এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :
বন্য হাতির আক্রমণ আর তান্ডবে মানুষ আতংকে থাকলেও বিপন্ন হাতির প্রতি সদয় দেখিয়েছে একদল গ্রামবাসি। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জাধিন ফুলছড়ি বনবিটের ফান্ডাছড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। আরো ৪ বন্য হাতির সামনেই প্রাণবাজি রেখে তারা খাদে পড়ে যাওয়া মা হাতিটিকে রক্ষা করেন।
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা তার বাঁশির জাদুতে ইঁদুর তাড়িয়ে ভয়াবহ উপদ্রব থেকে রক্ষা করেছিল নগরবাসীকে। সেটা বহুল পঠিত কল্পকাহিনি। কিন্তু বন জায়গীরদার আর একদল গ্রামবাসি মিলে যা করেছে, তা বাস্তবে ঘটনা এর চেয়েও বিস্ময়কর কাণ্ড! তারা সহজাত গুণ দিয়ে পাহাড় থেকে খাদে পড়ে আটকে যাওয়া মৃত্যুর পথযাত্রী বন্য মা হাতিকে নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এনেছে । কিন্তু পাশেই অবস্থান করছিল অন্যসব হাতির পাল। এ ঘটনায় একটি জনপদের একদল অসহায় মানুষ এখন নতুন করে সৃষ্টি করেছে ইতিহাস।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি বনবিট থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বে ফুলছড়ি বিটের ১৯৮৮ সালের বনায়নের ফান্ডাছড়ি এলাকাটিতে বরাবরের মতো (সংখ্যায় পাঁচটি ) বন্য হাতির পাল আসে। ২৮ আগষ্ট শনিবার বিকালে ওই পাল হতে হঠাৎ উঁচু পাহাড় থেকে নিচে পড়ে খাদে আটকে যায় এক মা হাতি।
ফুলছড়ি বনবিটের হেডম্যান (বন জায়গীরদার প্রধান) আশরাফ আলী জানান, ফুলছড়ি বনবিটের অধীনের ৮৮ সালে রোপিত ফান্ডাছড়ি বনাঞ্চলে শনিবার ২৮ আগষ্ট অন্যান্য দিনের মতো একদল বন্য হাতি ঢুকে পড়ে। সংখ্যায় ছিল ৫। রাতে আচমকা বন্য মা হাতি উঁচু পাহাড় থেকে নিচে পড়ে গিয়ে খাদে আটকা পড়ে। আতঙ্কে অস্থির আশপাশের সব হাতি। এ খবরটি বন জায়গীরদার কাছ থেকে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা) হাবীবুর রহমান, হেডম্যান আশরাফ আলী, মকতুল আহম্মদ সহ একদল গ্রামবাসি। শনিবার বার বিকাল পর্যন্ত হেডম্যান আশরাফ আলী ও গ্রামবাসিরা মাটি খুঁড়ে অনেক কাঠখড় পুঁড়িয়ে উদ্ধার করা হয় মা হাতিটি।
ফুলছড়ি ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবীবুর রহমান জানান, নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে মা হাতিটি রক্ষার জন্য বনজায়গীরদার ও গ্রামবাসি অনেক কষ্ট করেছে। উদ্ধার হওয়ার পর হাতি পালের কাছে ফিরে যায়। হাতিটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।
তিনি বলেন, বন্য হাতি স্বাভাবিক ভাবে খাদে পড়ে গেলে বাঁচে না । কিন্তু বনজায়গীরদারদের প্রাণপণ চেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছে। এটা নজিরবিহীন উলে¬খ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে দেশে এটাই প্রথম কোন বন্য হাতি বেচে যাওয়ার ঘটনা।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা শাহ-ই-আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসলে এটা একটি বিস্ময়কর ঘটনা। বনজায়গীদার আর গ্রামবাসি সাহসি ছিলো বলেই তারা এটা পেরেছে।