ করার অংশ হিসেবেই নেয়া হয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত আমাদের সম্মানিত অংশীদার ও সহযোগীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছি তাই আমাদের মেইদানের মতো একটি বড় কাজের সাহস করতে প্রেরণা জুগিয়েছে। যেহেতু ২০২০ সালে দুবাই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে তাই তার আগেই এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায় আমরা সম্পন্ন করতে চাই।
ক্রীড়া সুবিধা :
এই প্রজেক্টে থাকবে ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বহুমাত্রিক খেলাধুলার আয়োজন যেখানে টেনিস, ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল, স্কোয়াশ, ইনডোর ক্রিকেট, মিক্সড মার্শাল আর্টস, বেসবল ব্যাটিং কেজ, ল্যাক্রোস, গলফ এবং হকিসহ অনেক খেলার বন্দোবস্ত থাকবে। সেই সাথে ১.২ কিলোমিটারের স্কা স্লোপে স্কি এবং স্নোবোর্ডিংও আয়োজন করা যাবে।
মেইদান এরিনাটি স্কাই স্লোপ কাঠামোর বেসে অবস্থিত যেখানে ৮ হাজার দর্শক একসাথে বসে সব ধরনের খেলা, লাইভ কনসার্ট এবং থিয়েটারে শো দেখতে পারবে। অন্যদিকে আউটডোর খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে ফুটবল পিচ, মাউন্টেন বাইকিং, ওয়াকিং এবং রানিং ট্রেইলস, একটি স্কেটবোর্ড পার্ক এবং একটি বিএমএক্স পার্ক।
বিশ্বের বৃহত্তম ঝরনাধারা
নতুন এই সিভিক প্লাজায় ৬০ হাজার লোককে অনায়াসে আপ্যায়ন করা যাবে। এখানে থাকবে একটি ভাসমান মঞ্চ, ঝরনা এবং কৃত্রিম জলপ্রপাত। ৪২০ মিটার লম্বা এ জেট ফাউন্টেনটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সঙ্গে থাকবে লাইট লেজার শো, যা বিভিন্ন ডিজিটাল কোরিওগ্রাফিতে প্রদর্শিত হবে। এখানে যে কোনো ধরনের আয়োজন বিশেষ করে সিভিল জমায়েত, কনসার্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান, সিনেমা, আর্ট এবং ফুড ফেস্টিভাল, ক্রীড়া এবং ফ্যাশন শো আয়োজন করা সম্ভব হবে।
শহরের কেন্দ্রস্থলে বিচ :
এই প্রকল্পে একুয়া মেরিন ক্রিস্টাল লাগুন’সের গা ঘেঁষে ৩০০ মিটার লম্বা একটি বিচ থাকছে, যেখানে পর্যটকরা বা আগত অতিথিরা সাঁতার কাটবে, প্যাডল বোট চালাবে, সি কায়াকিং, বিচ ভলিবল এবং রাতের বেলায় নানা রকম প্রদর্শনী দেখতে পারবে। এর পাশাপাশি এখান দিয়ে সরাসরি নতুন ওয়াটার পার্কে, বিচ বার এবং রেস্টুরেন্টে যাতায়াত করার ব্যবস্থা থাকবে।
বিশ্বের সুউচ্চতম আবাসন টাওয়ার :
বিশ্বের উচ্চতম টাওয়ার দুবাই ওয়ানে একটি মঞ্চ থাকবে, যাতে ৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার নিয়ে ফ্লোর থাকবে। থাকবে ৮৮৫টি রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট, একটি পাঁচ তারকা মানের হোটেল, একটি কনফারেন্স সেন্টার, একটি ৩৬০ ডিগ্রি অবজার্ভেশন ডেক যা ভ‚পৃষ্ট থেকে ৬৫৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আরো থাকছে একটি স্কাই রেস্টুরেন্ট যা বিশ্বরেকর্ড ৬৭৫ মিটার উঁচুতে, একটি প্লাজা এবং সাজানো একটি ছাদ এবং সবশেষে মেইদান ওয়ান মেরিনা ইয়ট ক্লাব।
মেইদান পরিবারের ভিশন জন্ম নেয় ২০১০ সালে গ্রান্ড স্ট্যান্ড সমাপ্তি করার মধ্য দিয়ে। এরপর গ্রুপটি মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম সিটিতে অনেক উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। বিশেষ করে ডিস্ট্রিক্ট ওয়ানে তারা অনেক প্রিমিয়াম মানের ভিলা স্থাপন করে, যা দুবাইয়ের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।
ভবিষ্যতের দুবাইকে নানা ধরনের আকর্ষণীয়, পরিবার কেন্দ্রিক আবাসন এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত করতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের যে কমিটমেন্ট রয়েছে তার অংশ হিসেবেই এই মেইদান ওয়ান নির্মিত হতে যাচ্ছে।
অন্যদের মধ্যে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুবাই সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান এবং এমিরেতস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী শেখ আহমেদ বিন সাইদ আল মাখতুম, কেবিনেট অ্যাফেয়ার্স সংক্রান্ত মন্ত্রী মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল গারগাভি, মিনিস্টার অব স্টেট রিম বিনতে ইবরাহীম আল হাশেমী, দুবাই রুলার্স অফিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুসাবাহ রাশিত আল ফাত্তান, দুবাই প্রোটকল অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খলিফা সাইদ সুলাইমান এবং অন্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা।