একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার কক্সবাজার মহেশখালীর আব্দুর রশিদ মিয়াকে (৮৬) স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এ ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি।
এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম (৮৩) জামিন পান। তার মামলা আপিলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।
রবিবার কক্সবাজারের মহেশখালীর ছয় আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ১১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। একইসঙ্গে মামলার আসামি আব্দুর রশিদ মিয়াকে (৮৬) স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন দিয়েছেন।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম এ আদেশ দেন। মামলার বাকি আসামিরা হলেন— মজিবুর রহমান, নুরুল ইসলাম, ওসমান গনি, জিন্নাত আলী ও বাদশা মিয়া।
রশিদের জামিন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘স্বাস্থ্যগত কারণে আসামি আব্দুর রশিদ মিয়াকে জামিন মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় ঢাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় থাকার শর্তে জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের মহেশখালীতে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের মামলায় তদন্তকাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটরের কাছে ৪৫ তদন্ত শেষ করার জন্য ৪৫ দিন সময় চেয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ বিষয়টি আদালতের নজরে এনে ৪৫ দিন সময় হাওয়া হয়। আদালত তা গ্রহণ করে ১১ অক্টোবর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।’
প্রসিকিউটর রানাদাস আরও বলেন, অভিযু্ক্ত মোহাম্মদ রশিদ মিয়া ও সালামত উল্লাহ খানের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও ৭৫ জনের নাম পায়। তবে এদের মধ্যে ৩২ জন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৩২ জন মারা যাওয়ায় এ মামলায় আসামি করা হতে পারে ৪৩ জনকে। মামলায় অভিযুক্ত ৭৫ জনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-২ এর নির্দেশে ২৪ মে গ্রেফতার চারজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন— জিন্নাত আলী, মৌলভী ওসমান গণি, নুরুল ইসলাম, বাদশা মিয়া ও শামসুজ্জোহা। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ট্রাইব্যুনাল-২ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও গ্রেফতার করা হয় মোট সাতজনকে। বাকি দু’জন হলেন— এলডিপির নেতা কক্সবাজার চেম্বারের সাবেক সভাপতি সালামত খান উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর ওরফে পঁচাইয়া রাজাকার এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ রশিদ মিয়া।
১ মার্চ কক্সবাজার জেলার সালামত উল্লাহ খান ও মোহাম্মদ রশিদ মিয়ার সঙ্গে অপর আসামি মৌলভী জাকারিয়া সিকদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই দুপুরে সালামত ও রশিদকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ২ মার্চ তাদের হাজির করা হলে কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল-২। এর পর থেকে কাশিমপুর কারা রাখা হয় রশিদসহ বাকি আসামিদের।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মধ্যে আরও ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা চলছে। তবে ওই ৭ জনের মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। একজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫ জন এখন কারাগারে।