সংসদ সদস্য পদ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তলব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দিলে আপিল বিভাগে নোটিশের স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এর শুনানি হবে আগামী রোববার। এখন আপিল বিভাগের শুনানির উপরেই ঝুলে রইল সাবেক এই মন্ত্রীর ভাগ্য।
রোববারই লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। সেদিন নির্বাচন কমিশনের তলব নোটিশের স্থগিতাদেশের পক্ষে রায় দিলে সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকছে। অন্যথায় নির্বাচন কমিশন তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করতে পারে।
0এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শেখ আখতারুল ইসলাম প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হয়েছেন। এখন দল যেহেতু তাকে বহিঃস্কার করেছে এবং নির্বাচন কমিশনকে তার সংসদ পদ বাতিলের আহবান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে, সেহেতু নির্বাচন কমিশন তাকে ডেকে সংসদ পদ বাতিল করতে পারে।’
কিন্তু আপিল বিভাগ শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের নোটিশ স্থগিতের নির্দেশ দেয় তবে নির্বাচন কমিশন লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন আখতারুল ইসলাম।
এ বিষয়ে লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘আমরা আপিল করেছি। রোববার সকালে আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের পরই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
তবে নির্বাচন কমিশনের শুনানি এবং আপিল বিভাগের শুনানি একই দিনে হওয়ার প্রশ্নে জ্যোতির্ময় বলেন, ‘আপিল বিভাগ বসে সকাল নয়টায়। আর নির্বাচন কমিশন যে নোটিশ দিয়েছে তাতে ১১টায় শুনানিতে থাকতে বলেছে। সুতরাং আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তেই বোঝা যাবে, তাকে যেতে হবে কি না।’
গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্য করে লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব হারান। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন। দেশে ফেরার পর নয় মাস কারাগারে কাটিয়ে সম্প্রতি মুক্ত হন তিনি।
লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের আট মাস পর বিষয়টি জানিয়ে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি গত ৫ জুলাই স্পিকার শিরীন শারমিনের হাতে পৌঁছায়। এরপর সংবিধান, মেম্বার অফ পার্লামেন্ট (ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট) অ্যাক্ট, সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মেনে বিতর্ক নিষ্পত্তির কার্যক্রম নেওয়া হয়।
এ অবস্থায় লতিফের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কী না, তা মীমাংসার জন্য গত ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এ পরিপ্রেক্ষিতে মেম্বার অব পার্লামেন্ট (ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট) অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও লতিফ সিদ্দিকীকে লিখিত বক্তব্য দিতে বলে নির্বাচন কমিশন। ২ আগস্ট দুজনই তাদের জবাব কমিশনে পাঠান।
আশরাফের চিঠিতে বলা হয়, দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ না থাকাই সঙ্গত।
অন্যদিকে লতিফ সিদ্দিকী তার সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সংসদের উপর ছেড়ে দেওয়ার আহবান জানান। এরপরই শুনানির সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। লতিফ ও সৈয়দ আশরাফকে আগামী ২৩ আগস্ট শুনানিতে হাজির হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
লতিফ সিদ্দিকী হাইকোর্টে যে রিট আবেদন করেছিলেন, তাতে কমিশনের দেওয়া চিঠির কার্যকারিতা স্থগিতের আরজি জানানোর পাশাপাশি ওই চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুলও চাওয়া হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশন, আইন সচিব, নির্বাচন কমিশনের উপসচিব (আইন) ও জাতীয় সংসদের স্পিকারকে ওই রিট আবেদনে বিবাদী করেছেন লতিফ।