সদ্য বদলীর আদেশ হওয়া কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের নারী ডাক্তার, নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও এখন প্রকাশ্যে ফুটে উঠেছে। ইতিমধ্যে তার যৌন হয়রানির জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিনিয়র গাইনী কনসালটেন্ট সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কক্সবাজারের স্থানীয় ব্যক্তিদের ছাটাই করে নোয়াখালী-ফেনী থেকে আত্বীয়-স্বজন এনে এনজিওর মাধ্যমে নিয়োগ করেছে বিভিন্ন পদে। শুধু তাই নয় নতুন নির্মিত আউটডোরে ক্যান্টিনটি কোন টেন্ডারবিহীন পছন্দনীয় আফরিন সুমি নামে এক নারীকে দিয়েছেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। বিদ্যুৎ বিল, তিনটি কক্ষসহ যাবতীয় খরচ হচ্ছে সরকারী। অথচ প্রতি মাসে কোন ধরনের ভাড়ার অর্থ যাচ্ছে না সরকারী কোষাগারে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানের সাবেক কর্মস্থল বরিশাল থেকে বর্না শাহা নামে এক নারীকে এনে নিজের মতো পদ সৃষ্টি করে এনজিও সংস্থা আইওএমকে বাধ্য করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের বেতন দিচ্ছেন। যে পদ সৃষ্টি করেছে সিনিয়র ফার্মাসিষ্ট নামে বাংলাদেশের কোন সরকারী হাসপাতালে এই পদ নেই। অথচ এই নারীকে বেসরকারী পর্যায়ে চাকরি দেয়া হলেও সরকারি প্রশাসনিক ব্লকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের অভিযোগমতে, লাস্যময়ী এই নারী কোন কাজ না করে প্রতি মাসে লাখ টাকার উপরে বেতন নিচ্ছেন। প্রায় সময় হাসপাতাল তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমানের অফিস কক্ষে বসে থাকেন। সন্ধ্যা হলেই স্কুটি চালিয়ে তার পেছনে বসান হাসপাতাল সুপার মোমিনকে। এমন ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্না শাহা নামে এই নারীকে সরকারী ভাবে নিয়োগ পাওয়া তিন ফার্মাসিষ্টকে দেখ-ভালোর জন্যই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নোয়াখালী, ফেনী ও নিজের জেলা লক্ষীপুর থেকে শতাধিক আত্বীয়-স্বজন কক্সবাজারে এনে এনজিও সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন, মোমিনুর রহমানের ভাগিনা টিকেট কাউন্টারের রাসেল, ইলেক্ট্রেশিয়ান রুবেল, মোমিনুর রহমানের বন্ধুর ছেলে ফেনী জেলার অংকন দাশ-তার পদবী আইটি অপারেটর, বরিশাল থেকে আনা রাকিব বর্তমানে সুপারের ড্রাইভার, হাসপাতালের সুপারের বডি গার্ড ফেনী জেলার হৃদয়, হাসপাতাল সুপারের ঘনিষ্ট আত্বীয় ব্লাড ব্যাংকে কর্মরত সাবেক শিক্ষক শাহিন, হাসপাতালের আয়া-শিউলি, তার স্বামী সুপারভাইজার রাজিব চৌধুরী।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, কক্সবাজারে জেলা সরকারী হাসপাতালটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। নিজের ইচ্ছেমতো এনজিওর মাধ্যমে লোকজন নিয়োগ করে আবার নিজের ইচ্ছেমতো ছাটাই করে। তবে সম্প্রতি ২৫ জন চিকিৎসক নিয়োগেও ১৭ লাখ টাকার ঘুষ গ্রহণ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। আগের ৬৭ জনকে চাকরিচূত করে তার পছন্দমতো ২৫ জন মেডিকেল অফিসার নতুনভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এনজিও আইওএম কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করে নামে মাত্র পরীক্ষা দিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ বানিজ্য করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। এসবে জড়িত এনজিও সংস্থার কিছু কর্মকর্তাও।
এসব অভিযোগ ছাড়াও হাতপাতালে ট্রেনিংরত প্রায় নারী ডাক্তারদের সাথে অনৈক কাজের ও খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এনজিও থেকে নিয়োগ পাওয়া ডা. সুলভ আশ্চর্যকে দিয়ে এসব অপকর্ম করেন। তার স্ত্রী ফাহীম তাসনুবার বিরুদ্ধে ৭ নারী স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দিলে কোন ব্যবস্থায় নেননি তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। উল্টো তার যৌনাচারে যারা শরীর ভাসিয়ে দেননি তাদেরকে লেলিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল তিনি।
কিছুদিন আগে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের টেন্ডারবিহীন দুই ট্রাক যন্ত্রাংশ বিক্রি করার সময় ধরা পড়ে আবার ফেরত এনেছেন তত্ত্বাবধায়ক দুর্ণীতিবাজ মোমিন। কক্সবাজার ব্লাড ব্যাংক থেকে আয় হওয়া টাকা থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা ঘুষ নেন। এছাড়াও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়োজিত এনজিও থেকে কয়েক কোটি টাকা কমিশন নিতেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান। সুত্র বলছে, হাসপাতালের সুপার মোমিন নিয়োগ পেয়েই তার পছন্দের ঠিকাদার প্রতিষ্টান জনসেবা এন্টারপ্রাইজকে টেন্ডার কারচুপির করে কোটি টাকার খাবারের কাজ পাইয়ে দেন। ঠিকাদার প্রতিষ্টানের মালিক জহির খান হাসপাতাল সুপার মোমিনের খুব কাছের ব্যক্তি। তাই নয়-ছয় করে রোগীর খাবার থেকে মোটা টাকা কামিয়েছেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক।
এদিকে হাসপাতালের সুপার মোমিনুর রহমানের দূর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে অপারেশনে অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে অবশ করে ফেলেছেন। সাংবাদিক মাহী কিছুটা সুস্থ হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. ইফতেখার আহমদকে সভাপতি ও ডা. বিজন কুমার নাথ, ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাসসহ গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত করার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে এই লম্পট সুপারের বদলীর আদেশে অনেক চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখালেখি করছেন। এমনকি মিষ্টি বিতরণসহ অনেক আয়োজন করেছেন।
হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা বলেছেন, মোমেন একজন আতংক ব্যক্তি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। বললেই চাকরী শেষ করে দিত। তিনি কক্সবাজার ও পার্বত্য এলাকার অনেক সুন্দরী মেয়েদের সাথে ফূর্তি করতেন। এরকম অনেক দৃশ্য এখন ফেসবুকে ভাসছে। মোদ্দাকথা তার বদলী অনেক আগে হওয়া দরকার ছিল। পর্যটন নগরীর সর্বোচ্চ এই আধুনিক হাসপাতালের মান ধরে রাখা এখন সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে।
কক্সবাজারবাসীর দাবী-তার আমলের দুর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া ও তাকে আইনের আওতায় আনা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডা. মোমিনুর রহমানের বক্তব্য নিতে বারবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।