কক্সবাজার আলো ডেস্ক :
মিনারভা রানেসেস এমন কোনো ইতিহাসের সঙ্গে মিশে যেতে চান, যেখানে তার নাম উচ্চারিত হবে এই পৃথিবী টিকে থাকা পর্যন্ত। এই ফিলিপিনো নারীর কাছে পৃথিবীর এমনই এক বিখ্যাত মানুষ ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তিনি প্রায়ই বিস্মিত হয়ে ভাবেন, ওই ইতালিয়ান নাবিকটিই নাকি আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন! স্বপ্নটাকে বাস্তবায়িত করার সুযোগ চিনতে একটুও ভুল হলো না তার। এর জন্যে নিজের জীবনটাকে বাজি ধরে স্বামী-সন্তানের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী। কারণ, মঙ্গল গ্রহে যাচ্ছেন তিনি। আর কোনোদিন পৃথিবীতে ফিরবেন না।
`মার্স ওয়ান` প্রজেক্টের মাধ্যমে মঙ্গলে প্রথমবারের মতো ভিটে গড়তে যাচ্ছে মানবজাতি। পরিকল্পনার সব ঠিক থাকলে ওই লাল গ্রহে ২০২৪ সালে মানুষের প্রথম দলটি যাবে। মিশনটি সফল হলে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর চারজন মানুষ মঙ্গলে পাড়ি জমাবে।
সূর্যের চতুর্থ গ্রহে যেতে আগ্রহীদের ফর্ম পূরণের মধ্য দিয়ে এক দল মানুষ সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে পৃথিবীবাসীর বিপুল আগ্রহ দেখা যায়। বহু মানুষ মঙ্গলে পাড়ি দিতে ফর্ম পূরণ করেন। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মঙ্গে যারা প্রথমবারের মতো যাবেন, তারা ৬৮ দিন বেঁচে থাকতে পারবেন।
নিশ্চিত জীবনাবসানের তথ্যটি সজ্ঞানে মাথায় রেখেই লাল গ্রহে যেতে দারুণ আগ্রহী হয়ে ওঠেন রানেসেস। তিনি প্রথম ১০০ জন নারী-পুরুষের দলের একজন যারা মঙ্গলের টিকেট পেয়ে গেছেন। ওয়ান ওয়ে টিকেট পেয়ে গেছেন তিনি।
মিনারভা সাংবাদিকদের জানান, সেখানে যাওয়ার পর অল্প কিছুদিন বাঁচবো। কিন্তু এই বিশাল ইতিহাসে লিখা থাকবে আমার নাম। আমি পৃথিবাসীর কাছে চিরকাল বেঁচে থাকবো। কলম্বাস সেই আমলে আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন। আর আমি হয়তো তার চেয়েও বড় কিছু করতে যাচ্ছি। আমি নতুন একটি গ্রহ দেখতে পারবো। ইতিমধ্যে স্বামী এবং সন্তানদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন, তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার মতোই নতুন নতুন স্থান আবিষ্কারে উৎসাহিত হবে।
ম্যানিলার সেন্ট স্কলাস্টিকাস কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট করেছেন মিনারভা। ফিলিপাইন থেকে মাত্র দুজন এ সুযোগ পেয়েছেন। তিনি এবং আরেক উদ্যোক্তা জেইমি দেল রোজারিও। আবেদন করেছিলেন ২ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে সুযোগ পেয়ে যাওয়াটাকে দারুণ ভাগ্যের বিষয় বলে মনে করেন তিনি।
কিন্তু মঙ্গলে যাওয়ার এই প্রজেক্টটি দারুণভাবে সমালোচিত। তারপরও এতে যোগ দিতে কোনো আপত্তি নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে মিনারভার আত্মবিশ্বাসী জবাব, অবশ্যই কোনো আপত্তি নেই। সেখানে যেতে আমি পৃথিবীর সবকিছু ছাড়তে রাজি আছি। যদি সত্যিই যান তবে সঙ্গে কি নিয়ে যাবেন? মিনারভা জানালেন, ব্যক্তিগত জিসিন বলতে আমি আমার পরিবারে একটি ছবি শুধু সঙ্গে নেবো।
মঙ্গলে যারা প্রথমবারের মতো পাড়ি জমাবেন তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরতে `বিগ ব্রাদার` প্রডিইসার এন্ডেমোল এবং একটি টেলিভিশন চ্যানেল দায়িত্ব নিয়েছেন।
মিনারভা অবশ্য এসব প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত ব্রিফিং পেয়েছেন। তবে তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা এখনো জানানো হয়নি।