ফজরের নামায মিনায় আদায় করার পর হাজীগণ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় আরাফাত ময়দানে এসে অবস্থান গ্রহণ করবেন। এই আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়েই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। লাখো মানুষের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এই ভাষণের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছিল দ্বীনের পরিপূর্ণতা লাভের। আজো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভাষণ দেয়া হয়। ভাষণে গোটা বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। আর হাজীগণ এক আবেগঘন পরিবেশে মহান আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়ার মন-মানসিকতা নিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। তারা নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নিজের পরিবার পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
বাংলাদেশে আজ ৮ জিলহজ্ব হলেও সৌদি আরবে আজ ৯ জিলহজ্ব। গতকাল সারাদিন ও রাত হাজীগণ মিনায় অবস্থান করেছেন। আজ ফজরের নামায মিনায় আদায় করার পর আরাফার ময়দানে হাজীগণ অবস্থান করবেন। এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে হবে। সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুযদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশা’র নামায এশা’র ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সমস্ত রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুযদালিফায় ফজরের নামায পড়ে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।
পবিত্র মক্কা থেকে প্রায় ৯ মাইল পূর্বদিকে একটি পাহাড়ের নাম ‘জাবালুর রহমত’ বা করুণার পাহাড়। এই পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রলম্বিত বিরাট প্রান্তরটি আরাফাত প্রান্তর নামে পরিচিত। পাহাড়টি মধ্যম আকৃতির এবং গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত। এর উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট। এই পাহাড়ের পূর্বদিকে প্রস্তরের সিঁড়ি রয়েছে। এর ষষ্ঠ ধাপের উচ্চতা বরাবর আগে একটি উন্নত মঞ্চ ও একটি মিম্বর ছিল। এই মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রতি বছর ৯ জিলহজ্ব আরাফার দিন ইমাম সাহেব খুতবা প্রদান করতেন। এখন আর সেই মঞ্চ ও মিম্বার নেই এবং এখান হতে হজ্বের খুতবাও প্রদান করা হয় না। বরং এখন খুতবা দেয়া হয় মসজিদে নামিরা হতে। সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি এ খুতবা প্রদান করবেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর মাত্র ১ দিন হাজীরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন। তখন তাদের পরনে থাকে কাফনের কাপড়ের মতো সেলাইবিহীন সাদা দুই টুকরো কাপড়। হাজীরা আরাফারাতের ময়দানে অবস্থানকালে উচ্চস্বরে লাব্বাইকা পাঠ করেন, যদি সম্ভব হয় হজ্জের খুতবা শ্রবণ করেন। যোহর ও আছরের নামায একত্রে এবং মাগরিব ও এশা’র নামাযও একত্রে আদায় করেন, আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করেন, কুরআন তেলাওয়াত, দরূদ ও সালাম প্রেরণ এবং ইহ ও পরকালের কল্যাণ কামনায় অবস্থানকালটি অতিবাহিত করেন।
হযরত আবদুর রহমান বিন ইয়ামার আদ-দায়লি (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আরাফাই তো হজ্ব।” ইমাম শাওকানী (রহ.) এ কথার ব্যাখ্যায় বলেছেন, “যে ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থানের জন্য নির্দিষ্ট দিনে উক্ত ময়দানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য অর্জন করল তার হজ্ব হয়ে গেল।” ইমাম তিরমিযী (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “আরাফাত ময়দানে অবস্থান করার ভাগ্য যার হয়নি তার হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে।”
পবিত্র হজ্বের দিনে হাজীদের নির্বিঘ্নে হজব্রত পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সৌদি সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় লক্ষাধিক হজ্ব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, সিভিল ডিফেন্স কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক এবং মিডিয়া কর্মীদের নিয়োগ দেয়াসহ ২০টি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৫শত বিশেষজ্ঞ নিরাপত্তা কর্মী আকাশে টহল দিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ।
সৌদি গেজেট থেকে জানা গেছে, সৌদি আরবের পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সোলাইমান বিন আব্দুল আজিজ আল ইয়াহিয়া জানান, এবার বিদেশী হাজীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ২০৬ জন। তাদের মধ্যে বিমানে এসেছেন ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৫১ জন। অন্যরা সড়ক ও নৌ পথে সৌদি আরবে এসেছে হজ্ব পালন করতে। আর আভ্যন্তরীণ কয়েক লাখ হাজী রয়েছেন।