কক্সবাজারের টেকনাফে গরুর খামারে স্বপ্ন দেখছেন আজম সরকার (৩০) নামের এক খামারি। তিনি টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আলীখালীর বাসিন্দা। তাঁর গরুর খামারটির নাম হায়দার আলী এগ্রো পার্ক। দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনায় তিনি নিজের জমানো সব টাকা দিয়ে গরুর খামার করার সিদ্ধান্ত নেন। এখন সেই খামার থেকেই লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ইতিমধ্যে গেল কোরবানী ঈদে বড় বড় ২০ টা গরু বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হয়েছেন। তার খামারটি রঙ্গিখালী জুম্মাপাড়ায় অবস্থিত। খামারী আজমের বাবা জামাল হোসেন সওদাগর হ্নীলা ৭নং ওয়ার্ডের দুই বারের নির্বাচিত বর্তমান মেম্বার।
জানা যায়, গত দুই বছর ধরে ইউটিউব থেকে নিজে নিজে দেখে নিজস্ব জমিতে তিনি একটি গরুর খামার প্রতিষ্ঠা করেন। তার এই খামারে বর্তমানে ৫০ টি ষাঁড় ও ২০ টি গাভীসহ মোট ৭০ টি গরু রয়েছে।
খামারি আজম সরকার বলেন, আমি বিদেশ ও বাংলাদেশের পাবনা, সাতক্ষীরা এলাকায় গরুর খামার দেখে উদ্যোগ নেই। আমার খামারে বর্তমানে মোট ৭০ টি গরু আছে। আমি প্রাকৃতিক উপায়ে গরু লালন পালন করছি। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে আমি গরুগুলো বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি। আর ঈদ ছাড়াও দুধ বিক্রি করব। তাতেই আমি সন্তুষ্ট ইনশাল্লাহ।
গতকাল তার খামারে গিয়ে দেখা যায়, গো-খাদ্যের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করার জন্য বর্তমানে তিনি ৮ কানি জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। গরু দেখাশোনা করার জন্য সার্বক্ষণিক আটজন লোক কাজ করছেন। ঘাসের পাঁশাপাশি খৈলসহ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তার খামারটি বিশাল জায়গা রয়েছে। দুই সেটে ভাগ করা দুটি খামার তৈরী করতে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ৩০ লাখ টাকা মতো।
তিনি আরো জানান, প্রথম ধাপে এবারের ঈদে গরু বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা লাভ করেছেন। সামনে দুধ বিক্রি শুরু করব পুরো উপজেলায়।
খামারে বর্তমানে ৮ জন শ্রমিক ও বাইরের একজন পশু চিকিৎসক থাকলেও আজম সরকার দিনরাত গরুর খামারে সময় দেন। নিজেই খামার দেখভাল করেন। গরুর তাপমাত্রা, ওজন এসব পরীক্ষা করেন। কোনো সমস্যা মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, শাহিওয়াল, ব্রাহমা, ফ্রিজিয়ান ও দেশি জাতের গাভি ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের মোটাতাজা এঁড়ে গরু ৭০টি। বাছুর আছে ৬টি। এক মাসের মধ্যে খামারে গরুর সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০ হবে।
খামারের শ্রমিক দইল্লা বলেন, হায়দার এগ্রো পার্ক করার পর থেকে সে মাসিক বেতনে চাকরী করছেন। থাকা-খাওয়া সব ফ্রি। পার্কে সব কর্মচারীরা থাকেন। গরু দেখভাল ও পরিচর্যা করতে অনেক ভালো লাগে।
আজম সরকার নিজেই খামারের জন্য উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন হাট ঘুরে বিদেশি জাতের সৌখিন গরু কিনে আনেন। তবে তার আক্ষেপ পাবনা থেকে ট্রাকে করে গরু আনতে মিনিমাম ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া নেয় এটা আসলে অনেক বেশি।
এখন ঈদ শেষ হয়েছে খামারে গরুর সংখ্যা ১ হাজার এবং দুগ্ধ খামারে ৫০০ গাভি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তাঁর খামারে ভুসি, ঘাস ও খইল ছাড়া অন্য কোনো ভিটামিন খাওয়ানো হয় না। এতে খামারের গরুর শরীরে চর্বি কম, মাংস বেশি থাকে। ফলে খামারের গরুর মাংস স্বাদ বেশি।
খামার নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন আজম। খামারের গরু থেকে গরু বিক্রি করে এবং ডেইরি পার্ক থেকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের ইচ্ছে আছে তাঁর।
ইউনিয়ন ব্যাংক হ্নীলা শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, আজম অত্যন্ত ভালো একজন খামারী। সে গরুর খামার করে দিনদিন লাভবান হচ্ছেন। তাঁর গরুর খামার দেখে এলাকার মানুষ খামার করতে উৎসাহ পাচ্ছে। তাঁকে ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে পাঁশে আছি আমরা। সে এই গরুর খামার করে মাসে লাখ টাকা আয় করছেন। সামনে তাকে ব্যাংকের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা: জ্যোতির্ময় ভৌমিক জানান, এটা আসলে ভালো উদ্যোগ। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে। আমরা দ্রুত তার এগ্রো পার্ক টেকনাফের ইউএনওসহ পরিদর্শন করব।