হুমায়ূন রশিদ :
“সুস্বাস্থ্যেই সুবিচার, মাদক মুক্তির অঙ্গীকার” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টেকনাফে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়েছে। ২৬ জুন বুধবার সকাল ১০টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে উপজেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন।
এসময় তিনি বলেন-টেকনাফের একসময় সুনাম ছিল অথচ আজ ইয়াবার দুর্নাম ছাড়া আর কিছু নেই। এমতাবস্থা হতে উত্তরনের জন্য তিনি আইন শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতার জন্য টেকনাফবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়। পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহবান জানান। পরিকল্পনা করে তাদের বয়কট করুন। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কোন সামাজিক সম্পর্ক করবেন না। এই অপকর্মের সাথে যারা জড়িত তাদের রেহাই নেন।
অনেক জনপ্রতিনিধি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে তথ্য আছে, যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদেরকে বরখাস্ত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সপ্তাহে একদিন স্কুলে গুলোতে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলুন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানান। এমনকি মাদক ব্যবসায়ীদের কোন অনুদান কোন ধর্মীয়, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রহন না করার আহবান জানান।
মসজিদগুলো বাচ-বিচার না করে অনুদান নেয় বলে উল্লেখ করে বলেন মসজিদে মাদক ব্যবসায়ীসহ কোন অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের দয়া-দাক্ষিন্য, অনুদান নিবেন না। আইন শৃংখলা বাহিনী গুলোর প্রতি তিনি বলেন, জিলোটলারেন্স থাকবে। যারা মাদকের পক্ষে কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে সেরকম ব্যবস্থা হবে। কোন ছাড় নেই তাদের জন্য।
পাশাপাশি তিনি অভিযানে একজন নিরীহ লোকও যাতে ক্ষতির শিকার না হন সেব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান। একটু যাচাই বাছাই করে কাজ করবেন। একজন নিরীহ মানুষেরও যদি আর্তনাদ থাকে তাহলে সেটা হবে অনেক কষ্টের বিষয়। সেই জায়গায় আপনাদের আরেকটু আন্তরিক হওয়ার আহবান জানাই।
ইয়াবার জন্য অন্যান্য দাপ্তরিক কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন একদিন ইয়াবার দুর্নাম বেশী দিন থাকবে না একদিন শেষ হবে। আমরা চাই টেকনাফের দুর্নাম মুছে যাক। অনেক উন্নতি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের জন্য তদবির করছেন না। তদবির করলে রেহাই পাবেন না। পৃষ্টপোষক হিসাবে নাম উঠে যাবে। তবে এখন কেউ তদবির করছেন না বলে জানান। পরে তিনি উপস্থিত সকলকে মাদকের বিরুদ্ধে শপথ বাক্য পাঠ করান। সভার আগে এক বর্ণাঢ্য র্যালী প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে সভাস্থলে মিলিত হয়। শেষে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফয়সাল হাসান খান বলেন, বিজিবির যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে ৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত নিচ্ছিদ্্র করা সম্ভব নয়। তবে স্থানীয়রা সহযোগীতা করলে সীমান্ত নিচ্ছিদ্র করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই জন্য তিনি দিয়ে সহযোগীতার আহবান জানান। তিনি আরো বলেন একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে আমার খারাপ লাগে যখন আমার দেশের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর গুলি আমার দেশের নাগরিকের বুকে চলে। আমি বিশ্বাস করি যে গুলি করে আমার দেশের মানুষকে মেরে সীমান্তে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে হলে সবার সহযোগীতা লাগবে, সবার সহযোগীতায় ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করা যাবে। যারা ইয়াবা ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা লগ্নি করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
দেশে ৭০ লাখ মাদকসেবী উল্লেখ করে বলেন-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও যুবক ইয়াবাসক্ত হয়ে পড়েছে। মিয়ানমার ইয়াবা দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মাদকের ব্যাপারে জিরোটলারেন্স ঘোষনা করেছেন সেই ঘোষনা অনুযায়ী মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
রুট লেবেলে পাচারকারী তাদেরকে মারতে পারি। দুই মাসে ২০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। আমদানীর জন্য কারা টাকা দিয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে পারলে মাদক ব্যবসা বন্ধ হবে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, টেকনাফকে আমি মাদকমুক্ত করেই ছাড়ব। টেকনাফের টমটম চালক থেকে শিক্ষক, মেম্বার, জনপ্রতিনিধি সবাই ইয়াবা কারবারে জড়িত।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করলে সীমান্ত দিয়ে একটা কাকপক্ষীও ঢুকতে পারবেনা।
উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই। মাদকের ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন ইউনিয়নে, গ্রামে গঞ্জে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। মাদকের দুর্নাম থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আদিবুল ইসলাম, পৌর মেয়র মো. ইসলাম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সৌমেন মন্ডল প্রমুখ।
অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীলের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাহজাহান আলী। এতে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নারী-পুরুষ অংশগ্রহন করেন।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমরা আর রক্ত দেখতে চাই না। আমরা বাংলাদেশের কলংক মুচতে চাই। যেই কলংক টেকনাফ থেকে শুরু সেই কলংক টেকনাফ থেকেই শেষ করতে চাই।