কক্সবাজারে ১৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তিন মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। মামলায় বয়স ও মেধা বিবেচনায় আসামী শেখ আবদুল্লাহকে খালাস দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোঃ ইসমাইল এ রায় দেন।
এ সময় আসামিরা কাটগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক (৩৭)। তিনি ইয়াবা বহনকারী ট্রলার মালিক। তার শশুর আবুল কালাম (৫৫) এবং মোজাফফরের ছেলে মোহাম্মদ বাবু (৫৫)।
খালাস পেয়েছেন আসামী শেখ আবদুল্লাহ (১৯)। তিনি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আবুল কালামের ছেলে।
জেলা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট দীলিপ কুমার ধর এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের আদেশে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। পিপি আসলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরও গাফলতিও লক্ষ্য করা গেছে।
এপিপি বলেন, তদন্তে হেরফের না থাকলে এবং সাক্ষীদের যথাযথ সাক্ষ্য হলে কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তির রায় হতো।
আসামী পক্ষের আইনজীবি নুরুল মোস্তফা মানিক বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। মামলায় তদন্তে তথ্যের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। ইয়াবার মূল মালিক রোহিঙ্গা শফিকে বাদ দিয়ে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।
তিনি বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে এবং বয়স বিবেচনায় আসামী শেখ আব্দুল্লাহকে খালাস দেয়া হয়েছে।
মামলার বাদী কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)র তৎকালীন ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। সে মতে আমরা কাজ করছি। মামলা তদন্তে গাফলতি হয়নি। তবে রোহিঙ্গা শফি উল্লাহর নাম ঠিকানা পাওয়া না যাওয়ায় তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি দুই দফা অভিযানে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট ও মাদক বিক্রির নগদ এক কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকাসহ চার জনকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় সিজার লিস্ট করে শেখ মোহাম্মদ আলী বাদি হয়ে ১৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ১০ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন যার নং ২৯/২১। (যার জিআর মামলা ৯০/২১। বর্তমানে এসটি ৩৩২/২৩)। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রথম ১৪ লাখ ইয়াবা ও পৌনে দুই কোটি টাকা উদ্ধার মামলায় চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় তদন্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম। চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। মোট ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। ১ মার্চ যুক্তিতর্ক শেষে ১৬ মার্চ রায় দেন বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ।
মামলার বাদী ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী ব্রীজের পাশে ভারুয়াখালী খালে অভিযান চালিয়ে সাত বস্তায় ১৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ইয়াবা চালানের সাথে ট্রলার মালিক কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছরা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম ফারুক (৩৭), তার শশুর আবুল কালাম (৫৫), শ্যালক শেখ আবদুল্লাহ (১৯) ও মোজাফফরের ছেলে মোহাম্মদ বাবু (৫৫) আটক করা হয়। আটককৃত জহিরুল ইসলাম ফারুকের স্বীকারোক্তি মতে ওইদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নুনিয়ারছড়ায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় ফারুকের বাসার লাগোয়া তার (ফারুকের) মামা নয়নের খালি ভিটার টিনের ঘরের মাটির নিচ থেকে বিশেষ কায়দায় বস্তা ভরে লুকিয়ে রাখা দু'বস্তা টাকা জব্দ করা হয়। বস্তায় এক কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং ফারুক ও তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, কয়েকটি দলিলও পাওয়া যায়। বাংলাদেশ পুলিশ কিংবা র্যাব ইতিপূর্বে এতোবৃহৎ চালান উদ্ধার করতে পারেনি। তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের সচেতনমহল।
মোবাইল : ০১৮১৯-০৩৬৪৬০, ০১৭১২-২১৫৫৪৭. ই-মেইল : coxsbazaralo@gmail.com