নব্বইয়ের দশকের অন্যতম হিট গায়ক মনির খান। অসংখ্য গানের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছিলেন ‘অঞ্জনা’কে নিয়ে গান গেয়ে। মনির খানের ৪৩টি অ্যালবাম। প্রতিটা অ্যালবামেই অঞ্জনাকে নিয়ে একটি করে গান রয়েছে এবং সেগুলোর প্রতিটিই বেশ বেদনার।
কিন্তু কে এই রহস্যময়ী অঞ্জনা? মনির খানের কোনো প্রাক্তন প্রেমিকা, যাকে তিনি হারিয়ে ফেলেছেন? নাকি কাল্পনিক কোনো চরিত্র? কখনোই এই প্রশ্নের পরিস্কার কোনো জবাব দেননি মনির খান। ফলে আজও অঞ্জনা লাখো গানপ্রেমীর কাছে এক কৌতুহলের নাম।
এবার সেই গানের নায়িকা অঞ্জনাকে নিয়েই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে খোলাচিঠি লিখলেন মনির খান। গায়ক কী লিখেছেন সেই চিঠিতে?
মনির খান লিখেছেন, ‘অঞ্জনা, পাশার দান ঘুরে যায় একদিন, অন্যের প্রতি যে অন্যায় আচরণকে কখনো অন্যায় মনে হয় নাই, সেই একই আচরণ যখন নিজের সাথে হলো, আত্ম-উপলব্ধিটা চলেই এলো তোমার ভেতর! এখন অভিযোগও করতে পারছো না।’
‘কারণ যে হাত রক্তমাখা, সেই হাত দিয়ে কি খুনের সাধারণ ডায়েরি লেখা যায়? আবার ক্ষমাও চাইতে পারছো না। কারণ অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে, আফসোস! খুব নীরবে প্রায়শ্চিত্তের রাস্তা খুঁজে নিতে হচ্ছে তোমাকে!!’
‘অনেকে বলে ‘কারমা’ কিংবা প্রকৃতির প্রতিশোধ, আসলে ওসব কিছু না এটা বোধহয় স্বাভাবিক নিয়মে জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া… ইউটার্ন নিলেই যেমন বাম আর ডান উল্টে যায়; অমন করে উল্টে যায় চিন্তা, বোধ, বিচার, বিবেক আর গলার সুর!!’
‘অথচ রাস্তার ওপাশে থেকে এপাশের কথা একটু ভাবলেই হয়তো বহুকাল আগের সেই অন্যায়টা হতো না। হয়তো তোমাকে এক বিন্দু প্রায়শ্চিত্তও করতে হতো না। হয়তো কারো জীবন আরেকটু সুন্দর হতো। হয়তো ভয়াবহ তিক্ত একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে কাউকে বাঁচতে হতো না!!’
‘হয়তো স্রষ্টার দুয়ারে জমা হওয়া কারো করুণ আর্তি মর্ত্যের বুকে তোমার জন্য অভিশাপের বৃষ্টি হয়ে নেমে আসতো না!!’
যদিও মনির খানের এই চিঠির বিষয়বস্তু বেশিরভাগ নেটজনতাই বুঝতে পারেননি। অঞ্জনাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন তো ঠিকই, কিন্তু গায়ক তার লেখায় কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা পরিষ্কার নয় কারও কাছে।
যদিও কারও মন্তব্যের কোনো জবাব দেননি মনির খান। অনেকে আবার লেখাটির প্রশংসা করেছেন। তাদের মন্তব্য, ‘ভাইয়া লেখাটা ভালো লাগল। আপনার সুরের মূর্ছনায় আমাদের শৈশব-কৈশর এমনকি যৌবন আন্দোলিত করে রেখেছেন।’
১৯৯১ সাল থেকে গানের জগতে চলাফেরা মনির খানের। সুদীর্ঘ সংগীত জীবনে তিনি ৪৩টি একক অ্যালবাম এবং ৩০০টির বেশি দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবাম প্ৰকাশ করেছেন। গান গেয়েছেন বহু চলচ্চিত্রেও। শ্রেষ্ঠ গায়ক বিভাগে পেয়েছেন তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
খ্যাতিমান এ শিল্পীর গানের নায়িকা অঞ্জনা হলেও তার বাস্তব জীবনের নায়িকা কিশোরগঞ্জের মেয়ে স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ইতি। ২০০১ সালে তারা বিয়ে করেন। মনির খান-ইতি দম্পতির দুই সন্তান, মেয়ে মুসফিকা আক্তার মৌনতা এবং ছেলে মোসাব্বির খান মুহূর্ত।