ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে নির্বাসিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালিন সরকার, যে নামেই হোক না কেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্টু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বে এখন দু’টি ধারা চলমান রয়েছে। একটি হলো গণতান্ত্রিক বিশ্ব, অন্যটি কতৃত্ববাদী বিশ্ব। আমরা গণতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার পক্ষে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। দেশ এখন এক ব্যক্তির সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসন, আইন বিভাগসহ সব বিভাগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
তিনি রোববার (১৬ এপ্রিল) বিকালে কক্সবাজারে আয়োজিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগীয় দোয়া ও ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষক ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরি তারেক রহমানের হাত ধরেই দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে। তিনিই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পূণনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
কক্সবাজার শহরের অভিজাত জারা কনভেনশন হলে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনায় আয়োজিত এই দোয়া ও ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি ভার্চুয়ালি বক্তব্যও রাখেন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজারের সন্তান সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকার উত্তরার একটি ঘর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন সেই ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে। দুই মাস দুইদিন ‘গুম’ থাকার পর ১২ এপ্রিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে সন্ধান মিলে তাঁর। সেই থেকে তিনি সবধরণের রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৭ সালের ১৩ মে কক্সবাজার শহরে আয়োজিত বিএনপির তৃণমূল কর্মী সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। তারপর দীর্ঘকাল কোন রাজনৈতিক মঞ্চে তাঁকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। দিনে দিনে অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ ৫ বছর ১১ মাস ৪ দিন পর কক্সবাজারের রাজনৈতিক মঞ্চে তিনি ফিরে এসেছেন। তবে তিনি এবারও আসলেন সেই শিলং থেকে ভার্চুয়ালি।
পুরো অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে ভাগ করা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এই পর্বেই তারেক রহমান প্রধান অতিথি ও সালাহউদ্দিন আহমদ প্রধান বক্তা ছিলেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন-বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মীর হেলাল।
প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাদত হোসেন রিপন। অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান ফাহিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ২০২২ সালের শেষের মাসগুলোতে দেশের অবস্থা কেমন ছিল একবার ভেবে দেখুন। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ গণসমাবেশে যোগ দিয়েছেন। ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশে হাসিনা ভয় পেয়েছে বলেই আমাদের গ্রেফতার করেছিল। সেদিন হাসিনা ভীত ছিল তাতে কোন সন্দেহ নাই। তাই বাধার সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বেই হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে চাই। তাই ছাত্রদের গণঅভ্যূত্থানে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।
বিভাগীয় এই দোয়া ও ইফতার মাহফিলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়াও চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এই আয়োজনে আড়াই হাজার নেতা-কর্মীর জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল।