লন্ডন সফরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং চোখের চিকিৎসা করাতে পারেন। দল পুনর্গঠনের আগে ছেলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলাপও সেরে আসবেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন, মহাসচিব চূড়ান্তকরণসহ নির্বাহী কমিটির সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন মা-ছেলে। পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে তাদের দেখা-সাক্ষাতের কথা থাকলেও ভিসা জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০ আগস্ট তার লন্ডনের পথে ঢাকা ছাড়ার কথা। থাকবেন অন্তত এক সপ্তাহ। ১৫ আগস্ট জন্মদিনও এবার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গেই কাটানোর ইচ্ছা বেগম জিয়ার। কোনো কারণে ১০ আগস্ট না যেতে পারলে এ মাসের মাঝামাঝিতে তিনি লন্ডন যাবেন। দলীয় নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে দুই দফা লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ সৌদি আরবে সাক্ষাৎ হয় ২০১৪ সালের মার্চের মাঝামাঝিতে। তখন মার সঙ্গে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সপরিবারে সৌদি আরব আসেন তারেক রহমান।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ১২ আগস্ট লন্ডনের একটি হাসপাতালে অ্যাপয়নমেন্ট আছে। বিশেষ করে ওই হাসপাতালে চোখের পরীক্ষা করাবেন তিনি। যদি ওই অ্যাপয়নমেন্ট ঠিক থাকে তাহলে ১০ আগস্ট তিনি ঢাকা ছাড়বেন। সেখানে গেলে সঙ্গত কারণেই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, নাতনি ও পুত্রবধূর সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ হবে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়েও আলাপ-আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গেও বিএনপি চেয়ারপারসন মতবিনিময় করবেন। তবে সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চোখের ডাক্তার দেখানো। গত বুধবারও বাসায় গিয়ে একদল চিকিৎসক চোখের পরীক্ষা করেন।গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর খালেদা জিয়া পারিবারিকভাবে খুবই শোকাতুর হয়ে পড়েছেন। এ সময় বড় ছেলে তারেক রহমানকে কাছে না পেয়ে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন তিনি। এটা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে তার। তাছাড়া ভিসা জটিলতায় তারেক রহমান ছোট ভাইকে দেখতে মালয়েশিয়ায় আসতে না পারায় মর্মাহত হন বেগম জিয়া। অন্য বছরের মতো এবার সৌদি আরবেও যাননি তিনি। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা ছিল। কোকোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি মা খালেদা জিয়া। সব মিলিয়ে মা-ছেলে দুজনই সাক্ষাতের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তাছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে দীর্ঘদিন গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ জীবনযাপনেও হাঁপিয়ে উঠেছেন বিএনপিপ্রধান। এ জন্য ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন তিনি। বিএনপির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, লন্ডনে গেলে সে দেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার দেখা হতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি বাঙালি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলীর সঙ্গেও তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করবেন। এ নিয়ে লন্ডন ও ঢাকা বিএনপির কূটনৈতিক নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের দিকে তাকিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও দল পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে মনে করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিশেষ করে দলের স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন, মহাসচিব চূড়ান্ত, নির্বাহী কমিটি ঢেলে সাজানোর বিষয়ে কথা বলবেন মা-ছেলে। তাছাড়া বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনা হবে তাদের মধ্যে। সর্বশেষ আন্দোলনে তারা দুজনই তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কারা কারা তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাও আলোচনায় স্থান পাবে। অপেক্ষাকৃত তরুণ, ক্লিন ইমেজ, আন্দোলনে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসারও চিন্তাভাবনা মা-ছেলের। নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বেগম জিয়া এমন কথাই বলেছেন।লন্ডন বিএনপির এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি প্রধানের সফর উপলক্ষে সেখানকার নেতা-কর্মীরা উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছেন। যুক্তরাজ্য সরকারের উচ্চ মহলেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশির ব্যানারে মতবিনিময় সভা উপলক্ষে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সফরকে কেন্দ্র করে লন্ডন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন