বোরকা পরনে দুই নারী। তাদের একজনের কোলে চার বছর বয়সী একটি শিশু। চালক ছাড়াও গাড়িতে আরও দুই পুরুষ। দেখে বুঝার উপায় নেই যে তারা স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সদস্য। অথচ পরিহিত বোরকার আড়ালে, স্পর্শকাতর স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল স্বর্ণের বার। গতকাল রাতে এই পাঁচ সদস্যকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আটকের পর নারীদের স্পর্শকাতর স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে স্বর্ণের ১০০টি বার। এ ছাড়াও অন্যদের কাছ থেকে আটটি বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের পরিমাণ ১২ কেজি। জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা র্যাবকে জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ফাঁকি দেয়ার জন্যই বিশেষ কায়দায় নারীদের দেহের স্পর্শকাতর স্থানে স্বর্ণের বারগুলো রাখা হয়েছিল। একই কারণে শিশু বাচ্চাকেও সঙ্গে রেখেছিল তারা। ইকবাল নামে ভারতীয় এক নাগরিক ওই চক্রের প্রধান। ওমানে বসেই স্বর্ণ চোরাচালান চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে সে। বংশালে এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য এই স্বর্ণগুলো পাঠিয়েছে ইকবাল। এ বিষয়ে টিকাটুলির র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারওয়ার। তিনি জানান, রাত দেড়টার দিকে স্বর্ণ চোরাচালান চক্র একটি প্রাইভেট কারে (ঢাকা মেট্রো-খ ১২-০৯৯৫) রামপুরা ব্রিজ অতিক্রম করছে সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িটি অনুসরণ করে র্যাব। খিলগাঁও এলাকার খিদমাহ হাসপাতালের সামনে গাড়ির গতিরোধ করে র্যাব সদস্যরা। এ সময় দুই পুরুষের কাছ থেকে চারটি করে আটটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে র্যাব। এ সময় নারী সদস্যরা স্বীকার করেন তাদের শরীরে বিশেষ কায়দায় আরও স্বর্ণ রয়েছে। পরবর্তীতে তাদের দেহ তল্লাশি করে ১০০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। মোট ১০৮টি স্বর্ণ বারের ওজন সাড়ে ১২ কেজি। যার মূল্য ছয় কোটি পঁচিশ লাখ টাকা বলে র্যাব জানিয়েছে। খন্দকার গোলাম সারওয়ার জানান, রাজধানীর বংশালে এক স্বর্ণের ব্যবসায়ীর কাছে এই স্বর্ণ হস্তান্তরের কথা ছিল। তার আগেই র্যাবের জালে আটক হয় চোরাচালান চক্রের সদস্যরা। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট (বিজি ২৪) ওমানের মাসকার্ট থেকে চট্টগ্রাম হয়ে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আটককৃতরা অভ্যন্তরীণ যাত্রী হিসেবে ওই বিমানটিতে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসে। তিনি জানান, বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে উড়লে একজন বিদেশী যাত্রী স্বর্ণের বারগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তারা স্বর্ণের বারগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে রাখে। বিমানটি ঢাকায় অবতরণের পর বিদেশী যাত্রীরা বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে তল্লাশি কিছুটা শিথিল হওয়ায় তারা সহজেই বের হয়ে যায়। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেটকারে করে বংশালের উদ্দেশে যাত্রা করে তারা। এ ঘটনায় আটককৃতরা হচ্ছে, চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের ফতেহনগর গ্রামের সৈয়দ মাহমুদ ওরফে হাসান জাভেদ (৩৭), একই এলাকার হলুদিয়া গ্রামের মো. ফোরকান (২৭), ওই গ্রামের মুহাম্মদ আলীর স্ত্রী মেহেরুন্নেছা (৪৫), উত্তর সর্তা গ্রামের মো. ঘাসেমের স্ত্রী বিবি ফাতেমা (৩০) ও গাড়িচালক পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার নিশানবাড়িয়া গ্রামের শামসুল আলম (৪৪)। আটককৃতদের কাছ থেকে স্বর্ণ ছাড়াও প্রাইভেটকার, একটি ল্যাপটপ, চারটি পাসপোর্ট, নয়টি মোবাইলসেট, নগদ ১৫ হাজার টাকা, ১৬ সৌদি রিয়াল, ৩০ ইউএস ডলার, ৮২ চায়না ইয়াং, ১০ জর্ডান দিনার, সাত কাতার রিয়াল ও ৩৯৫ দুবাই দিরহাম জব্দ করা হয়।