
ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার আলো :
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়। কমে আসছে পর্যটকদের আনাগোনা। হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম রুম বুকিং হচ্ছে। আবার অনেকে রুম বুকিং দিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও বিধি নিষেধে অনেকটা বুকিং বাতিল করছে। ভীড় নেই সমুদ্র সৈকত, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দোকানসহ স্পটগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারনে মানুষ আতংকিত। অনেকটা ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও যেকোন মূহুর্তে লকডাউনের ঘোষণা আসতে পারে এমন আতংকে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে।
পর্যটন মৌসুমে স্বাভাবিকভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও সবসময় মিনিমাম ৫০% রুম বুকিং থাকে। কিন্তু নতুন করে করোনা সংক্রমণ দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় কারনে যা ২০% এ চলে এসেছে। আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৭০-৮০% রুম বুকিং থাকে। সেক্ষেত্রেও ৪০% রুম বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে, নতুন করে পর্যটন ব্যবসায় শংকা দেখা দিয়েছে।
কলাতলির হোটেল বে-মেরিনার ম্যানেজার রফিক উল্লাহ জানিয়েছেন, করোনার বিধিনিষেধে অনেকটা কমতে শুরু করেছে পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার উপলক্ষে বেশ কয়েকটি রুম বুকিং ছিলো। কিন্তু করোনায় আক্রান্তের অজুহাতে বেশিরভাগ রুমের বুকিং বাতিল করেছে। এভাবে চললে আবার ধস নামবে ব্যবসায়।
সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের জাহাজ কেয়ারী ট্যুরস এন্ড লিমিটেড এর কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী জানান, গেল কয়েকদিনে বড় বড় তিনটি গ্রুপ জাহাজের বুকিং বাতিল করেছেন। সরকারী ছুটি বাতিল হওয়ায় প্রশাসনের ৯৫ জনের একটি গ্রুপ বুকিং বাতিল করেছে। প্রতিদিন জাহাজে সিট খালি যাচ্ছে এখন।
তিনি আরো জানান, সরকার আবার কখন লকডাউন দেয় তা নিয়ে সাধারণ মানুষ আতংকে আছে। এর কারনেও অনেকে আসার সাহস করছে না।
ঢাকার সাভার থেকে বেড়াতে আসা সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান নিপু জানান, অনেকদিন পর কক্সবাজারে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই ভালো লেগেছে। তবে করোনা ও প্রশাসনের বিধি নিষেধ এর খবর দেখে দুইদিন আগে বাড়িতে চলে যেতে হচ্ছে।
একই অবস্থা নামি-দামি খাবারের হোটেল রেস্তোরাঁয়ও। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের আইটেম প্রস্তুত করলেও ভোজনরসিক পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় অনেক খাবার নষ্ট হচ্ছে। এমনকি নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা আসলে বড় ধরনের লোকসান আতংক কাজ করছে তাদের মাঝে।
কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাত্র ২১ দিন আগে তাঁর প্রতিষ্ঠান কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর একটি শাখা খুলেছেন। কোটি টাকা ইনভেস্ট করে এখন শংকায় দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে পর্যটক নির্ভর হওয়ায় করোনা আতংকের পর থেকে বেচাকেনা কমে গেছে। তবে, শুক্রবার হিসেবে মোটামুটি ভিড় ছিলো।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, শুধু করোনার কারনে নয় বিভিন্ন কারনে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। করোনার পাশাপাশি এতোদিন স্কুল খোলা ছিলো, স্কুলের ট্যুরও বন্ধ। এখানে যারা আসেন বেশিরভাগ ফ্যামেলি ট্যুরে আসেন। সে হিসেবে ফ্যামেলির কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আর আসা হয় না।
তিনি আরো জানান, মানুষের মধ্যে আতংক কাজ করছে। বিশেষ করে যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়েছেন তারা ভয়ে আসতে চায় না।
প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে করোনা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ওমিক্রন। এ কারনে আতংক কাজ করলেও মাস্ক পড়া নিশ্চিত করাসহ সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রতিদিন ৩-৪ টি টিম নিয়ে প্রতিনিয়ত হোটেল মোটেল জোনসহ শহরের বিভিন্ন স্পটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান।
তিনি জানান, নিয়মিত অভিযান হিসেবে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে হোটেলগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন বিষয়ে অসঙ্গতি পেলে জরিমানাও করা হচ্ছে।
বিশেষ করে পর্যটকদের মাস্ক ছাড়া সমুদ্র সৈকতে ঘুরাফেরা করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।