বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার যুক্তি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকা সঠিক জায়গায় যায়নি। গিয়েছে হাইব্রিড ব্যক্তির কাছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় নির্বাচনে তাদের বিজয় কঠিন হয়ে পড়েছে। দলীয় প্রধানসহ আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতারা হুঁশিয়ার করলেও তাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা তা আমলেই আনছে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ মুজিবুর রহমান বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম, পদবী ও মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে বহিস্কারের সুপারিশসহ পত্র পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। তারপরেও না সরলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার সদর, রামু ও উখিয়ার ২১ ইউনিয়নের ২য় ধাপের নির্বাচনের প্রচারের প্রায় শেষ সময়। মাত্র ৫ দিন সময় থাকায় ১২৪৯ জন প্রার্থী এখন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীদের প্রচার ততই বাড়ছে। অনেক প্রার্থী ভোট নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আবার দলীয় নেতাকর্মীরা এলাকার মহল্লায় গিয়ে ছোটখাটো পথসভা করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ করছেন।
এখন সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। তবে অধিকাংশ ভোটার দলের চেয়ে বরং তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন, তাকেই ভোট দেবেন বলে চায়ের দোকানে আলাপ আলোচনা চলছে।
পাড়া-মহল্লার প্রতিটি চায়ের দোকানে চলছে নির্বাচন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ। কে এলাকার উন্নয়ন করবেন এমন বিশ্লেষণে সরগরম চায়ের দোকানগুলো। নির্বাচনী এলাকায় মাইকিং চলছে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। চলে মোটরসাইকেল শোডাউন, মিছিল-মিটিং।
২১ ইউনিয়নে ১২৪৯ জন প্রার্থী প্রতীক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যদিও দলীয় প্রার্থীদের প্রতীক আগে থেকেই চুড়ান্ত ছিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ৭৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরমধ্যে ১৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৩ জন সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থী এবং ৫৬ জন সাধারণ সদস্য প্রার্থী। প্রত্যাহার শেষে ২১ ইউনিয়নে প্রার্থীর সংখ্যা ১২৪৯ জন দাঁড়ালো।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ২১ ইউনিয়নে ১১ নভেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ অক্টোবর ২১ ইউনিয়নে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে ১৩২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২৪৯ জন প্রার্থী প্রত্যাহার শেষে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ১৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৭৩ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এরমধ্যে ৫৬ জন সাধারণ সদস্য এবং ৩ জন সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে ।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, ৩ উপজেলার ২১ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ১৪১ জনে প্রত্যাহার করেছেন ১৪ জন, মহিলা সদস্য পদে ২৩৫ জনে প্রত্যাহার করেছেন ৩ জনের এবং সাধারণ সদস্য পদে ৯৪৭ জনের ৫৬ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। জেলায় প্রার্থী ১২৪৯ জন।
সদরে ভারুয়াখালীতে ৬ জন চেয়ারম্যান, ১২ জন মহিলা মেম্বার, ৫২ জন সাধারন সদস্য।
চৌফলদন্ডীতে চেয়ারম্যান ৭ জন মহিলা ১৮ জন, পুরুষ ৩৭ জন। ঝিলংজায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, মহিলা ৭ জন, পুরুষ ৪২ জন। খুরুস্কুলে চেয়ারম্যান ৪ জন, মহিলা ১৫ জন, পুরুষ ৫৩ জন। পিএমখালীতে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, মহিলা ১৪ জন, পুরুষ ৪২ জন।
রামু উপজেলার চাকমারকুলে চেয়ারম্যান ৮ জন, মহিলা ৭, পুরুষ ৩০ জন। ফতেখারকুলে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, মহিলা ৭ জন, পুরুষ ৩৭ জন। র্গজনিয়া চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, মহিলা মেম্বার ১২ জন, সাধারণ সদস্য ৪৪ জন। ঈদগড় চেয়ারম্যান ৭ জন, মহিলা ৯ জন, পুরুষ ৩৬ জন। জোয়ারিয়ানালা চেয়ারম্যান ৬ জন, মহিলা ১২ জন, পুরুষ ৪৪জন। কচ্চপিয়া চেয়ারম্যান ৭জন, মহিলা ৮ জন, পুরুষ ৩২ জন। খুনিয়াপালং চেয়ারম্যান পদে ১০ জন, মহিলা ১৩ , পুরুষ ৪৩ জন। কাউয়ারখোপ চেয়ারম্যান প্রার্থী ৮ জন, মহিলা মেম্বার ১১ জন, পুরুষ ৪০ জন। রশিদনগরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪ জন, মহিলা ১১ জন, পুরুষ ৩৯ জন। রাজারকুলে চেয়ারম্যান প্রার্থী ১০ জন, মহিলা ১৩ জন পুরুষ ৪৩ জন।
দক্ষিণ মিঠাছড়িতে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, মহিলা ৯ জন পুরুষ মেম্বার ৪২ জন। উখিয়ার হলদিয়াপালং এ চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, মহিলা মেম্বার পদে ১৪ জন এবং পুরুষ মেম্বার পদে রেকর্ড ৭১ জন। জালিয়াপালং এ চেয়ারম্যান পদে ১১ জন, মহিলা ১৪ জন, পুরুষ ৫১ জন। রাজাপালং এ চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, মহিলা ৮ জন, পুরুষ মেম্বার ৬২ জন। রত্নাপালং এ চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, মহিলা ৮ জন, পুরুষ মেম্বার পদে ৪৭ জন। পালংখালীতে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, মহিলা সদস্য ১৩ জন এবং পুরুষ সদস্য পদে ৬৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মোট ৩ পদে ১৩২৫ জন প্রার্থীর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৪১ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ২৩৫ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৯৪৯ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র স্ব স্ব রিটার্নিং অফিসার বরাবরে জমা দেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন সদর উপজেলায় ৪ জন, রামু উপজেলায় ৮ জন এবং উখিয়া উপজেলায় ২ জন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: শাহাদাত হোসেন জানান, ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্টানে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।