পনেরো বছর অপশাসন চালিয়ে আনন্দের সঙ্গে লুটপাট করে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও চুপচাপ বসে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বলেন, ‘এতদিন তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে ছিলো এবং আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিলো, তাদের স্বপ্ন শিক্ষার্থীরা ভেঙে দিয়েছে। এরা কি এখন চুপচুপ বসে থাকবে। মোটেও না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদেরকে দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার।’
আওয়ামী লীগ এ কাজ করতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবে না মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘কাজেই যে কাজ তোমরা শুরু করেছো, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে রবিবার দুপুরে এ অনুষ্ঠানে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এসময় তিনি হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। শান্তিতে নোবেলবিজয়ী এ অর্থনীতিবিদকে কাঁদতেও দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যেতে হবে।’
বাংলাদেশ যেন পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্রে পরিণত হয় সেই প্রত্যয় রেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম থেকে এই সুযোগ আর আসেনি। শিক্ষার্থীদের দেখছি আর ভাবছি, কী একটা স্বপ্ন আমাদের সামনে, জাতির সামনে তোমরা নিয়ে এসেছ।’
‘যে সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছ, এটা যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না। এটা শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্রে যেন পরিণত হয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘যারা শহীদ হয়েছে আজকে তারা আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। যখন হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়।’
‘আমি সাক্ষাতের সময় যে দৃশ্য দেখছি সেটা তো সবাই দেখছে না। যারা হাসপাতালে আসছেন তারা হয়তো অনুধাবন করতে পারছেন। মানুষকে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে। কী নৃশংসতা ছিল’—বলেন প্রধান উপদেষ্টা।