ব্রিটেনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে শেষমেশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন লিজ ট্রাস। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার কোয়াসি কোয়ার্টেংকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার মাত্র ছয় দিন পর তিনি নিজেই পদত্যাগ করলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়বেন তিনি।
কোয়াসি কোয়ার্টেংকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় কিছু পর ব্রিটেনের নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান জেরেমি হান্ট। কিন্তু তাতেও শান্ত হয়নি ব্রিটেনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এবার লিজ ট্রাসের প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে হলো। আগে থেকেই জোর গুঞ্জন চলছিল, কনজারভেটিভ পার্টির সিনিয়র মন্ত্রীরা চলমান পরিস্থিতি থেকে ‘উদ্ধার মিশন’ বিষয়ক আলোচনায় মিলিত হবেন। যেখানে নেতা হিসেবে লিজ ট্রাস থাকবেন কিনা সে বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংকে বরখাস্ত করার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন লিজ। সরকারের অর্থনৈতিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়েও সন্তুষ্ট ছিলেন না তার কনজারভেটিভ দলের নেতারা। অনেকেই প্রকাশ্যে তার নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছিলেন। এদিকে অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর লিজের কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভুল স্বীকার করেন।
দীর্ঘ নির্বাচন প্রক্রিয়ার পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে কিছুদিন আগে নির্বাচিত হয়েছিলেন লিজ। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই ফের অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। লিজকে তার নিজের দলের অনেকেই আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করছিলেন না। এদিকে দলের এমপিরা ট্রাসকে মাত্র ১৭ দিন সময় বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু এ স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্রিটেনের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করা কার্যত অসম্ভব ছিল তার পক্ষে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সবার আগেই করপোরেট কর কমান লিজ ট্রাস। চলতি বছর মার্চের বাজেটে তত্কালীন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এ কর ২০২৩ সালের এপ্রিলে ১৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তার যুক্তি ছিল, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিতে সরকার কোম্কানিগুলোকে শত শত কোটি পাউন্ড দিয়ে সহায়তা করেছে। ফলে তাদের কাছ থেকে বাড়তি কর চাওয়া অন্যায় কিছু হবে না। কিন্তু সুনাকের এই সিদ্ধান্তই বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেন লিজ। তার করছাড়ের ঘোষণা করার পরেই বিশ্ববাজারে ঐতিহাসিকভাবে কমে যায় পাউন্ডের দাম। তাছাড়াও সাধারণ মানুষের কর কমানোর কোনো ঘোষণা করেনি তার সরকার। ফলে প্রশ্ন ওঠে তার নীতি নিয়ে। সবমিলিয়ে দলের মধ্যে প্রবল চাপের মধ্যে ছিলেন ট্রাস।